৫ জানুয়ারি ঘিরে রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। অনিশ্চয়তার দোলাচলে উত্তপ্ত গোটা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন। আওয়ামী লীগ-বিএনপির পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে মুখোমুখি অবস্থানে দেশজুড়ে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে।
৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদের নির্বাচনের দিনটিকে বিএনপি গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করে। আর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ পালন করে গণতন্ত্র ও সংবিধান রক্ষা দিবস হিসেবে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। সেই এক তরফা নির্বাচনের মাধ্যমে আবারো ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় মহাজোট।এরপর থেকেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দিয়ে এই দিনটি পালন করে আসছে। এবারও বিএনপি ও আওয়ামী লীগ ৫ জানুয়ারি উপলক্ষে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দিয়েছে।
বিএনপি দিবসটি উদযাপনে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে সমাবেশ ও কালো পতাকা মিছিলের কর্মসুচি ঘোষণা করেছে। রাজধানীতে আগামীকাল কেন্দ্রীয়ভাবে দলটি সোহরাওর্য়াদি উদ্যান অথবা নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে চায়। সোহরাওর্য়াদি উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি চেয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাছে চিঠিও দিয়েছে। কিন্তু এখনও অনুমতির বিষয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিছুই বলা হয়নি।
এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরটিএনএনকে বলেন, ৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যা দিবস। প্রশাসন থেকে আমাদের কোনো ধরনের কার্যকলাপ করার অনুমতি দেয়নি। কিন্তু আওয়ামী লীগকে ঢাকা উত্তর-দক্ষিণে অনুষ্ঠান করার অনুমতি দিয়েছে। এক চোখা সব কিছু। জোর জুলুম করে সরকার বেশি দিন টিকে থাকতে পারবে না,মানুষের বাক স্বাধীনতা আজ রুদ্ধ। আজ ১৯৭৫ এর বাকশালের চেয়েও ভয়াবহ পরিবেশ দেশে বিরাজ করছে।
তিনি আরও বলেন,একদিন জনগণ জেগে উঠবেই! সেদিন গণতন্ত্র হত্যাকারী নব্য বাকশালীদের চরম পতন হবে। আমরা দেশে সুষ্ঠু ও গণতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ পরিবেশ দেখতে চাই।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ আরটিএনএনকে বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সারাদেশে আমাদের কর্মসূচি পালন করতে চাই। আশাকরছি সরকার ও প্রশাসন আমাদের কর্মসূচিতে বাধা দেবে না। আমরা রাজধানীতে সমাবেশের অনুমতি পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী। যদি না পাওয়া যায় তাহলে পরবর্তীতে আমাদের কর্মসূচি জানিয়ে দেয়া হবে।
অন্যদিকে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চতুর্থ বর্ষপূর্তির দিনে দেশব্যাপী গণতন্ত্রের বিজয় দিবস উদযাপন করবে আওয়ামী লীগ। সংগঠনের জেলা, মহানগর, উপজেলা ও থানা পর্যায়ে বিজয় র্যালি ও সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দলটি। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ওইদিন বিকাল ৩টায় বনানী মাঠে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর উত্তর এবং ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ প্রাঙ্গণে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বিজয় র্যালি ও সমাবেশ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ঘোষিত কর্মসূচি যথাযথভাবে পালনের জন্য দেশের সকল জেলা, মহানগর, উপজেলা ও থানা আওয়ামী লীগসহ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। একইসঙ্গে দেশের সর্বস্তরের জনগণকে গণতন্ত্রের বিজয়ের এই ঐতিহাসিক দিনটি উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপনের জন্য বিনীত অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।এদিকে, বাংলাদেশ ইউনাইটেড ইসলামিক পার্টি নামক একটি রাজনৈতিক দল প্রশাসনের পক্ষ থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার অনুমতি পেয়েছে।
শুক্রবার নয়াপল্টনে সমাবেশ করার বিষয়ে কোনো নিষেধাজ্ঞা আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বলেন, ‘আমরা নয়াপল্টনে সমাবেশ করার কথা বলেছিলাম। তবে রাস্তায় এই মুহূর্তে সমাবেশ না করতে ডিএমপি কমিশনার আমাদের অনুরোধ করেছেন। ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে আমাদের সব বিষয় নিয়ে বিস্তারিত কথা হয়েছে। আমরা চাইলে যে কোনো দিন সমাবেশ করতে কোনো সমস্যা নেই বলে আশ্বাস দিয়েছেন। তবে সেটা ইনডোরে করতে হবে। এই মুহূর্তে বাইরে কর্মসূচি করা যাবে না। আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে করতে চাইলে আমরা জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে করতে পারব। এখন আমরা দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে ডিএমপিকে জানানোর কথা বলে এসেছি।’
সূত্র: আরটিএনএন