জোর করে, গায়ের জোরে বেআইনিভাবে একেবারে চর দখলের মতো তাঁর বাড়ি (গুলশানের বাড়ি) দখল করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ। খাট না থাকায় এখন তিনি ফ্লোরে ঘুমান বলেও জানান।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে গুলশানের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ সম্পর্কে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মওদুদ আহমদ এসব কথা বলেন।
আইনজীবী মওদুদ আহমদ বলেন, ‘বাড়ি দখল বড় নয়, কিন্তু যে আমার সারা জীবনের সংগ্রহ…এই যেভাবে তারা করেছেন, অনেক কিছু হারিয়ে গেছে। আমার এক হাজার বছর পুরোনো একটি মাটির বাটি (ইজিপশান) খুঁজে পাচ্ছি না। সেই ধরনের অনেক ব্যক্তিগত যে সংগ্রহ, ছোটখাটো সুভ্যিনর যেগুলো মানুষ স্মরণ করে। তারপর আমার দুই পুত্রসন্তান তারা এই পৃথিবীতে নেই। কিন্তু তাদের অনেক স্মৃতি এই বাড়ির সঙ্গে, সেগুলো ধ্বংস করার, নষ্ট করার অধিকার তাদের কে দিয়েছে? বিরোধী দল করি বলেই আজকে এ অবস্থায় এই মামলা সাত বছর বিলম্ব হয়েছে। সাত মাস বিলম্ব হলেও বলে বার্ড। এখানে সাত বছর পর করলেন দলিলগুলো এনে, আর এখন ৩৪ বছর পরে বলছেন যে এই বাড়ির মালিক সরকার। অধস্তন আদালতে বললেন না, হাইকোর্টে বললেন না। হাইকোর্টের রায় তো আমার ভাইয়ের পক্ষে গিয়েছে, সেগুলো বলবেন না।’
বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ আরও বলেন, ‘কিন্তু আজকে বলেন সরকারের বাড়ি—যেটি সুপ্রিম কোর্ট এই রায়ের মাধ্যমে প্রত্যাখ্যান করেছেন। আমাদের মুশকিল হলো আমরা কেউ রায় না পড়ে রায়ের ওপর মন্তব্য করি। যতজন আজকে আওয়ামী লীগের নেতারা যাঁরাই বক্তব্য রেখেছেন, আমি একেবারে শিউর, তারা রায়টা একেবারে পড়েন নাই। রায়টা পড়লে তাঁরা দেখতে পারতেন এ ধরনের কোনো নির্দেশনা নাই। এই রায়তে বলেন নাই যে আমাকে বেরিয়ে যেতে হবে। রায়ে সরকার বা কাউকে অথোরাইজ করে নাই অত দিনের মধ্যে দখল নেওয়ার জন্য, আপনি উনাকে (মওদুদ) বের করে দিন। এটা একটা সত্যিকার অর্থে মানবাধিকারের লঙ্ঘন। জোর করে গায়ের জোরে বেআইনিভাবে অন্যায়ভাবে একেবারে চর দখলের মতো আমার বাড়িটা তারা দখল করেছে।’
বর্তমানে কোথায় থাকছেন এমন প্রশ্নে মওদুদ আহমদ বলেন, ‘আমাদের একটা ফ্ল্যাট আছে। খাটটাট সবকিছু ভেঙে ফেলেছে ওরা। সেগুলো আজকে থেকে শংকর বলে আমার পুরোনো একজন কাঠের মিস্ত্রি আছে, সে আজকে কাজ শুরু করেছে, সেগুলো জোড়া লাগবে। এখন মাটিতে, ফ্লোরের মধ্যে শুই। কিন্তু খাটটাট তৈরি হলে আশা করি খাটের মধ্যে শোয়ার একটু সুযোগ পাব।’
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন, তিনি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতিও।
লিখিত বক্তব্যে জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘বাড়ির মালিক ইনজে ফ্লাজ মৃত্যুবরণ করার পর তাঁর একমাত্র পুত্রসন্তান করিম ফ্রানজ সুলায়মানই এই বাড়ির মূল মালিক। ইটস এ ম্যাটার বিটুইন টু প্রাইভেট পার্টিস। সরকার বা রাজউকের এ ব্যাপারে কোনো স্বার্থ থাকতে পারে না। তিনি বলেন, এ উচ্ছেদ অভিযানে কোনো তালিকা তৈরি করা হয়নি। যার ফলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মালামালের কোনো হদিস নেই।’
জয়নুল আবেদীন আরও বলেন, আদালতের কোনো আদেশ ছাড়া কোন বাড়ির দখলদারকে উচ্ছেদ করা সম্পূর্ণ বেআইনি। এই উচ্ছেদ করার জন্য আদালতের কোনো নির্দেশ তাদের ছিল না। তারপরও বিনা নোটিশে ও বিনা অনুমতিতে বাড়িতে জোরপূর্বক প্রবেশ এবং মওদুদ আহমদকে উচ্ছেদ করে সংবিধানে প্রদত্ত অধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকনের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এ জে মোহাম্মদ আলী, সাবেক মন্ত্রী আমিনুল হক, নিতাই রায় চৌধুরী, আইনজীবী সানাউল্লা মিয়া, তৈমুর আলম খন্দকার ও এ কে এম এহসানুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র: প্রথম আলো
Discussion about this post