অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের মাধ্যমে বিচারপতিদের অপসারণ করার ক্ষমতা হারিয়েছে সরকার। এ রায়ের পর সরকার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাসহ গোটা বিচার বিভাগের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে সরকারের মন্ত্রী-এমপি ও সরকারদলীয় নেতারা ইচ্ছেমত গালিগালাজ করছেন। রায় পরিবর্তনের জন্য সরকার প্রধান বিচারপতির ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করে যাচ্ছে।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রধান বিচারপতির বাসায় গিয়ে তাকে ধমক দিয়ে এসেছেন। রাষ্ট্রপতির মাধ্যমেও সরকার প্রধান বিচারপতিকে পদত্যাগ করতে বলেছেন। আওয়ামী লীগের নেতারা প্রধান বিচারপতিকে পদত্যাগের জন্য আল্টিমেটামও দিয়েছেন। সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা গওহর রিজভী বুধবার রাতে সুপ্রিকোর্টে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বৈঠক করে তাকে অনুরোধ করেছেন পদত্যাগ করতে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রায় পরিবর্তন ও প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের বিষয়ে সরকারের সকল চেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছে। প্রধান বিচারপতি তার অবস্থানে অনঢ় রয়েছেন। তাই, সরকার এখন প্রধান বিচারপতিকে হেনস্তা করতে এনবিআর ও বাংলাদেশ ব্যাংককে বেছে নিয়েছে। এই দুই প্রতিষ্ঠানকে প্রধান বিচারপতির আয়-ব্যয়ের তদন্ত করতে নির্দেশ দিয়েছে সরকার।
জানা গেছে, সরকারের নির্দেশের পর প্রধান বিচারপতির পরিবারের আর্থিক বিষয়াদি খতিয়ে দেখছে জাতীয রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং বাংলাদেশ ব্যাংক। বিচারপতি সিনহা হাইকোর্টে বিচারপতি হিসেবে শপথ নেওয়ার আগে যথাযথ ভাবে আয়কর দিয়েছেন কিনা তাও খতিয়ে দেখছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। একই সঙ্গে তাঁর স্ত্রী, দুই কন্যা এবং তাঁর শ্যালকের বার্ষিক আয়কর বিবরণী নিরীক্ষা করছে তারা।
বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার দুই কন্যা। একজন ভারতে থাকেন, অন্যজন থাকেন অস্ট্রেলিয়ায়। তারা কীভাবে চলেন, বাংলাদেশ থেকে বৈধ অবৈধ পথে তাঁদের কোনো টাকা পয়সা পাঠানো হয়েছে কিনা। সে ব্যাপারে তদন্ত শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এনবিআরের চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান বলেছেন, ‘জাতীয় রাজস্ব বোর্ড যেকোনো ব্যক্তিরই আয়ের উৎস এবং তাঁর আয়-ব্যয়ের সামঞ্জস্য খতিয়ে দেখতে পারে। এটাই আমাদের কাজ। এর মধ্যে অন্যকোনো যোগসূত্র খুঁজতে যাওয়া ঠিক না।’
অপরদিকে, বিচারপতি সিনহা এবং তাঁর পরিবার অবৈধ পন্থায় কোনো অর্থ দেশের বাইরে পাঠিয়েছেন কিনা সে ব্যাপারে তদন্ত শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ফিন্যান্সিয়াল ইনটেলিজন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এই তদন্ত কাজ করছে। গত সপ্তাহে অর্থমন্ত্রণালয় একটি অভিযোগের পরিপ্রক্ষিতে ‘বিষয়টি’ খতিয়ে দেখার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশ দেয়। ফিনান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিটের কাজ হলো অবৈধ অর্থ বিদেশ পাচার খতিয়ে দেখা।
হঠাৎ করে প্রধান বিচারপতি ও তার পরিবারের সদস্যদের আয়-ব্যয়ের তদন্ত করায় জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সরকার প্রধান বিচারপতিকে দুর্নীতিগ্রস্ত বানিয়ে তাকে অপসারণ করতেই এমন উদ্যোগ নিয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। সরকারের এ উদ্যোগে বর্তমান সৃষ্ট সংকট আরও জটিল আকার ধারণ করবে বলেও মনে করছেন তারা।
Discussion about this post