অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বেশ কিছু দিন ধরেই পিইসি, জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসি ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় দেশজুড়ে বইছে সমালোচনার ঝড়। সর্বশেষ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনাও ঘটেছে। এভাবে একের পর এক প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটলেও এসব বন্ধে কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায়নি।
এনিয়ে এখন রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, আইনজ্ঞ, সাংবাদিক, শিক্ষক-অভিভাবকসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। এভাবে চলতে থাকলে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা একেবারে ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশিষ্টজনেরা। শিক্ষার ভবিষ্যত নিয়ে তারা তাদের উদ্বেগের কথাও জানাচ্ছেন সরকারকে।
কিন্তু, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ প্রশ্ন ফাঁস বন্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়ে অন্যের উপর দায় চাপানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এনিয়ে তিনি একেক সময় একক রকম বক্তব্য দিচ্ছেন।
প্রথম দিকে প্রশ্ন ফাঁসের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ না করার জন্য নির্দেশ দেন। এজন্য তিনি গণমাধ্যমকেও দায়ী করেন। প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় দেশের গণমাধ্যম অতিরঞ্জিত করছে বলেও তিনি প্রচণ্ড ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কোনো ভাবেই প্রশ্ন ফাঁস বন্ধ করতে না পেরে পরে দায় চাপাতে শুরু করলেন শিক্ষদের উপর। শিক্ষকরা নাকি সরকার ও মন্ত্রণালয়কে বেকায়দায় ফেলতে পরিকল্পিতভাবে প্রশ্ন ফাঁস করছেন। অথচ বিভিন্ন অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসছে শিক্ষামন্ত্রণালয়, শিক্ষা অধিদপ্তর ও সরকারি প্রেসের লোকজন প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত। এমনকি দুদক কমিশনার ড. নাসির উদ্দিন আহমদও বলেছেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত।
কিন্তু, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এসবকে পাত্তাই দিচ্ছেন না। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে বাঁচাতে তিনি উঠেপড়ে লেগে আছেন। তিনি এমনভাবেই দুর্নীতিবাজদের পক্ষ নিলেন যে, তাদেরকে সহনীয় মাত্রায় ঘুষ খাওয়ার পরামর্শ দিলেন। নিজেও যে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত সেটাও অকপটে স্বীকার করে বললেন, মন্ত্রীরাও চোর, আমিও চোর।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারের মন্ত্রী-এমপি ও নীতিনির্ধারকরা শিক্ষামন্ত্রীর উপর প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ। বিশেষ করে মন্ত্রীদেরকে চোর বলায় প্রধানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের ওপর আরও বেশি ক্ষুব্ধ হয়েছে। সরকারের অন্যান্য মন্ত্রীরা এনিয়ে প্রকাশ্যে কিছু না বললেও ভিতরে ভিতরে ক্ষুব্ধ হয়ে আছেন।
জানা গেছে, একাধিক মন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাদের ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন। কেউ কেউ শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেও প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন।
অপরদিকে, নুরুল ইসলাম নাহিদও এঘটনায় সরকার ও দলের মধ্যে কোনঠাসা হয়ে পড়েছেন। অবস্থা খারাপ বুঝতে পেরে তিনি তড়িগড়ি করে বুধবার সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন। জানা গেছে, এটাও সরকারের চাপে পড়েই করছেন। সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে বিষয়টি সুরাহা করার চেষ্টা করছেন বলেও একটি সূত্রে জানা গেছে।