অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা যখন যাত্রা বিরতির পর সিঙ্গাপুর থেকে অস্ট্রেলিয়ার পথে ঠিক তখনই রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের দেয়া একগুচ্ছ অপরাধনামা প্রকাশ করলো সুপ্রিমকোর্ট। অপরাধও একটা দুইটা নয় ১১ টা।
আপিল বিভাগের ৫ বিচারপতির কাছে এসকে সিনহার অপরাধনামার মধ্যে রয়েছে বিদেশে অর্থ পাচার, আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি, নৈতিক স্খলনসহ সুনির্দিষ্ট ও গুরুতর অভিযোগ।
সুপ্রিমকোর্টের বিবৃতি থেকে জানা গেছে, এসব অপরাধনামা গত ৩০ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ছাড়া আপিল বিভাগের অন্য পাঁচ বিচারপতিকে বঙ্গভবনে নিয়ে তাদের কাছে হস্তান্তর করেন। আর প্রধান বিচারপতি দেশ ছাড়ার পর শনিবার বিকেলে এগুলো জনসম্মুখে প্রকাশ করা হয়।
এসব অপরাধনামা প্রকাশের পর রাজনৈতিক বিশ্লেষক, আইন বিশেষজ্ঞ, রাজনৈতিক দলসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের নৈতিকতা নিয়েও। এমন একজন অপরাধীকে রাষ্ট্রপতি এতদিন কার স্বার্থে প্রধান বিচারপতির চেয়ারে বসিয়ে রেখেছিলেন?
জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর স্কাইপ কেলেঙ্কারিতে এসকে সিনহা সরাসরি জড়িত ছিলেন। যা ছিল গুরুতর অপরাধ। সাজানো সাক্ষীর মাধ্যমে সরকারের কথিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জামায়াত নেতাদের ফাঁসির রায় দিয়েছিল। অভিযোগ প্রমাণ না হওয়া সত্ত্বেও আপিল ও রিভিউতে এসকে সিনহা জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছিলেন। বিশেষ করে জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর মামলায় মারাত্মক হযবরল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল। এরপরও এসকে সিনহা তার মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, ওই সময় কি প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার এসব অভিযোগ ছিল না? রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ তখন কেন এসব অপরাধনামা প্রকাশ করেন নি?
রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের বিরুদ্ধে আরেকটি গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। সেটা হলো- জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ ও বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী কোনো প্রাণ ভিক্ষার আবেদন করেনি বলে তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। কিন্তু, আইনমন্ত্রণালয় তাদের স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া আবেদন রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠায়। কিন্তু, আব্দুল হামিদ জানার পরও এই ভুয়া আবেদনে স্বাক্ষর করেছিলেন।
ঠিক একইভাবে প্রধান বিচারপতির নামে আইনমন্ত্রণালয় রাষ্ট্রপতির কাছে ভুয়া আবেদন পাঠায়। এখানেও রাষ্ট্রপতি আগেরমতো স্বাক্ষর করেন।
এসব নিয়ে এখন জনমনে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এতদিন যাবত প্রধান বিচারপতির এসব অপরাধ গোপন রেখে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ শপথ লঙ্ঘন করেছেন বলেও মনে করছেন কেউ কেউ। সংবিধান লঙ্ঘনের দায়ে রাষ্ট্রপতির পদে আব্দুল হামিদের আর থাকার নৈতিক অধিকার নেই বলেও তাদের অভিমত।
Discussion about this post