অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বেশ কয়েকটি মেইনস্ট্রীম মিডিয়ার আজকের একটি সংবাদের শিরোনাম হলো- ‘শেখ হাসিনা বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা প্রধানমন্ত্রী’। একুশে টিভি ও তাদের অনলাইন, চ্যানেল আই অনলাইন, মানবকণ্ঠসহ কয়েকটি অনলাইন মাধ্যমে এই খবরটি প্রকাশিত হয়েছে।
চ্যানেল আই অনলাইনের উক্ত শিরোনামের সংবাদটিতে বলা হয়েছে-
“বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করেছে আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন গবেষণা সংস্থা দ্য স্ট্যাটিসটিক্স । গবেষণা সংস্থাটি তাদের গবেষণার মাধ্যমে এ মনোনয়ন দেয়ায় শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছে মন্ত্রিসভা।
এটাকে সরকারের অর্জন হিসেবে মন্তব্য করে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে সরকারের অর্জন জনগণকে উৎসর্গ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। সরকারের অর্জনে দেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা আস্থা রেখেছে বলেই অর্জন সম্ভব হয়েছে।”
একুশে টিভির ভিডিও রিপোর্টেও দেখা যাচ্ছে মন্ত্রীসভার পক্ষ থেকে মতিয়া চৌধুরীকে উপস্থাপন করতে শোনা যায় যে, ‘‘দ্যা স্ট্যাটিসটিকস ইন্টারন্যাশনাল’ কর্তৃক মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ায় মন্ত্রীসভা অভিনন্দন প্রস্তাব গ্রহন করিলো।’
একুশে টিভির ভিডিও রিপোর্ট:
সম্প্রতি বিভিন্ন অস্তিত্বহীন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের নামে এরকম ভুয়া সংবাদের ছড়াছড়ির কারণে এই সংবাদের সত্যতা যাছাইয়ে অনুসন্ধান শুরু করে অ্যানালাইসিস বিডি। অনুসন্ধানের শুরুতেই সংবাদটির শিরোনামের অংশ ‘বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা প্রধানমন্ত্রী’ লিখে গুগলে সার্চ করলে দেখা যায় সংবাদটি আজ সোমবার মন্ত্রীসভায় আলোচিত হলেও এটি ৪দিন আগেই ‘পায়রা বিডি নিউজ’ নামে একটি নামসর্বস্ব অনলাইন পোর্টালে সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয়। এছাড়া তিনদিন আগে ekattornews24.com নামে একটি অনলাইন পোর্টালেও নিউজটি প্রকাশিত হয়। এরপর আজকেই মূলত মন্ত্রীসভায় অভিনন্দন প্রস্তাব আনার পর থেকেই বাংলাদেশের মেইনস্ট্রীম মিডিয়াগুলোতে নিউজটি আসতে শুরু করে। আজ প্রকাশিত পোর্টালগুলোর মধ্যে রয়েছে- চ্যানেল আই অনলাইন, একুশে টিভি অনলাইন, পরিবর্তন, মানবকণ্ঠ ইত্যাদি। তবে মানবকণ্ঠের নিউজটির লিংকে গিয়ে দেখা গেছে তারা নিউজটি সরিয়ে নিয়েছে।
৪ দিন আগে প্রকাশিত পায়রা বিডি নিউজের সংবাদটিতে বলা হয়,
“প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। এই তালিকার প্রথমে আছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, আর তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। দক্ষ নেতৃত্ব, রাষ্ট্রনায়কোচিত গুণাবলী, মানবিকতা এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং বাস্তবায়নসহ ২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে আলোচনায় থাকার বিষয় বিবেচনা করে সিঙ্গাপুর ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ‘দ্য স্টাটিস্টিকস ইন্টারন্যাশনাল’ নিজেদের করা এক জরিপ শেষে এই ঘোষণা দেয়।
