অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন (এএইচআরসি) বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে মানবাধিকার লংঘন এবং মৌলিক স্বাধীনতা হরনের দায়ে অভিযুক্ত করেছে।
হংকং ভিত্তিক এই মানবাধিকার সংস্থাটি সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যাতে তারা বলেছে বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির আশংকাজনক অবনতি ঘটেছে এবং পরিস্থিতি আরো খারাপ হওয়ারই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। ইউনিয়ন অব ক্যাথোলিক এশিয়ান নিউজ (ইউকান) এএইচআরসির প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে এই তথ্য প্রকাশ করেছে।
অন্যদিকে জার্মান মিডিয়া ডয়চে ভ্যালে “Is Bangladesh’s media freedom deteriorating?” এই শিরোনামের একটি প্রতিবেদনে সম্প্রতি জানিয়েছে যে এ বছরের শেষ দিকে জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের টালমাটাল রাজনৈতিক অবস্থা আরো শোচনীয় জায়গায় পৌঁছে যেতে পারে।
গনমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করে এমন একটি সংস্থা হলো রিপোর্টাস উইদাউট বর্ডাস। এ সংস্থার এশিয়া প্রশান্ত অঞ্চলের প্রধান ডানিয়েল বাস্টার্ড সম্প্রতি ডয়চে ভেলেকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, সম্প্রতি মাহমুদুর রহমানের উপর যেভাবে গন হামলা হয়েছে তাতে বোঝা গেছে যে বাংলাদেশে সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের সমালোচনা করলে তার কি পরিনতি হতে পারে।”
এএইচআরসি আরো জানিয়েছে, বর্তমান ক্ষমতাসীনদের আমলে বাংলাদেশের সাধারন মানুষের নুন্যতম স্বাধীনতাও নেই। সভা সমাবেশ করার অধিকারও একেবারেই ভুলুন্ঠিত। কেউ সরকারের কোন কাজের সমালোচনা করলেই তাকে আইন শৃংখলা বাহিনী ও সরকারী দলের ক্যাডাররা একইসাথে মিলে হামলা করে ও দমন করার চেষ্টা করে।
এএইচআরসি এই প্রসংগে কোটা আন্দোলরত ছাত্রছাত্রী এবং মাহমুদুর রহমানের উপর হামলার প্রসংগ টেনে আনে এবং এইসব ঘটনায় সম্পৃক্ত থাকার দায়ে দেশের আইন শৃংখলা বাহিনীগুলোর তীব্র সমালোচনা করে।
বার্তা সংস্থা ইউকানকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে ক্যাথোলিক বিশপ, জাস্টিস এন্ড পিস কমিশনের সেক্রেটারী থিওপিল নোরেক বলেন, “এ কথা অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই যে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি ঘটেছে। বিচার বহির্ভুত হত্যা হয়েই চলছে, আর বিরোধী দলের কোন সভা-সমাবেশ হলে পুলিশ নির্মমভাবে তা ভন্ডুল করে দিচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যেই সংবিধান থেকে তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বাতিল করে দিয়ে নিজেদের অধীনে নির্বাচন করার বিধান চালু করেছে যা দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকেও সংকটের মুখে ফেলে দিয়েছে।”
অন্যদিকে ওয়াশিংটন ভিত্তিক থিংক ট্যাংক উড্রো উইলসন সেন্টার ফর স্কলারের দক্ষিন এশিয়া বিষয়ক বিশেষজ্ঞ মাইকেল কুগেলম্যান বার্তা সংস্থা ডয়চে ভেলেকে জানান, মাহমুদুর রহমানের উপর হামলা ইংগিত করে যে বাংলাদেশে সহনশীলতা কমছে এবং গনতন্ত্র হুমকির মুখে পড়েছে।
রিপোর্টাস উইদাউট বর্ডাস জানায়, বাংলাদেশের মিডিয়ার উপর সেন্সরশীপের প্রয়োগ বাড়ছে। সাংবাদিক ও গনমাধ্যমগুলো প্রায়শই আক্রমনের শিকার হচ্ছে। আর যারা এসব আক্রমনের সাথে জড়িত তাদেরকেও বিচারের আওতায় আনা হচ্ছেনা, ফলে এক ধরনের বিচারহীনতার সংস্কৃতি দেশে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধারনা করা হচ্ছে চলতি বছরের শেষ দিকে নির্ধারিত জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের এসব পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যেতে পারে। এমনও হতে পারে সে ধরনের পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রন করার জন্য এবং নির্বাচনের ফলাফলকে নিজেদের হাতে রাখার জন্য সরকার পাকিস্তানের মত কৌশল নিতে পারে এবং গনমাধ্যমগুলোকে আরো বেশী নিয়ন্ত্রন করার চেষ্টা চালাতে পারে।