অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
কয়েক মাস আগেই সোহাগ-জাকিরের নেতৃত্বের সমাপ্তি ঘটলেও এখন পর্যন্ত ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়নি। নেতৃত্ব নির্বাচনের দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের কাঁধে নিলেও দীর্ঘদিন পার হয়েছে এখনো নেতা নির্বাচন করা হয়নি। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ববিহীন বর্তমান ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণ তাহলে কার হাতে এমন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
ছাত্রলীগের সবচেয়ে বড় অভিভাবক হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলা হলেও বর্তমান ছাত্রলীগ তাঁর কথাও শুনছে না। অভিভাবক ও নেতৃত্ববিহীন বেওয়ারিশ সংগঠনের মতেই নির্দ্বিধায় তারা শত অপকর্ম করে যাচ্ছে।
জানা গেছে, ২১ জুলাই শনিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সভাশেষে শেখ হাসিনা ছাত্রলীগ নেতাদেরকে বলেছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনসহ কোথাও যাতে ছাত্রলীগের কোনো বাড়াবাড়ির খবর তিনি না পান। গণমাধ্যমকে এমন তথ্য দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্রলীগের বাড়াবাড়ির অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রধানমন্ত্রী তাদেরকে সাবধান করে দিয়ে বলেছেন এমন খবর যাতে আর না আসে।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সাবধানবাণীর পরের দিন রোববারই নির্দেশ অমান্য করে টিএসসিতে কোটা আন্দোলনকারীদের উপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ। রোববার গ্রেফতার সহকর্মীদের মুক্তিসহ নানা দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন ও সমাবেশ শেষে যাওয়ার পথে কোটা আন্দোলনকারীদের উপর হামলা করে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। পরে এফিল্যান্ট রোডে আন্দোলনের কয়েকজন নেতার ওপর আবার হামলা চালায়। এ সময় আন্দোলনের দু’জন নেতাকে তুলে নিয়ে যায় ছাত্রলীগ।
২০১৫ সালের ২৬ ও ২৭ জুলাই সাইফুর রহমান সোহাগকে সভাপতি এবং এস এম জাকির হোসাইনকে সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করে ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটি গঠিত হয়েছিল। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ছাত্রলীগের কমিটির মেয়াদ দুই বছর। মেয়াদপূর্তির ছয় মাসেও সম্মেলন না করায় গত ৬ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ছাত্রলীগকে সম্মেলন করে নতুন নেতৃত্ব আনতে বলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
এরপর গত মে মাসের ১১ ও ১২ তারিখে ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় অধিবেশনের পর কমিটি ঘোষণার নিয়ম থাকলেও শীর্ষ পদের নেতৃত্ব বাছাইয়ে সময় নেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গত ৪ জুলাই ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী ৩২৩ জন নেতার সঙ্গে গণভবনে কথা বলেন শেখ হাসিনা। সেদিন শেখ হাসিনার সামনেই উশৃঙ্খল আচরণ করেণ ছাত্রলীগ নেতারা।
জানা যায়, গণভবনে সদ্য বিদায়ী ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার কাছে অভিযোগ উত্থাপন করেন পদপ্রত্যাশী নেতা সোহান। এসময় শেখ হাসিনার সামনেই সোহানের ওপর আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সদ্য বিদায়ী সভাপতি মিজান। এরপর এসএসএফ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এসময় ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্যে মাইক নিয়ে টানাটানি ও হট্টগোল সৃষ্টি হয়। এছাড়াও এক পক্ষের বক্তৃতা দেওয়ার সময় আরেক পক্ষ চিৎকার চেঁচামেচি করে।
বেওয়ারিশ ছাত্রলীগের আরেক অপকর্মের দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে গতকাল রোববার। এদিন কুষ্টিয়ায় একটি মানহানি মামলায় জামিন নিতে গিয়ে ছাত্রলীগ কর্মীদের বর্বর হামলার শিকার হয়েছেন আমারদেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। সেখানে পুলিশের সহায়তায় নৃশংসভাবে হামলা চালিয়ে রক্তাক্ত করা হয় মাহমুদুর রহমানকে। এসময় তার গাড়িও ভাংচুর করে তারা।
মাহমুদুর রহমানের উপর এমন বর্বর হামলায় নিন্দার ঝড় উঠেছে সর্বত্র। দেশের বিশিষ্টজন ও বিএনপির পক্ষ থেকে এই হামলার বিচারবিভাগীয় তদন্ত দাবি করা হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন দমন ও আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে শেখ হাসিনার ইন্ধনেই ছাত্রলীগকে বেওয়ারিশ হিসেবে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এজন্য বেওয়ারিশ কুকুরের মতই ওরা একে ওকে যেখানে যাকে পাচ্ছে তাকেই কামড়াচ্ছে।