‘শেখ হাসিনার সম্পর্কে দ্য স্টাটিস্টিকস ইন্টারন্যাশনাল জানায়, ‘২০১৭ সালে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় ছিল রোহিঙ্গা ইস্যু। জাতিগত নিধনের শিকার নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে শেখ হাসিনা মানবিক এবং রাষ্ট্রনায়কোচিত সাহসী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। এক্ষেত্রে তিনি শুধু আশ্রয় দিয়ে ক্ষ্যান্ত থাকেননি, বরং মিয়ানমারে তাদের নিজ ভূমিতে অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কূটনৈতিক লড়াই করে গেছেন। এ বিষয়ে তিনি সফল হয়েছেন। বাংলাদেশের কূটনৈতিক দক্ষতায় মিয়ানমার বাধ্য হয়েছে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করতে। অনেক আন্তর্জাতিক নেতাও এত দ্রুত সময়ে এমন সফলতা পান না। তাই তিনি বিশ্বের স্বনামধন্য মিডিয়ায় নিজ যোগ্যতায় পুরো বছর কাভারেজ ধরে রাখতে পেরেছেন।”
সবগুলো সংবাদেই ‘দ্যা স্ট্যাটিসটিকস ইন্টারন্যাশনাল’ নামক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করা হয়। অ্যানালাইসিস বিডি অনুসন্ধান করতে গিয়ে ইন্টারনেটে সার্চ করে the statistics international বা statistics international নামে ওরকম কোনো গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সন্ধান পাওয়া যায়নি।
এমন একটি প্রসিদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নামে ওয়েবসাইট থাকাটা খুবই স্বাভাবিক ছিলো। কিন্তু ই্ন্টারনেটে এই নামে কোনো ওয়েবসাইটই খুঁজে পায়নি অ্যানালাইসিস বিডি। সার্চ করতে গিয়ে thestatisticsinternational.com/.net/.org নামে thestatistics.com/.net/.org নামে এবং thestatistix.com/.net/.org নামেও কোনো সচল ওয়েবসাইট পাওয়া যায়নি। statistics.net/.org নামে কিংবা statistix.com/.net/.org নামেও ওরকম গবেষণাধর্মী কোনো ওয়েবসাইটের সন্ধান পাওয়া যায়নি।
তবে statistics.com নামে একটি ওয়েবসাইট পাওয়া গেছে। যেটি একটি পরিসংখ্যান শিক্ষা বিষয়ক সাইট। ওয়েবসাইটটির সার্চবক্সে ‘best prime minister’ ‘Prime Minister of Bangladesh’ ‘Sheikh Hasina’ ‘Bangladesh’ ইত্যাদি কীওয়ার্ড সার্চ করে এ সম্পর্কিত কোনো তথ্যই খুঁজে পায়নি অ্যানালাইসিস বিডি।
এছাড়া গুগলে ‘best prime minister’ ‘best prime minister in the world’ ‘Sheikh Hasina second best prime minister’ ইত্যাদি নানা কীওয়ার্ডে সার্চ করেও সাম্প্রতিক সময়ের এমন কোনো সংবাদের লিংক খুঁজে পাওয়া যায়নি।
বিশ্বের সেরা প্রধানমন্ত্রীদের নিয়ে এমন একটি জরিপ অবশ্যই ইন্টারন্যাশনাললিভাবে অনলাইনে আলোচিত একটি সংবাদ হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু ইংরেজীতে বিভিন্ন কীওয়ার্ড দিয়ে সার্চে করেও এই সংবাদ কিংবা উক্ত প্রতিষ্ঠানের কোনো অস্তিত্ব না পাওয়ায় এই সংবাদটি একটি ভুয়া সংবাদ হিসেবেই প্রমানীত হয়।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে এর আগেও এরকম বেশ কয়েকটি ভুয়া সংবাদ গুজবনির্ভর অনলাইন পোর্টালের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিলো। এমনকি সেইসব ভুয়া নিউজকে সত্য মনে করে সংসদেও আলোচনা হয়েছে। এসব ভুয়া সংবাদের উপর ভিত্তি করে প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনাও দিয়েছেন মন্ত্রী এমপি ও দলের নেতাকর্মীরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা গেছে সেই সংবাদগুলো কেবলই গুজব ছিলো। সেইসব কথিত সংবাদ ও কথিত প্রতিষ্ঠানগুলোরও কোনো অস্তিত্বই পরবর্তীতে খুঁজে পাওয়া যায়নি। কথিত ‘বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা প্রধানমন্ত্রীর’ খবরটিও এর ব্যতিক্রম নয়।