অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য রাশিয়া সফরে গিয়ে বাংলাদেশি সাংবাদিক দেখে স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে ও সফরসঙ্গীদের নিয়ে দৌড়ে পালিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব দিলিপ কুমার। সাংবাদিক পরিচয় জানার পরই সচিব তার সঙ্গীদের নিয়ে কেনো পালালেন সেটা এখনো জানা যায়নি।
তবে একটি সূত্রে জানা গেছে, তাদের এই সফরের মূল টার্গেট হলো রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত চলমান বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা দেখা। অভিজ্ঞতা অর্জনের কথা বলে সরকারি সুবিধা নিয়েছেন তারা।
প্রতিনিধি দলের অন্য ৮ জন হলেন- প্লানিং কমিশনের সদস্য জুয়েনা আজিজ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের স্বাধীনতা স্তম্ভ তৃতীয় ফেসের প্রজেক্ট ডাইরেক্টর মো. মাইনুল হক আনসারী, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব জহুরুল হক, মতিয়ার রহমান, উপ-প্রধান ইউনুস মিয়া, পূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রকৌশলী ফিরোজ হাসান, স্থাপত্য বিভাগের উপ-প্রধান স্থপতি মোহাম্মদ আসিফুর রহমান ভূঁইয়া, বাস্তবায়ন, পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের উপ-পরিচালক ফাতিমা-তুজ-জোহরা ঠাকুর।
রাশিয়ায় চলমান বিশ্বকাপ ফুটবল খেলার নিউজ কাভারেজ দিতে যাওয়া একজন সাংবাদিক লিখেছেন, সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরের প্রতিষ্ঠাতা পিটার দ্য গ্রেটের রাজপ্রাসাদ পেটারহফে হঠাৎই দেখা একদল বাঙালির সঙ্গে। বাংলাদেশের কয়েকজন সাংবাদিককে দেখে তাদেরই একজন জানতে চাইলেন, ‘আমরা সেন্ট পিটার্সবার্গে থাকি কি-না।’ পরিচয় জানলাম, তারা সরকারি সফরে এসেছেন। ৯ সদস্যের প্রতিনিধি দল এসেছেন। এর বাইরে যুগ্ম-সচিবের স্ত্রী এবং ছেলে-মেয়েও রয়েছেন।
শুরুতে যুগ্ম সচিব বললেন, ঢাকার সোহরওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভের তৃতীয় ফেস কীভাবে সুন্দর করা যায় তার কিছু অভিজ্ঞতা অর্জনেই তারা রাশিয়া এসেছেন। সে সফরের অংশ হিসেবেই ঘুরছেন পিটারহফে।
বাংলাদেশের মিডিয়াকর্মীদের আগ্রহ বাড়লো, ‘বিশ্বকাপ কাভার করতে এসে বাড়তি একটা খবরও পাওয়া গেলো।’ এটা ভালো উদ্যোগ। মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি দলটি কোথায় কোথায় ঘুরলেন, কী কী দেখলেন এবং সেগুলোর মধ্যে আমাদের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের স্বাধীনতা স্তম্ভে কী কী উন্নয়ন করা যাবে- এমন একটা প্রতিবেদন তো হতেই পারে!
এ আগ্রহ নিয়েই যখন নিজেদের পরিচয় দিয়ে, তাদের সফর নিয়ে কথা বলতে চাইলাম, তখন তারা কেন যেন মোড়ামুড়ি শুরু করলেন। আমাদের সঙ্গে তাদের কথা বলার অনাগ্রহও তৈরি হয়ে গেলো সঙ্গে সঙ্গে। তাদের সঙ্গে কথা বলার সময় ধীরে ধীরে হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিলেন।
সাংবাদিক জানার আগে অবশ্য স্ত্রী, পুত্র ও কন্যাকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে ছবিতে পোজও দিয়েছিলেন সচিব মহোদয়; কিন্তু সাংবাদিক জানার পর হাঁটার গতি এমন বাড়িয়ে দিলেন, যা এক সময় দৌড়ের পর্যায়ই চলে গেলো। পেছন থেকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেও থামানো গেলো না। একটু সামনেই পার্ক করা ছিল তাদের বহন করা গাড়িটি। সেই গাড়িতে উঠেই চলে গেলেন। সাংবাদিক জানার পর ওভাবে কেটে পড়ার রহস্য বোঝাই গেল না।
বাংলাদেশের একটি গণমাধ্যমে এ সংবাদ প্রকাশের পর এনিয়ে এখন তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে। সাংবাদিক দেখে পালানো নিয়ে বইছে সমালোচনার ঝড়।
রাজনীতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমান সরকারের আমলে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংসদীয় কমিটির লোকজন অভিজ্ঞতা অর্জনের নাম করে রাষ্ট্রের টাকা খরচ করে পরিবার ও দলবল নিয়ে বিদেশ ঘুরছে। অভিজ্ঞতা নয়, তাদের মূল উদ্দেশ্য হলো সরকারি খরচে বিদেশে ঘুরাঘুরি করা।
মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিবও অভিজ্ঞতা অর্জনের নামে স্ত্রী, সন্তান ও আরও ৮ জনকে নিয়ে বিদেশ ভ্রমণে গেছেন। হয়তো সাংবাদিকরা এসব নিয়ে প্রশ্ন করলেও সঠিক জবাব দিতে পারবেন না। এজন্য সাংবাদিকদের পরিচয় জানার পর পালিয়ে গেছেন।