অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অভ্যন্তরে হঠাৎ করেই সংকট সৃষ্টির আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এ সংকটের মূলে রয়েছেন ২০ দলের শরিক দল এলডিপি সভাপতি ও এক সময় বিএনপি থেকে বহিস্কৃত কর্নেল অলি আহমদ। আর জোটের অভ্যন্তরে কর্নেল অলি আহমদ এমন এক সময় সংকট সৃষ্টির চেষ্টা করছেন যখন ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কথিত দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাবন্দি আছেন।
জানা গেছে, খালেদা জিয়ার মামলার রায়ের আগে ২০ দলের একাধিক বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, খালেদা জিয়াকে ছাড়া নির্বাচনে যাবে না ২০ দলীয় জোট। গত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানোর পরও জোটের সিদ্ধান্ত হয়েছে আগে খালেদা জিয়ার মুক্তি তারপর নির্বাচন। কিন্তু, হঠাৎ করেই গত ২ মার্চ কর্নেল অলি আহমদ ২০ দলের কাছে আগামী নির্বাচনে ৩০ আসনের দাবি করে গণমাধ্যমে একটি বিজ্ঞপ্তি পাঠান।
খালেদা জিয়াকে ছাড়া যেখানে নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ২০ দলের নেতারা সেখানে কর্নেল অলির আসন ভাগাভাগির প্রস্তাব ও ৩০ আসনের দাবি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার ঝড় উঠে। এমনকি কর্নেল অলির অবস্থান নিয়েও চলছে নানা রকম কানাঘুষা।
সর্বশেষ গত ৩ এপ্রিল মঙ্গলবার একটি অনুষ্ঠানে এলডিপির মহাসচিব প্রকাশ্যে সমাবেশে দাবি তুলেছেন এখনই আসন বণ্টনের বিষয়টি ফয়সালা করার জন্য। বিএনপির পক্ষ থেকে যদি আসন বণ্টনের বিষয়টি ফয়সালা করা না হয় তাহলে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেয়ার হুমকিও দিয়েছেন তিনি। আর এলডিপি মহাসচিব যখন প্রকাশ্যে সমাবেশে এ কথা উত্থাপন করলেন তখন তার দলের চেয়ারম্যান কর্নেল অলি অবস্থান করছেন ভারতে।
গত ১৮ মার্চ ১৫ দিনের ব্যক্তিগত সফরে ভারত গেছেন কর্নেল অহি। এর আগে তার জন্মদিনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শুভেচ্ছাও জানিয়েছেন। অলির জন্মদিনে মোদির শুভেচ্ছা বার্তা রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এরপর আবার সপরিবারে ১৫ দিনের ভারত সফর। এসময় মোদিসহ বিজেপির নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করার কথা রয়েছে।
এদিকে, বরাবরেরই মতই ভারত বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনে প্রভাব ফেলার চেষ্টা করবে। এজন্যই এ বছরই দেশটি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঢাকা সফরের ঘোষণা দিয়েছেন। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী, তিনি বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকেই সমর্থন দিতে আসবেন। এমন সময়ে ভারত সফরে গেলেন ২০ দলীয় জোটের শরিক এলডিপির প্রধান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রম।
অনেকে মনে করছিলেন, আগামী নির্বাচনে বিএনপির প্রতি ভারতের সমর্থন ও খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে কথা বলতেই ভারত গেছেন কর্নেল অলি। তবে, সর্বশেষ মঙ্গলবার প্রকাশ্যে সমাবেশে কর্নেল অলির মহাসচিবের বক্তব্যে মারাত্মকভাবে বিব্রত হয়েছেন বিএনপিসহ জোটের অন্যান্য শরিক দলের নেতারা। কর্নেল অলির নির্দেশেই এলডিপির মহাসচিব এমন বক্তব্য দিয়েছেন বলে মনে করছেন জোটের শীর্ষ নেতারা।
তাদের মতে, সরকার দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ভাঙার যে ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত করে আসছে সরকারের সেই চক্রান্তের ফাঁদে পা দিয়েছেন কর্নেল অলি। খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর কর্নেল অলির এমন আচরণ আমাদের মধ্যে যথেষ্ট পরিমাণ সন্দেহ সৃষ্টি করেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০ দলীয় জোটের আরেক শরিক দল কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ ইব্রাহীমও নীরবে কর্নেল অলির এই অবস্থানকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন। সরকারের পক্ষ থেকে তাদেরকে বড় ধরণের অফার দেয়া হয়েছে বলেও জানা গেছে।
তবে রাজনীতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, কর্নেল অলি আহমদ ও সৈয়দ ইব্রাহীম যদি জোট থেকে বের হয়েও যান তাহলে ২০ দলের কোনো ক্ষতি হবে না। কারণ, দুই দলের দুই নেতার ব্যক্তি পরিচয় ছাড়া দেশের কোথাও তাদের দলের কোনো অস্তিত্ব নেই। তারা যদি সরকারের ফাঁদে পড়ে জোট ছাড়ে তাহলে ব্যক্তি হিসেবে মানুষ তাদেরকে যতটুকু সম্মান করে পরে সেটাও হারাতে হবে।