অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
ঘটনার ৫ মাসেরও বেশি সময় পর নিজের অপহরণ ও উদ্ধার নিয়ে সাংবাদিকদের সামনে মুখ খুলেছেন কবি ও প্রাবন্ধিক ফরহাদ মজহার। হঠাৎ করেই শনিবার এক সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে লিখিত বক্তব্যের মাধ্যমে তাঁর অপহরণ, তাঁকে নিয়ে কয়েকটি বাহিনীর প্রচণ্ড তর্কাতর্কি, অবশেষে থানায় সোপর্দ এবং জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় নিয়ে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে তাঁর কিছু বক্তব্য নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেছেন, সাদা পোশাকের কিছু লোক র্যাবের কাছ থেকে তাঁকে ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। অপহরণকারীরা তাঁকে খুলনা-যশোর সীমান্তের দিক দিয়ে সীমান্তের ওপারে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। তিনি আরো বলেছেন, জিজ্ঞাসাবাদের সময় ‘তিনি বিনোদনের জন্য বেরিয়েছেন’ এমন স্বীকারোক্তি দিতে তাকে বাধ্য করা হয়।
ফরহাদ মজহার বলেন, ‘সাদা পোশাকের কিছু লোক র্যাবের দিকে বন্দুক তুলে শাসিয়ে আমাকে ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে প্রচণ্ড তর্কাতর্কি হয়। তবে র্যাব রীতিমতো ছোটখাট যুদ্ধক্ষেত্রের মধ্য দিয়ে আমাকে তাঁদের গাড়িতে ওঠায়। কিন্তু সাদা পোশাকের লোকগুলো র্যাবের গাড়ি থেকে আমাকে নামানোর চেষ্টা করে।’ ফরহাদ মজহার আরও বলেন, অপহরণকারীরা তখনো এলাকায় থাকতে পারে ভেবে র্যাব তাঁকে খুলনায় নিয়ে চিকিৎসা-বিশ্রামের পাশাপাশি তদন্ত করতে চেয়েছিল। কিন্তু কে বা কারা র্যাবের গাড়ির দুই দিকের রাস্তায় ট্রাক থামিয়ে পথরোধ করে রেখেছিল।
সাদা পোশাকের কিছু লোক র্যাবের দিকে বন্দুক তুলে শাসিয়ে তাঁকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছে, এমন তথ্য সাধারণ মানুষ ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মনে চাঞ্চল্য ও ভীতির সৃষ্টি করেছে। কারন দেশে ক্রমাগত হারে বাড়তে থাকা গুম খুনের জন্য দেশি বিদেশি মানবাধিকার সংস্থাগুলো র্যাবকে দায়ী করে আসছে। এর অনেক প্রমাণও মিলেছে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে গুম খুনে শুধু র্যাব একাই জড়িত নয়। তাদের পাশাপাশি সাদা পোশাকের আরো অনেক গুপ্ত বাহিনীও জড়িত আছে যারা র্যাবের চাইতেও ক্ষমতাধর। এমনকি র্যাবের দিকে বন্দুক তুলে শাসিয়ে ভিকটিমকে ছিনিয়ে নেয়ার ক্ষমতাও সেই গুপ্ত বাহিনী রাখে। প্রশ্ন হলো সাদা পোশাকের সেই গুপ্ত বাহিনীর লোকেরা আসলে কারা? তারা কি সরকারি কোনো বাহিনীর লোক? তারা কি আদৌ এদেশের নাকি সীমান্তের ওপারের?
ফরহাদ মজহার জানান অপহরণকারীরা তাকে সীমান্তের ওপারে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তার এই বক্তব্য থেকেও আন্দাজ করা যায় সেই সাদা পোশাকধারীরা হয়তো সীমান্তের ওপারেরও হতে পারে। আমরা ইতোমধ্যেই বাংলাদেশে গুমকৃত ব্যক্তিকে সীমান্তের ওপারে অর্থাৎ ভারতে উদ্ধার হতে দেখেছি।
২০১৫ সালের ১০ মার্চ উত্তরার একটি বাসা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে অপহৃত হন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ। দুই মাস গুম থাকার পর ভারতের শিলং থেকে উদ্ধার হন তিনি। এছাড়া জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষের সাক্ষী(তিনি প্রথমে বিপক্ষের সাক্ষী ছিলেন) সুখরঞ্জন বালীকেও আদালত গেট থেকে সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে অপহরণের দীর্ঘদিন পর ভারতে তার খোঁজ পাওয়া যায়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক নেতাকর্মীর বাইরে ব্যবসায়ীসহ যারা অপহরণের স্বীকার হচ্ছেন তাদেরকে বেশিরভাগ সময়ই দেখা গেছে ডিবি পুলিশের কোনো গ্রুপ চাঁদা আদায়ের জন্য অপহরণ করছেন। এক্ষেত্রে কক্সবাজারে সেনাবাহিনীর হাতে একদল ডিবি পুলিশ আটক হওয়া একটি দৃষ্টান্ত। তবে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের অপহরণ বা গুমের ঘটনা সম্পুর্ণ আলাদা বিষয়। এক্ষেত্রে বিরোধী দলকে দমন, আন্দোলন দমন এবং ক্ষমতাশীনদের জন্য হুমকী হওয়া ব্যক্তিদের দমন, অন্যদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি ইত্যাদি বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। আর এসব বিষয়ে অন্য কোনো দেশের স্বার্থ জড়িত থাকাটাও অসম্ভব কিছু নয়।
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ফরহাদ মজহারের অপহরণের জন্য ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ কে দায়ী করেছেন। এছাড়া ফরহাদ মজহার ‘নিখোঁজ’ ও উদ্ধারের ঘটনায় ভারতের সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ করেছে এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন (এএইচআরসি)। সাতটি প্রশ্ন তুলে হংকং ভিত্তিক ওই সংগঠনটি গত ৭ জুলাই এক বিবৃতিতে এই অভিযোগ করে। সেই প্রতিবেদনে সংগঠনটি দাবি করেছে, ‘ফরহাদ মজহারের অপহরণ ঘটনা শাসন ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ জানানো ও বাংলাদেশে থাকা ভারত বিরোধীদের জন্য একটি কঠোর বার্তা।’
ফটো: ফাইল ফটো
Discussion about this post