অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
সব গোমর ফাঁস করে দিয়ে অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশ্যে দেশ ছেড়েছেন প্রায় ১৫ দিন গৃহবন্দি থাকা প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। শুক্রবার রাত ১০ টায় তিনি বাসভবন থেকে বেরিয়ে গণমাধ্যমকে বললেন, আমি অসুস্থ্য নই, আবার ফিরে আসবো। তার এ বক্তব্যের মাধ্যমে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক যে বিড়ালটিকে এতদিন থলের ভেতর ভরে রাখছিলেন, সেটা বেরিয়ে বাইরে চলে এসেছে। আর আইনমন্ত্রীর বক্তব্য ও গনমাধ্যমে প্রকাশিত প্রধান বিচারপতির কথিত ছুটির আবেদন নিয়ে এতদিন জনমনে যে সন্দেহ-সংশয় সৃষ্টি হয়েছিল তাও সত্য প্রমাণিত হলো।
গত ৩ অক্টোবর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছিলেন, প্রধান বিচারপতি ক্যান্সারে আক্রান্ত। তিনি এক মাসের ছুটি নিয়েছেন। আইনমন্ত্রী একটি আবেদনও প্রকাশ করেছিলেন। রাষ্ট্রপতির কাছে করা প্রধান বিচারপতির ওই আবেদন নিয়ে চরম বিতর্ক সৃষ্টি হয় তখন। আবেদনের একাধিক শব্দ ও বানান ভুল। এটা প্রধান বিচারপতির হাতের লেখা নয় বলেও অভিযোগ উঠে। যা এখন সত্য প্রমাণিত হয়েছে। কারণ প্রকাশিত সেই আবেদনপত্রে অসুস্থ্যতার জন্য ছুটির কথা বলা হলেও প্রধান বিচারপতি আজ সরাসরি বলে গেলেন তিনি সম্পূর্ণ সূস্থ্য। তাহলে আবেদন পত্র আসলে কে লিখেছিলো?
এদিকে কথিত ছুটির আবেদনের পর তখন প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করার জন্য আইনজীবীদের পক্ষ থেকে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও সরকার সুযোগ দেয়নি। সুপ্রিমকোর্ট বার এবং বিএনপির পক্ষ থেকে বরাবরই অভিযোগ করা হয়েছে যে সরকার প্রধান বিচারপতিকে অন্তরীণ করে রেখেছে।
এরপর, এক সপ্তাহের ব্যবধানে ক্যান্সার আক্রান্ত থেকে প্রধান বিচারপতিকে মানসিক রোগী বানালেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
প্রথমে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের কাছে করা ছুটির আবেদনে প্রধান বিচারপতি উল্লেখ করেছিলেন ক্যান্সারসহ নানা জটিল রোগে তিনি আক্রান্ত। আর বিদেশ যাওয়ার জন্য অনুমতি চেয়ে করা আবেদনে উল্লেখ করেছেন তিনি এখন মানসিক অবসাদগ্রস্ত। তবে, দুইটি আবেদনই সরকারের পক্ষ থেকে প্রকাশ করা হয়েছে। অসুস্থ্যতার বিষয়ে প্রধান বিচারপতি তখন পর্যন্ত গণমাধ্যমের কাছে কিছু বলতে পারেন নি।
এদিকে, আইনমন্ত্রণালয় প্রধান বিচারপতির বিদেশ যাওয়ার অনুমতি পত্রটি প্রকাশের পরই এনিয়ে আবার নতুন বিতর্ক দেখা দেয়। পরের আবেদনে আবার নতুন রোগের উল্লেখ থাকায় জনমনে সন্দেহ আবার তীব্র আকার ধারণ করে। সর্বশেষ শুক্রবার রাতে মুখ খুললেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। গণমাধ্যমের কাছে দিলেন সরকারের সব গোমর ফাঁস করে।
বিদেশ যাওয়ার আগ মুহূর্তে বাসা থেকে বের হয়ে প্রধান বিচারপতি গণমাধ্যমকে বললেন, আমি সম্পূর্ণ সুস্থ্য। আমি অসুস্থ্য না। আমি চলে যাচ্ছি। আমি পালিয়েও যাচ্ছি না। আমি আবার ফিরে আসবো। আমি একটু বিব্রত। আমি বিচার বিভাগের অভিভাবক। বিচার বিভাগের স্বার্থে, বিচার বিভাগটা যাতে কলুষিত না হয়, এ কারণেই আমি সাময়িকভাবে যাচ্ছি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, সরকারকে ভুল বোঝানো হয়েছে। এই আমার বক্তব্য আর কিছু বলব না। আমি লিখিত বক্তব্য দিয়েছি।
রাজনীতিক বিশ্লেষকসহ সচেতন মানুষ মনে করছেন, একটা মিথ্যাকে ধামাচাপা দিতে সরকার আরও দশটা মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে। সরকার প্রথমে প্রধান বিচারপতিকে ক্যান্সারের রোগী বানিয়ে ছুটিতে পাঠিয়েছে। এরপর তাকে বিদেশ পাঠানোর জন্য বানানো হয়েছে মানসিক রোগী। একটি দেশের প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সরকারের এই ধরণের আচরণ খুবই লজ্জার।
তাদের মতে, সরকার জোরজবরদস্তি করে প্রধান বিচারপতিকে অসুস্থ্য বানিয়ে বিদেশে পাঠালেও এর বিরুপ প্রতিক্রিয়া একদিন দেখা দেবে। ইতিমধ্যেই প্রকাশ হতে শুরু করেছে। সরকারের কারসাজি জনগণ সবই বুঝতে পারছে। এর খেসারত সরকারকে একদিন দিতেই হবে।
Discussion about this post