অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
সরকারি চাকুরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালানোর প্রেক্ষিতে গোলমাল দেখা দিয়েছে ছাত্রলীগে। চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়েছে সংগঠনটির। সাধারণ কর্মীরা শুনছেন না কেন্দ্রীয় কিংবা মহানগরী নেতাদের নির্দেশনা।
এদিকে দেশব্যাপী আন্দোলনকারীদের উপর রাতের আঁধারে ছাত্রলীগের নগ্ন হামলা ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে গত রাতে ছাত্রলীগের এক নারী নেত্রী কর্তৃক আন্দোলনকারী এক সাধারণ ছাত্রীর পায়ের রগ কাটার পর সেই সমালোচনার আগুনে যেনো পেট্রল ঢেলে দেয়া হয়েছে। এই ঘটনায় সংগঠনটির কর্মীরাও ক্ষুব্ধ হয়েছেন।
শুরু থেকেই কোটা সংস্কারের আন্দোলনে অংশ নিয়ে আসছে ছাত্রলীগের সাধারণ ও তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তারা এখন পর্যন্ত সক্রিয়ভাবে আন্দোলন করে আসছে। কেউ কেউ পেছন থেকে আন্দোলন সমর্থন করছেন। আন্দোলনকারীদের উপর হামলায় ক্ষুব্ধ হয়ে এবং আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে সংগঠনটির অনেক নেতাকর্মীই ইতোমধ্যে পদত্যাগ করেছেন। অনেকে পদত্যাগের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারা শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন।
চলমান কোটা আন্দোলনের নেতৃত্বে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের পদধারী একাধিক নেতা। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তারা নিয়মিত কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়া কয়েকজনের মধ্যে রয়েছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস অনুষদের ট্যুরিজম বিভাগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল্লাহ সাইফ, শহীদ সার্জেন্ট জহরুল হক শাখা ছাত্রলীগের উপ-অ্যাপায়ন বিষয়ক সম্পাদক অছিবুর রহমান, ফলিত পরিসংখ্যান বিভাগের সাধারণ সম্পাদক শরীফ হাসান সুজন।
পদত্যাগের কথা জানিয়ে সাইফুল্লাহ সাইফ ফেসবুকে লিখেছেন- ‘ছাত্রলীগ জাতির পিতার নিজ হাতে গড়া সংগঠন। ছাত্রলীগ ডাকসুর ভূমিকা পালন করে। ছাত্রলীগ ছাত্রদের অধিকারে কাজ করে। ছাত্রলীগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের বন্ধু। যথেষ্ট। ছাত্রলীগের ভূমিকা কি দেখা গেলো। এই ছাত্রলীগ কোন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ করে জানি না। আমার বঙ্গবন্ধু আলাদা। তাই সজ্ঞ্যানে আমি ট্যুরিজম এন্ড হস্পিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ ছাত্রলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে পদত্যাগ করছি। আর না, অনেক হয়েছে।’
এ ছাড়া শহীদ সার্জেন্ট জহরুল হক শাখা ছাত্রলীগের উপ-আপ্যায়ন বিষয়ক সম্পাদক অছিবুর রহমান ৯ এপ্রিল দেওয়া তার পদত্যাগ পত্রে লেখেন, ‘আমি ব্যক্তিগত কারণে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছি।’ জানতে চাইলে এই নেতা বলেন, ‘আসলে বিষয়টি আপনারাও জানেন। কোটা সংস্কার সময়ের দাবি। যেহেতু ছাত্রলীগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের এই ন্যায্য দাবিতে সমর্থন দেয়নি, যেহেতু আমি কোটা সংস্কারের পক্ষে— তাই পদত্যাগ করেছি।’
এ ছাড়া কোটা সংস্কার চেয়ে আন্দোলন করতে গিয়ে ছাত্রলীগের অনেক নেতাকর্মী তাঁর দলের নেতাকর্মীদের হামলায়ই আহত হয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার উপ-গণযোগাযোগ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখেন, ‘বঙ্গবন্ধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন করতে গিয়ে নিজের ছাত্রত্ব হারিয়েছেন। তবুও অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। আর এখনকার নেতারা পদ হারানোর ভয়ে লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীর পক্ষে কথা বলতে পারেন না। ছি!, আমরা না তাঁরই আদর্শ বুকে ধারণ করি!’ তিনি আরও লেখেন, ‘অহিংস আন্দোলন সহিংস হয়ে উঠেছে। যারা হসপিটালে আছে তারা আমাদেরই ভাই, বন্ধু। ক্ষমতা আজীবন থাকে না। এই আন্দোলন কোনো দলের না, এটা সকল সাধারণ শিক্ষার্থীর আন্দোলন।’
এদিকে গত রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নারীদের হলে ছাত্রলীগের নারী কর্মীদের হামলা ও এক ছাত্রীর রগ কেটে দেয়ার প্রেক্ষিতে সংগঠনটির নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের মাত্রা আরো বেড়েছে। অনেকেই পদত্যাগ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। আর বেশিরভাগ কর্মীই এখন আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত শুনছেন না তারা।
এদিকে অবস্থা সামাল দিতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সেক্রেটারিসহ নেতারা প্রধানমন্ত্রীর বরাত দিয়ে ফেসবুকে জানাচ্ছেন যে সরকারি চাকুরিতে কোনো কোটা থাকবে না। যদিও এই খবরের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। ধারনা করা হচেছ আন্দোলন ও নেতাকর্মীদের সামাল দেয়ার জন্যই এমনটা ছড়াচ্ছেন তারা। তবে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে এমন ঘোষণা না আসা পর্যন্ত আন্দোলনকারীরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।