অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
নিরাপদ সড়কের দাবি, বিমানবন্দর সড়কে জাবালে নুরের বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহতের প্রতিবাদ এবং সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে ৯ দফা দাবিতে দেশব্যাপী শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলছে। প্রথম দিকে আন্দোলনটি রাজধানীতে সীমাবদ্ধ থাকলেও এক পর্যায়ে এটা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। কোমলমতি শিশুদের এই আন্দোলনে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ সতঃস্ফুর্তভাবে সমর্থন দিচ্ছে। এমনকি সরকারের মন্ত্রী-এমপি এবং প্রশাসনের লোকজনও স্কুল শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনকে যৌক্তিক বলে মনে করছেন।
স্কুল শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন কোনো সরকার বিরোধী আন্দোলন নয়। সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরানোর জন্যও স্কুল শিক্ষার্থীরা মাঠে নামেনি। এই আন্দোলনের মূল লক্ষ্য হলো সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। বেপরোয়া চালকদের নিয়ন্ত্রণের জন্য আইনের সংশোধন করা। লাইসেন্স ছাড়া যেন কোনো ব্যক্তি আর গাড়ি চালাতে না পারে সেই ব্যবস্থা করা।
এদিকে সারা দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন করে ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতারা। কোটা সংস্কার আন্দোলনের ৩ দফা এবং নিরাপদ সড়কের জন্য ৯ দফা দাবিতে শনিবার সারা দেশে এই ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে।
আজ শুক্রবার বিকেল পাঁচটার দিকে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির যুগ্ম আহ্বায়ক বিন ইয়ামিন মোল্লা লিখিত বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, আগামীকাল শনিবার সকাল থেকে সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে কোনো ক্লাস-পরীক্ষা হবে না এবং কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গাড়ি চলাচল করবে না। নিরাপদ সড়কের দাবিতে সারা দেশে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনে ঢাকার মিরপুর, দনিয়া, নারায়ণগঞ্জ, নোয়াখালী, চাঁদপুরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ এবং সন্ত্রাসীদের হামলার প্রতিবাদে সব স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে আগামীকাল সারা দেশব্যাপী ছাত্রধর্মঘট ঘোষণা করা হলো। লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে ধর্মঘট কর্মসূচিতে দেশের সব সচেতন শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও নাগরিকদের অংশগ্রহণ করার অনুরোধ করছি।
বিএনপির বক্তব্য নিয়ে সমালোচনা
বৃহস্পতিবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলন করে ছাত্রদের এই আন্দোলনে বিএনপির সমর্থনের কথা জানিয়েছেন। ছাত্রদের সঙ্গে তিনিও নৌমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছেন। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো-ছাত্রদের এই আন্দোলনকে তিনি সরকার পতনের আন্দোলন আখ্যা দিয়ে জনগণকে এই আন্দোলনে যোগদানের আহ্বান জানিয়েছেন।
অপরদিকে, ফখরুলের এই বক্তব্যের পরই সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, এই আন্দোলনে বিএনপি-জামায়াত প্রবেশ করেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ছাত্রদল-ছাত্রশিবির এই আন্দোলনের পেছনে কাজ করছে।
ফখরুলের এই বক্তব্য নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সর্বমহলে চলছে আলোচনা সমালোচনা। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, স্কুল শিক্ষার্থীরাতো তাদের আন্দোলনে বিএনপির সমর্থন চায়নি। তাহলে মির্জা ফখরুল কেন রাজনৈতিক সমর্থন দিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে জনগণকে রাস্তায় নামার আহ্বান জানিয়ে স্কুল শিক্ষার্থীদের এই সতঃস্ফূর্ত আন্দোলনটি বিতর্কিত করলেন? আগেও কোটা সংস্কার আন্দোলনে সমর্থন দিয়েও সেটাকে বিতর্কিত করেছিলেন মির্জা ফখরুল ও রুহুল কবির রিজভী।
রাজনীতিক বিশ্লেষকসহ সচেতন মানুষ মনে করছেন, শিক্ষার্থীদের অধিকার আন্দোলন নিয়ে বিএনপির কোনো কথা বলা উচিত নয়। ফখরুলরা নিজেরা কিছু করতে না পারে বার বার ছাত্রদের সতঃস্ফূর্ত আন্দোলনে রাজনৈতিক রং লাগিয়ে বিতর্কিত করছে। এটা ঠিক নয়।