অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বিগত ১০ বছরের শাসনামলে চুরি-ডাকাতি, লুটপাট-দুর্নীতি, গুম, খুন, অপহরণ, ধর্ষণ, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি, বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের ওপর নির্মম নির্যাতনের পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের জনপ্রিয়তা এখন শূন্যের কোটায়। যার কারণে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচনের আয়োজন করতে ভয় পাচ্ছে সরকার। আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা বুঝতে পেরেছে আগামীতে ক্ষমতায় আসাটা তাদের জন্য অনেক কঠিন হবে। তাই অনেকেই এখন ভয়-আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।
হতাশ নেতাকর্মীদেরকে চাঙ্গা রাখতে মাঝে মধ্যেই সরকারের জনপ্রিয়তা নিয়ে নিজেদের লোক দ্বারা গঠিত সংস্থা দিয়ে জরিপ করিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ছেলে ও তার তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয় মানুষের কাছে তুলে ধরছেন যে বর্তমান সরকারের জনপ্রিয়তা বিএনপির চেয়ে বেশি। অবশ্য ইতোমধ্যে কয়েকটি জরিপের ফলাফল নিয়ে মানুষের মনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অনেকেই বলছেন টেবিলে বসে জরিপ করে বিভিন্ন পকেট সংগঠনের নামে জয় এসব প্রকাশ করছে। এনিয়ে সারাদেশে হাস্যরসেরও সৃষ্টি হয়েছে।
সোমবার বরিশাল, রাজশাহী ও সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এরমধ্যে জয় হঠাৎ করেই রোববার রিসার্চ ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (আরডিসি) নামে একটি ভুয়া সংগঠনের বরাত দিয়ে বলছেন যে, তাদের করা জরিপে ৩ সিটিতেই আওয়ামী লীগ প্রার্থী এগিয়ে আছে। জয়ের পকেট সংগঠনের জরিপ অনুযায়ী- বরিশালে সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ (আওয়ামী লীগ) : ৪৪.০%। মজিবর রহমান সরোয়ার (বিএনপি) : ১৩.১%। অন্যান্য প্রার্থীরা : ০.৮%। সিদ্ধান্তহীন : ২৩.৫%। উত্তর দেননি : ১৫.৯%। রাজশাহীতে খায়রুজ্জামান লিটন (আওয়ামী লীগ): ৫৮.০%। মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল (বিএনপি): ১৬.৪%। অন্যান্য প্রার্থীরা : ০.৯%। সিদ্ধান্তহীন : ১২.৩%। উত্তর দেননি : ৯.৬%। সিলেটে বদরউদ্দিন আহমদ কামরান (আওয়ামী লীগ) : ৩৩.০%। আরিফুল হোক চৌধুরী (বিএনপি) : ২৮.১%। অন্যান্য প্রার্থীরা : ১.৩%। সিদ্ধান্তহীন : ২৩.০%। উত্তর দেননি : ১২.৬%।
এত লুটপাট-দুর্নীতি, খুন-হত্যা, গুম অপহরণ, বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের নিষ্ঠুর আচরণের আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তার এ দাবিকে ভিত্তিহীন ও ভুয়া বলেই মনে করছেন সচেতন মানুষ।
সচেতন মানুষ বলছেন, জয়ের এই ভুুয়া জরিপ ৩ সিটি নির্বাচনে ভোট ডাকাতির আগাম বার্তা। আসল জরিপ হলো-৩ সিটিতে আওয়ামীগ প্রার্থীকে জিততে হলে বরিশালে ৪৪ শতাংশ, রাজশাহীতে ৫৮ শতাংশ ও সিলেটে ৩৩ শতাংশ ভোট তাদের ডাকাতি করতে হবে। এছাড়া ৩সিটিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের জয়ের কোনো সুযোগ নেই। এজন্য আগেই একটি সংকেত দিয়ে রাখছেন, ভোট ডাকাতির পর যাতে বলতে পারে যে জরিপেই তারা এগিয়ে ছিল।
এরপর জয় বলেছেন, আমি আমাদের দলীয় নেতাকর্মী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানাব, তারা যেন সজাগ থাকেন। কারণ আমাদের আশঙ্কা বিএনপি ভোটকেন্দ্র দখল করে জালভোট দিয়ে সেই দায় আমাদের ওপর চাপানোর চেষ্টা চালাবেন।
জয়ের এ কথাতো কোনো পাগলেও বিশ্বাস করবে না। কারণ, বিগত নির্বাচনগুলোতে দেশবাসীসহ আন্তর্জাতিক মহল দেখেছে কারা ভোটকেন্দ্র দখল করে জাল ভোট দিয়েছে। আর ৩সিটিতে যেখানে প্রশাসনের বাধা ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের হামলার কারণে বিএনপির লোকজন নির্বাচনের প্রচারণা ঠিকভাবে চালাতে পারেনি, সেখানে ভোটকেন্দ্র দখলেরতো প্রশ্নই আসে না।
রাজনীতিক বিশ্লেষকসহ সচেতন মানুষ মনে করছেন, আওয়ামী লীগ ভোট ডাকাতির সব আয়োজনই শেষ করেছে। যার বাস্তবায়ন হবে সোমবার ভোটের দিন। ভোট শেষে যার দায়ভার চাপাবে বিএনপির ওপর।