অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বাংলাদেশের গণমাধ্যম এখন পুরোপুরি সরকারের নিয়ন্ত্রণেই বলা যায়। সরকারের গুণকীর্তন ছাড়া অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোনো রিপোর্ট করলেই নিপীড়নের খড়গ নেমে আসে। এরপরও দেশে সৃষ্ট কোনো পরিস্থিতি বা ঘটনাকে সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলেই এর দায়ভার গণমাধ্যমের ওপর চাপানোর চেষ্টা করা হয়। মূলত সাধারণ মানুষের সমস্যাগুলোই গণমাধ্যম তুলে ধরার চেষ্টা করে। কিন্তু, এটাকেও সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা মেনে নিতে পারছে না। গণমাধ্যমের ওপর দোষ চাপিয়ে নিজেদের ব্যর্থতার দায় এড়ানোর চেষ্টা করেন।
রমজান শুরু হওয়ার এক সপ্তাহ আগ থেকেই নিত্যপণ্যের দাম বাড়া শুরু হয়েছিল। রমজানে দ্রব্যমূল্যের বাজারে আগুন। বলা যায়, বাজার দর এখন সাধারণ ও নিম্ন আয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। যুক্তিসংগত কোনো কারণ ছাড়াই প্রতিদিন বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আছে বলে সরকারের মন্ত্রীরা এমন দাবি করে আসলেও বাস্তবে বাজারের চিত্র সম্পূর্ণ বিপরীত। সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সরকারের উচ্চপর্যায়ের লোকজন জড়িত আছে বলে মনে করছে সাধারণ মানুষ। কিন্তু, গণমাধ্যমে এসব খবর প্রকাশিত হলেই সরকার বলে গণমাধ্যম অতিরঞ্জিত করে সংবাদ প্রকাশ করে।
এদিকে, পবিত্র রমজান মাসে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে যখন সাধারণ মানুষ হিমশিম খাচ্ছে, তখন এর সঙ্গে যোগ হয়েছে চালের অস্বাভাবিক দাম। রমজান মাসে নিম্ন আয়ের মানুষও মোটামোটি ভাল চালের ভাত খাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু, হঠাৎ করে চালের অস্বাভাবিক দাম বাড়াতে চিকন চালতো দূরের কথা মোট চাল ক্রয় করাটাও এখন কষ্টকর হয়ে গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৩৫ কেজির মোটা চাল এখন ৪৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। চালের অস্বাভাবিক দাম বাড়ার কারণে নিম্ন আয়ের মানুষ ভাত খাওয়া কমিয়ে দিয়েছে বলেও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা গেছে। অনেকেই এখন চাল কিনলে ডাল কিনতে পারছে না। আবার চাল-ডাল কিনলে মাছ-তরকারি কিনতে পারছে না।
জানা গেছে, মিল মালিকদের মজুতদারী ও সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণে চাল দাম বেড়েছে। এছাড়া দেশে বর্তমানে খাদ্য ঘাটতিও রয়েছে। কিন্তু, মিল মালিক ও সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম চালের দাম বাড়ার জন্য দুষলেন গণমাধ্যমকে। তিনি বললেন, গণমাধ্যম নাকি ভুল তথ্য দিচ্ছে।
দেশে খাদ্যের কোনো ঘাটতি নেই বলে সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন। জানা গেছে, এ বছর সরকারের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় অর্ধেক ধান উৎপাদন কম হয়েছে। যদিও খাদ্যমন্ত্রী দাবি করছেন যে, ২০ লাখ টন ধাম কম উৎপাদন হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৪০ লাখ টন ধান কম উৎপাদন হয়েছে। ভিয়েতনাম থেকে ৪ লাখ টন চাল আমাদানি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী। এছাড়া ভারত- থাইল্যান্ড থেকেও আমদানির চেষ্টা চলছে। ১০ লাখ টন চাল আমদানি করবেন বলে জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সরকার যদি ১০ লাখ টন চাল আমদানিও করে, তারপরও বড় ধরণের ঘাটতি থেকে যাবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে জনগণকে এবছর খাদ্য সহায়তা দিতে হবে বেশি। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করাটা এবার সরকারের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। দেশে কোনো খাদ্য ঘাটনি নাই বলে সরকার যতই দাবি করুক না কেন, দিন যতই যাচ্ছে খাদ্য সংকট ততই দেখা দিচ্ছে। খাদ্য সংকটের কারণে চালের বাজার সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
Discussion about this post