অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে সরকারের মন্ত্রী-এমপি ও আওয়ামী লীগ নেতারা দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছেন-আগামী নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী। এনিয়ে বিএনপির সঙ্গে কোনো প্রকার আলাপ-আলোচনা করার দরকার নেই। কিন্তু হঠাৎ করেই শুক্রবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন বিএনপির সঙ্গে ফোনে কথা বলা যেতে পারে। কাদেরের এই প্রস্তাবকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তাকে আজ অনেকটা খুশী খুশীও দেখা গেছে।
মির্জা ফখরুল এটাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখলেও রাজনীতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন এর পেছনে সরকারের ভিন্ন উদ্দেশ্য থাকতে পারে। সরকার আসলে সংকটের সমাধান চায় না। একটা কৌশলে তারা বিএনপিকে ফাঁদে ফেলতে চাচ্ছে। কারণ, ফোনে কথা বলে কোনো রাজনৈতিক সংকটের সমাধান হয় না।
আর রাজনীতিক বিশ্লেষকরা যেটা বলছেন অতীতে এরকম ঘটনা দেখাও গেছে। ২০১৩ সালের সেই সংলাপ নাটকের কাহিনী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখনো বলে বেড়ান। তিনি খালেদা জিয়াকে খোঁচা দিয়ে বলেন- ‘আমি তাকে সংলাপের দাওয়াত দিলাম, আর তিনি জবাবে দিলেন হরতাল।’
জানা যায়, ২০১৩ সালের ২৫ অক্টোবরে তথ্যমন্ত্রী ইনু ঘোষণা দিলেন যে প্রধানন্ত্রী শেখ হাসিনা যেকোন সময় খালেদা জিয়াকে ফোন করবেন। তার এ ঘোষণার পরই সারাদেশে মানুষের মধ্যে কৌতুহল সৃষ্টি হয়। কখন ফোন করবেন? আর ফোন করলেও তিনি বিরোধদলীয় নেত্রীকে কি বলবেন? তা শোনার জন্য যেন মানুষেন মধ্যে আগ্রহের কোন শেষ নেই। প্রধানমন্ত্রী তার কাঙ্খিত ফোনটি করলেন ২৭ অক্টোবর সন্ধা ৬.২৫ মিনিটে। কথা বললেন একটানা ৩৭ মিনিট।
২৮ অক্টোবর তথ্যমন্ত্রী ইনু আবার ঘোষণা দিলেন দুই নেত্রীর ফোনালাপ জাতির সামনে প্রকাশ করা হবে। যেই কথা সেই কাজ। রাতেই সরকারের মুখপাত্র হিসাবে খ্যাত একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেল তা প্রকাশ করে। এর পরই দেশের সকল গণমাধ্যম তা প্রকাশ করে। ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যগুলোতেও। বেরিয়ে আসে পর্দার অন্তরালে লোকিয়ে থাকা প্রধানমন্ত্রীর টেলিফোনের আসল উদ্দেশ্য ও কুটচাল। সারাদেশে তখন এ নিয়ে চলে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা।
খালেদা জিয়াকে নীচু করার জন্যই যে প্রধানমন্ত্রী ফোনালাপ রেকর্ড করে আবার জাতির সামনে প্রকাশ করেছিলেন তা পরে পরিস্কার হয়ে যায়। খালেদা জিয়ার বক্তব্যকে বিকৃতি করে প্রচার করতে গিয়ে চরমভাবে ধরা খেয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ঈমাম। দুই নেত্রীর ফোনালাপের পরই এটিএন বাংলার এক সাক্ষাৎকারে চ্যানেলটির বার্তাপ্রধান জ ই মামুনের কাছে এইচ টি ঈমাম দাবি করেন যে খালেদা জিয়া বলেছেন ৭১ এ মুক্তিযোদ্ধারাই গণহত্যা করেছে। অথচ সেদিন খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ৭১ সরকার গঠনের পর আপনাদের লোকেরাই গণহত্যা করেছে। এখানেই সরকার তার বিকৃত মানসিকতার পরিচয় দিয়েছিলো।
এরপর, প্রধানমন্ত্রী তার ফোনালাপে দেশ ও জাতির সংকট নিয়ে কোন কথা বলেননি। জনসভার মত ফোনেও তিনি খালেদা জিয়াকে খোঁচা মেরে কথা বলে আক্রমণ করার চেষ্টা করেছেন। সংকট নিরসনই যদি তার উদ্দেশ্য হয়ে থাকে তাহলে তিনি আগে ছিলেন কোথায়? ১৮ দলীয় জোটের হরতাল আহবানের পর তা প্রত্যাহারের জন্য ফোন করলেন কেন? এটা প্রধানমন্ত্রীর পুরনো অভ্যাস।
এরআগে একই বছরের ৪ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে ১৮ দলীয় জোটের উদ্যোগে মহাসমাবেশ ডাকার পর সরকার সংলাপ নাটকের অভিনয় করেছিলেন। তখনো প্রধানমন্ত্রী বলে বেড়াতেন যে আমি বললাম সংলাপের কথা আর বিরোধীদলীয় নেত্রী জবাবে দিলেন আমাকে আল্টিমেটাম।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকসহ সচেতন মানুষ মনে করছেন, সরকার আসলে সংকট নিরসন চায় না। কারণ, বিএনপি দীর্ঘদিন ধরেই নির্বাচন নিয়ে সংলাপের দাবি জানিয়ে আসছে। সুশীল সমাজের লোকজনও আলোচনায় বসতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। সরকার হয়তো দোষ এড়ানোর জন্য এখন একটা কৌশল নিতে চাচ্ছে।
তাদের মতে, সরকারের এই প্রস্তাবে বিএনপির সাড়া দেয়া কোনো ভাবেই ঠিক হবে না। আর মির্জা ফখরুলেরও কাদেরের এ প্রস্তাবে এত খুশী হওয়ার কিছু নেই।