মিসরের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে কারাগারে যথাযথ চিকিৎসা না দিয়ে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে—এ অভিযোগ তুলেছে তার পরিবারের উদ্যোগে গঠিত ব্রিটিশ আইনপ্রণেতা ও আইনজীবীদের একটি প্যানেল। ডিআরপি (ডিটেনশন রিভিউ প্যানেল) নামের ওই প্যানেলের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, মুরসির ক্ষেত্রে বন্দিত্বের ন্যূনতম অধিকারের জন্য নির্ধারিত আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করা হয়নি। তাকে রাখা হয়েছে অনেক বাজে অবস্থায়। বৃহস্পতিবার কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা একদিন আগে (২৮ মার্চ, বুধবার) প্রকাশিত প্রতিবেদনটিকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, এতে মুরসির আইনি সুরক্ষা পাওয়ার অধিকার খর্ব করার অপরাধে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ফাত্তাহ আল সিসিকে দায়ী করার সুপারিশ করা হয়েছে।
২০১১ সালে গণঅভ্যুত্থানে হোসনি মোবারকের পতনের পর ২০১২ সালে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পেয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন মোহাম্মদ মুরসি। কিছুদিন পর পশ্চিমা ষড়যন্ত্রে সেনাপ্রধান ফাত্তাহ আল সিসির নেতৃত্বে মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করে মিসরীয় সেনাবাহিনী। একপর্যায়ে বিভিন্ন অভিযোগে তাকে বন্দি করা হয়। দেওয়া হয় বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড। বর্তমানে তোরা নামের এক অখ্যাত কারাগারে বন্দি আছেন সাবেক এ মিসরীয় প্রেসিডেন্ট। বুধবার ডিটেনশন রিভিউ প্যানেলের প্রতিবেদনে বলা হয়, তিন বছর ধরে মুরসিকে নির্জন কারাবাসে রাখা হয়েছে। প্রতিবেদনের ভাষ্য, সাবেক এ নেতাকে ‘পর্যাপ্ত চিকিৎসা সুরক্ষা দেওয়া হচ্ছে না, তার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না, তার লিভারজনিত জটিলতা নিরসনেও পর্যাপ্ত কিছু করা হচ্ছে না। এ অপর্যাপ্ত সুরক্ষা ব্যবস্থার কারণে তার অবস্থার দ্রুত অবনতি হচ্ছে, যা তাকে অকাল মৃত্যুর দিকে টেনে নিয়ে যেতে পারে।’
মুরসির আটকাবস্থায় তার আইনি সুরক্ষার অধিকারের দেখভাল করার জন্য পরিবারের উদ্যোগে ডিটেনশন রিভিউ প্যানেল গঠিত হয়। লন্ডনভিত্তিক আইনি প্রতিষ্ঠান আইটিএন সলিউশনস-কে প্যানেলের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তারা ব্রিটিশ আইনপ্রণেতা ও আইনজীবীদের নিয়ে প্যানেলটি গঠন করে। মিসরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তিন দিনের ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পরপরই সেই প্যানেলের প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হলো। বিরোধী প্রার্থীরা ভোট বর্জন করায় এ নির্বাচনকে লোক দেখানো বলেই বিবেচনা করা হচ্ছে। নির্বাচনে সিসিই জয় পেতে যাচ্ছেন বলে অনেকটাই নিশ্চিত।
প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের বাইরে ২০১২ সালে বিক্ষোভকারীদের নির্যাতন ও গ্রেফতারের আদেশ দেওয়ার কথিত অভিযোগে ২০১৫ সালের এপ্রিলে মুরসিকে ২০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। কাতারকে গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহের অভিযোগে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর দেওয়া হয় আরও ২৫ বছরের কারাদণ্ড। বিচার বিভাগ অবমাননায় দোষী সাব্যস্ত করে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে আরও তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয় তাকে। ডিটেনশন রিভিউ প্যানেলের প্রতিবেদনে বলা হয়, মুরসিকে যে অবস্থায় রাখা হয়েছে তা মিসর ও আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী নির্যাতনের শামিল। বর্তমান প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাহ আল সিসিকে নির্যাতনকারী হিসেবে দায়ী করা যেতে পারে।’
প্রতিবেদনটি এমন সময় প্রকাশিত হলো যখন মিসরে লোক দেখানো প্রেসিডেন্ট নির্বাচন চলছে। প্রাথমিকভাবে সাতজন প্রার্থী এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এদের একজন হলেন সাবেক জেনারেল ও চিফ অব স্টাফ সামি আনন। অভ্যুত্থানে মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করে ক্ষমতা দখল করা বর্তমান প্রেসিডেন্ট সিসির শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন তিনি। প্রার্থিতা ঘোষণার পরপরই সেনাবিরোধী বক্তব্য প্রচার এবং সরকারি নথি জালিয়াতির অভিযোগ তুলে তাকে আটক করা হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিরোধী দলীয় অনেক প্রার্থী নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। তবে সিসির নির্বাচনি মুখপাত্রের দাবি, কাউকেই নির্বাচনে অংশ নিতে বাধা দেওয়া হচ্ছে না।
সিসির বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী একমাত্র প্রার্থী স্বল্পপরিচিত মধ্যপন্থী রাজনীতিবিদ মুসা মোস্তফা মুসা। সিসির সমর্থক হিসেবে পরিচিত মুসা ঘোষণা দিয়েছেন, বর্তমান প্রেসিডেন্ট পুনরায় নির্বাচিত হলে আপত্তি করার কিছু নেই।
তথ্যসূত্র: বাংলা ট্রিবিউন