অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলেছেন তার কন্যা শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার বিগত ১০ বছরের রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাট, আত্মসাত, দুর্নীতি, গুম, অপহরণ, হত্যা, খুন, ধর্ষণ, মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ ও বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের ওপর সীমাহীন অত্যাচার নির্যাতনের ফলে দেশের সব কিছু এখন খাঁটি সোনায় পরিণত হয়েছে। আর সোনার বাংলার এসব সোনা চুরির জন্য শেখ হাসিনা কিছু লোকও তৈরি করেছেন। যারা নিজেদের খেয়াল খুশী মতো রাষ্ট্রের সব সেক্টর থেকে লুটেপুটে নিচ্ছে।
সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় হলো, এই সোনা চোরেরা এখন রাষ্ট্রের সংরক্ষিত জায়গা ব্যাংকের ভল্ট থেকেও একের পর এক চুরি করে অর্থ ও স্বর্ণ লুটে নিচ্ছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেঁচে থাকলে হয়তো বলতেন, স্বাধীনতার পর যারা কম্বল চুরি করেছিল তারাই আজ এই সোনা চুরি করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনার রেশ এখনো কাটেনি। এরই মধ্যে গত ঈদুল ফিতরের আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্ট থেকে ভ্যানগাড়ি করে ৭ বস্তা নতুন টাকা নিয়ে যাওয়ার সময় নিরাপত্তা কর্মীর হাতে ব্যাংকের ৩ কর্মচারী ধরা পড়ে। এরই মধ্যে ঘটে গেল আরেক ভয়ানক ঘটনা।
এবার আর টাকা নয়, ভল্টে রাখা সংরক্ষিত সোনায় তারা হাত দিয়েছে।
জানা গেছে, এক বছরেরও বেশি সময় ধরে অনুসন্ধান চালিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে স্বর্ণ জালিয়াতির বিষয়ে তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করেছেন শুল্ক গোয়েন্দার ৮ সদস্যের কমিটি। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সহিদুল ইসলাম বলেছেন, এক বছরেরও বেশি সময় ধরে অনুসন্ধান করে আমাদের ৮ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ওই সব অনিয়ম পেয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সহযোগিতা ও উপস্থিতিতে ওই অনুসন্ধান হয়েছে।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালের ২৩ আগস্ট কাস্টম হাউসের গুদাম কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ গোলাকার কালো প্রলেপযুক্ত একটি সোনার চাকতি এবং একটি কালো প্রলেপযুক্ত সোনার রিং বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেন। বাংলাদেশ ব্যাংক ওই চাকতি এবং আংটি যথাযথ ব্যক্তি দিয়ে পরীক্ষা করে ৮০ শতাংশ (১৯ দশমিক ২ ক্যারেট) বিশুদ্ধ সোনা হিসেবে গ্রহণ করে প্রত্যয়নপত্র দেয়। কিন্তু দুই বছর পর পরিদর্শক দল ওই চাকতি ও আংটি পরীক্ষা করে তাতে ৪৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ (১১ দশমিক ২ ক্যারেট) সোনা পায়। আংটিতে পায় ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ সোনা (৩ দশমিক ৬৩ ক্যারেট)। ধারণা করা হচ্ছে ভল্টে রাখার পর এগুলো পাল্টে ফেলা হয়েছে। ভল্টে থাকা সোনার চাকতি এবং আংটি পরীক্ষার পর দেখা গেল এগুলো সোনার নয়, অন্য ধাতুর মিশ্রনে তৈরি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, পরিদর্শক দল প্রতিটি রসিদের অনুকূলে জমা হওয়া সোনা যাচাই করেছে। তাতে দেখা গেছে, সোনার অলংকার এবং সোনার বারে ক্যারেটের তারতম্য করা হয়েছে। ২৪ থেকে ২০ ক্যারেটের ৯৬০ কেজি সোনার বেশির ভাগের ক্ষেত্রে ভল্টে ১৮ ক্যারেট হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছে। কম ক্যারেটে নথিভুক্ত থাকায় নিলাম বা অন্য উপায়ে বিক্রির সময় অতিরিক্ত ক্যারেটের বিপরীতে প্রাপ্য টাকা থেকে সরকার বঞ্চিত হবে। সোনার ক্যারেটের তারতম্য ঘটানোর কারণে সরকারের ১ কোটি ৯০ লাখ ৮৫ হাজার ৩৪৬ টাকা ৬৭ পয়সা ক্ষতির সুযোগ তৈরি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে এই সোনা চুরির ঘটনা প্রকাশিত হওয়ার পর এনিয়ে সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়ে গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
রাজনীতিক বিশ্লেষকসহ সচেতন মানুষ বলছেন, রিজার্ভ চুরির সঙ্গে যারা জড়িত, এই সোনা চুরির সঙ্গেও তারাই জড়িত। এর সাথে সরকারের উচ্চপর্যায়ের লোকজন জড়িত আছে।