ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গত সন্ধ্যায় যখন আন্দোলনের নেতাদের কয়েকজন সেখানে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের ঘোষণা করছিলেন যে ওবায়দুল কাদেরের সাথে আলাপের পর তারা মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন তখন সেখানে হাজির শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ না না বলে সমস্বরে চিৎকার করে ওঠেন এবং হাত নাড়তে থাকেন।
তারা বেশ লম্বা সময় ধরে ‘ভুয়া’ শব্দটি স্লোগান দিতে থাকেন। এর কিছুক্ষণ পরই একটি অংশকে ইতস্তত করতে দেখা গেছে। এখন এই আন্দোলনটি স্পষ্টতই বিভক্ত হয়ে পড়েছে। স্থগিত করার বিপক্ষে রয়েছে বেশ বড় অংশ যারা নিজেরা রাতেই একটি কমিটিও গঠন করেছেন।
টেলিভিশন, ফিল্ম ও ফটোগ্রাফি বিভাগের ছাত্র হারুনুর রশিদ এই স্থগিত করার বিপক্ষে। তিনি বলছেন, “একমাস পরে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে এই আন্দোলনটাকে দমিয়ে দেয়া। এটা সরকারের একটা চাল কারণ একমাস পরে রোজা চলে আসবে আর তখন ক্যাম্পাসে কেউ থাকবে না।”
তিনি আরো বলেন, “কোটা নিয়ে গবেষণার কিছু নেই। সবাই জানে জিনিসটা কি। এটা চাইলেই এক রাতের মধ্যে শেষ করা যায়। তাই আমি এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করছি।”
বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র শিক্ষা অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের পক্ষ থেকে ২০ জন গতকাল গিয়েছিলেন সরকারের পক্ষে মধ্যস্থতার দায়িত্ব নেয়া সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সাথে কথা বলতে।
তিনি ঘোষণা দেন যে , ছাত্রদের দাবির যৌক্তিকতা সরকার ইতিবাচক হিসেবে দেখছে। সরকার মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবেন।
আরেক শিক্ষার্থী বলছেন তাদের বিভক্ত করার জন্যেই এমনভাবে আন্দোলন স্থগিত করা হয়েছে। তিনি বলছেন, “ঐ বিশজনতো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। তারা আমাদের প্রতিনিধি হয়ে শুধু কথা বলতে গিয়েছিলো। ওরা এসে আমাদের জানাবে এবং আমরা পরে সিদ্ধান্ত নেবো ব্যাপারটা এরকমই হওয়ার কথা ছিল”
কিন্তু যাদের নেতৃত্বে কয়েক মাস ধরে আন্দোলন চলে আসছিলো সেই বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র শিক্ষা অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ তারা বিভক্ত নতুন কমিটিকে অনুপ্রবেশকারী হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।
পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক মোহাম্মদ সুমন কবির বলছেন, “৪৭ বছর ধরে কোটার বেড়াজালে পরে আছি আমরা। আমরা শুরুর দিকে ৭০ আশি জন ছিলাম। তখন রাস্তায় দাড়াতেই পারছিলাম না। দেখুন আমরা প্রায় ৩ মাস প্রোগ্রাম করেছি। সরকারের একজন মন্ত্রী বিনীতভাবে সময় চেয়েছেন। আমরা প্রথমে রাজি হইনি। মন্ত্রী মহোদয় বলেছেন আমাকে কি তোমরা বিশ্বাস করো না? তিনি বলেছেন প্রধানমন্ত্রী দেশের বাইরে থাকবে, বিষয়টি জটিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সময় চেয়েছেন তিনি। তাই সেজন্য সেটি আমরা সম্মান করছি”
তিনি আরো বলেন, “ঐখানে আসলে তারা অনেক আবেগপ্রবণ ছিল। এটাকে আসলে বিভক্তি বলা যাবে না”
বাংলাদেশে বর্তমানে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে ৫৬ শতাংশ আসনে কোটায় নিয়োগ দেওয়া হয়। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ রয়েছে মুক্তিযোদ্ধা কোটা। ১০ শতাংশ রয়েছে নারীদের জন্য। আরো রয়েছে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য কোটা। এই ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে গত কয়েক মাসে এনিয়ে সপ্তম-বারের মতো আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা।
সংস্কারপন্থীদের দাবি এই কোটাকে একটা যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে আসা। তারা এতদিন ধরে বলে আসছেন কোটা ১০ থেকে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে।
কিন্তু এখন সেটির সংস্কারের আন্দোলন কোনদিকে যাবে সেটি নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। একটি অংশ যদিও আন্দোলন চালিয়ে যাবার কথা বলছেন।
সূত্র: বিবিসি বাংলা