অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
সড়কপথে শোচনীয় মৃত্যু এবং ভয়াবহ দুর্নীতি আর অরাজকতায় অতিষ্ঠ এ দেশের মানুষ। এই নৈরাজ্যের প্রতিবাদে সড়কে নেমে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালন করছে আমাদের স্কুল শিশু-কিশোররা। তারা চোখে আঙুল দিয়ে দেখাল, চাইলেই কেমন করে সড়কে শৃঙ্খলা আনা যায়। দেখাল মন্ত্রী, আমলা, পুলিশ—এদের মতো মানুষেরা প্রতিনিয়ত কেমন করে আইন অমান্য করছেন দেশে। বাধ্য হয়ে এই নিয়ম ভাঙা ও বেআইনি কার্যকলাপ আমরা মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু সবারই মনে ছিল কিছু প্রশ্ন: আইন কি শুধু সাধারণ মানুষের জন্য? কেন যা ইচ্ছা তা করে পার পেয়ে যান এ দেশের ক্ষমতাধর মানুষেরা?
সড়কে রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে সেই সাধারণ মানুষের সন্তানেরা আইনটা প্রয়োগ করেছে সবার জন্য। সাধারণ মানুষ ও শক্তিমান মানুষ—সবার জন্য। এরা তাই মন জয় করে নিয়েছে এ দেশের ক্ষমতাহীন, ভাষাহীন, সুবিধাবঞ্চিত বিপুলসংখ্যক মানুষের।
কিন্তু ছাত্রদের কাজ দেখিয়ে দেয়া, তারা দেখিয়ে দিয়েছে। তারা তো রাজপথে থাকবে না, তাদেরকে ক্লাসে ফিরে যেতে হবে। কিন্তু তারা যেসব দাবি তুলেছে সেসবের সমাধান না হলে কি তাদেরকে ক্লাসে ফেরানো যাবে? শাজাহান খানের দুর্গন্ধযুক্ত যেই হাসি বাচ্চা কাচ্চাদের হৃদয়ে ঝড় তুলে দিয়েছে, সেই হাসির তো সমাধান করতে হবে। লাইসেন্স বাণিজ্যের মূল হোতা ও পরিবহন খাতের মাফিয়া এই শাজাহান খানকে মন্ত্রীত্ব থেকে না সরালে তো এই সমস্যার সমাধান আসবে না।
স্কুল কলেজে দু চারটি করে বাস বরাদ্ধ দিয়ে, নিহতদের পরিবারকে কিছু টাকা ধরিয়ে দেয়ার জন্য তো ছাত্ররা রাস্তায় নামেনি। তারা নেমেছে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য। তারা নেমেছে পরিবহনে মফিয়াকে খতম করার জন্য। সরকার কেনো এই ব্যাপরটি বুঝতেছে না? সরকার কেনো এই মাফিয়াকে মন্ত্রীসভা থেকে বহিষ্কার করছে না?
বাংলাদেশে কোনো মন্ত্রী এমপির নিজ থেকে সহজে পদত্যাগের দৃষ্টান্ত নেই বললেই চলে। এই সমাধানের দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে। শাজাহান খানও বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী চাইলে তিনি পদত্যাগ করবেন। মানে ছাত্র আন্দোলন সমাধানের বল এখন শেখ হাসিনার কোর্টে। শেখ হাসিনা চাইলেই যেকোনো মূহুর্তে শাজাহান খানকে মন্ত্রীসভা থেকে বহিষ্কার করে সমস্যার সমাধান করতে পারেন।
দেখার বিষয় হলো, প্রধানমন্ত্রী কি আসলেই দেশের নৈরাজ্যকর পরিবহন ব্যবস্থার সমাধান চান? তিনি কি কোমলমতি শিশুদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়া ব্যাপারগুলো অনুধাবন করতে পেরেছেন? তিনি কি চান ছাত্ররা স্কুলে ফিরে যাক? তিনি কি চান পরিবহন খাত থেকে মাফিয়ার দৌরাত্ম আর দুর্নীতি নির্বাসনে যাক? শেখ হাসিনা যদি এমনটা চান তাহলে দেশবাসী আশা করছে তিনি খুব দ্রুত মাফিয়া শাজাহান খানকে মন্ত্রীসভা থেকে বহিষ্কার করবেন।
শেখ হাসিনার প্রশ্রয়েই মূলত শাজাহান খানরা তাদের দৌরাত্মের সীমা ছাড়িয়েছেন। পদত্যাগের দাবির বিরুদ্ধে গিয়ে তিনি তার পরিবহন সেক্টরের পালিত গুন্ডাদের ব্যবহার করে পাল্টা ছাত্র আর দেশবাসীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। তার ইন্ধনেই শুক্রবার বাস শ্রমিকরা রাস্তায় বাস বন্ধ রেখেছেন। এটা ছাত্র তথা দেশবাসীর একটি যৌক্তিক দাবির বিরুদ্ধে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর মত ধৃষ্টতা। প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্রয় ছাড়া এই সাহস কখনোই পেতো না শাজাহান খান।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, শাজাহান খান পদত্যাগ করুক এটা প্রধানমন্ত্রীও চান না। পরিবহনের মাফিয়াকে দিয়ে তিনি রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চান। পরিবহনের দুর্নীতি আর নৈরাজ্য বন্ধ হোক এটা তিনি চান না। নইলে পুলিশ আর ছাত্রলীগ দিয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালাতেন না। প্রধানমন্ত্রী কোটা আন্দোলনের মতই নিরাপদ সড়কের এই আন্দোলনকেও জোরপ্রয়োগ করে দমন করতে চায়।
বিশ্লেষকরা আশা করছেন, পরিবহনে তথা রাজপথে চলমান নৈরাজ্য বন্ধ করতে এবং রাজপথে প্রাণহানির মিছিল থামাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অতি শীগ্রই ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। শিক্ষার্থীদেরকে ক্লাসে ফেরাতে প্রধানমন্ত্রীই পারেন দ্রুত ব্যবস্থা নিতে। আপাদত শিক্ষার্থীদেরকে রাজপথ থেকে ফেরানোর একমাত্র উপায় হচ্ছে শাজাহান খানের পদত্যাগ। প্রধানমন্ত্রী শীগ্রই সেই ব্যবস্থা নিবেন। নয়তো শাজাহান খানের পদত্যাগ না করার জন্য প্রধানমন্ত্রীকেই দায়ী করবে ছাত্র এবং দেশবাসী।