অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
মিয়ানমারের সেনা ও বৌদ্ধ সন্ত্রাসীদের হত্যা-নির্যাতন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক রাজনীতি। অসহায়-নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের চেয়ে কয়েকটি দেশ নিজেদের স্বার্থকে বড় করে দেখছে। কোনো কোনো দেশ আবার রোহিঙ্গাদের সঙ্গে দ্বিমুখি আচরণও করছে। বিশেষ করে আমাদের প্রতিবেশি দেশ ভারত রোহিঙ্গা ইস্যুতে রহস্যজনক ভুমিকা পালন করছে। তবে, দিন যত যাচ্ছে ভারতের অবস্থান ততই পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে।
গত ২৫ আগস্টের পর থেকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও বৌদ্ধ সন্ত্রাসীরা রাখাইনের সংখ্যালঘু মুসলিমদের ওপর পৈশাচিক কায়দায় হত্যা-নির্যাতন চালাচ্ছে। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিচ্ছে তাদের বাড়িঘর। প্রাণ ভয়ে ৪ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। মিয়ানমার বাহিনীর হত্যা-নির্যাতন ও বাড়িঘরে আগুন দেয়া এখনও অব্যাহত আছে।
চলতি মাসের শুরুর দিকে মিয়ানমার সফরে গেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বাংলাদেশসহ মুসলিম বিশ্ব আশা করছিল রোহিঙ্গাদের ওপর হত্যা-নির্যাতন বন্ধ করতে মোদি মিয়ানমারকে চাপ দেবে। কিন্তু, তা না করে সুচির এসব কর্মকাণ্ডকে অকুণ্ঠভাবে সমর্থন করে আসলো। মিয়ানমার বাহিনীর হত্যা-নির্যাতনকে সমর্থন দেয়ায় ভারতের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে বাংলাদেশের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ। মোদির এই আচরণে ক্ষুব্ধ হয় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগও। এরপর বাংলাদেশের মানুষকে সান্তনা দেয়ার জন্য ভারতের পক্ষ থেকে তড়িগড়ি করে একটি বিবৃতি দেয়া হয় যে, ভারত রোহিঙ্গাদের পাশে থাকবে। পরে রোহিঙ্গাদের জন্য কিছু ত্রাণও পাঠায় ভারত। ভারতের এই ত্রাণ নিয়ে সারাদেশে ব্যাপক সমালোচনা হয়। ভারতের এই ত্রাণ গ্রহণ না করতেও সরকারকে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ পরামর্শ দিয়েছিল।
কারণ হলো, মোদির সমর্থনের পর মিয়ানমার বাহিনী আরও বেপরোয়া হয়ে উঠে। মোদি মিয়ানমারে অবস্থানকালীন সময়ে দেশটির সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর আরও বেশি হত্যা-নির্যাতন চালিয়েছে। আগুন দিয়ে বাড়িঘর পুড়িয়ে তাদেরকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করেছে। যে কারণে রোহিঙ্গাদের জন্য মোদির পাঠানো ত্রাণ নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠে।
বিশিষ্টজনেরা বলছেন, রাখাইন থেকে রোহিঙ্গা মুসলিমদেরকে বের করে দিতে সুচিকে মোদি পরামর্শ দিয়ে আসছেন। ভারতে ঢুকে পড়া প্রায় ৪০ হাজার রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন, সমূদ্রসহ সকল সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছেন যাতে অসহায় রোহিঙ্গারা প্রবেশ করতে না পারে। আবার সেই মোদিই পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ পাঠান! এ যেন গরু মেরে জুতা দান করা।
এরপর ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের পাশে থাকার আশ্বাস দেন। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, নিউ ইয়র্কে যাওয়ার সময় একই ফ্লাইটে গেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। তিনি রোহিঙ্গা বিমানে বসেই শেখ হাসিনাকে দিল্লির বার্তা দিয়েছেন যে, রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারত বাংলাদেশের পাশে থাকবে। যদিও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কিছু বলা হয়নি। অন্যদিকে নিউইয়র্কে হাসিনার সঙ্গে সুষমার বৈঠকেও ছিলো না রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ।
এদিকে, মিয়ানমারের সামরিক অস্ত্র বিক্রির ঘোষণা দিয়েছে ভারত। এই পরিস্থিতিতে মিয়ানমারের কাছে ভারতের অস্ত্র বিক্রির ঘোষণায় অনেক জল্পনা কল্পনা শুরু হয়ে গেছে। রাজনীতি বিশ্লেষকসহ সচেতন মানুষ এনিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে। তারা বলছেন, ভারত রোহিঙ্গাদের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। আবার মিয়ানমারের কাছে অস্ত্র বিক্রিরও ঘোষণা দিয়েছে। এর মানে ভারত সুচিকে বুঝাতে চাচ্ছে যে, আমি আসলে তোমার সঙ্গেই আছি।
অনেকেই বলছেন, ৭১ সালে ভারত নিজেদের স্বার্থেই মুক্তিযুদ্ধে আমাদেরকে সহযোগিতা করেছিল। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তানকে আলাদা করে মুসলমানদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করাই ছিল ভারতের প্রধান টার্গেট। স্বাধীনতার পর থেকে ভারত আমাদের কাছ থেকে শুধু লুটে নিচ্ছে। আমাদেরকে কিছুই দেয়নি। ভারত নিজেদের বাংলাদেশের বন্ধু দাবি করলেও শত্রুর চেয়েও আরও বেশি ক্ষতি করছে।
Discussion about this post