ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে গবাদি পশু বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা জারির পরই তার প্রতিবাদে দেশটির একাধিক জায়গায় পালন করা হয় ‘বিফ ফেস্ট’।
রোববার রাতে চেন্নাইয়ের ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির (আইআইটি) ৮০ শিক্ষার্থীর একটি দলও এ আয়োজন করে। তামিলনাড়ুতে গরুর গোশতের ওপর নিষেধাজ্ঞা নেই। এ প্রতিবাদে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরা প্রোগ্রেসিভ স্টুডেন্ট ইউনিয়নের সমর্থক।
শিক্ষার্থীদের দলনেতা বলেন, জনসাধারণের ওপর সাম্প্রদায়িক এজেন্ডা চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে বিজেপি। খবর এনডিটিভির।
শুক্রবার ভারতের কেন্দ্রীয় পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় গবাদি পশু জবাই করে বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। পশুর ওপর নিষ্ঠুরতা প্রতিরোধ শীর্ষক অধ্যাদেশ (রেগুলেশন অব লিভস্টক মার্কেটস) ২০১৭ জারি করে ভারতের বিজেপি সরকার। ওই আদেশে বলা হয়, ‘পশু হাট বা পশু মেলায় বেআইনিভাবে গবাদি পশুর গোশত বিক্রি করার অনুমতি মিলবে না। ধর্মীয় কারণে বলি দেয়ার জন্য বা গোশত খাওয়ার জন্য গরু, মোষ, ষাঁড়, বলদ, বাছুরের মতো পশুগুলো বাজারে বিক্রি করা যাবে না।’
তবে ছাগল ও ভেড়া এই আইনের আওতার বাইরে অর্থাৎ ধর্মীয় কারণে ছাগল বা ভেড়া ব্যবহার করা যেতে পারে। সরকারের দাবি, নতুন এ নিষেধাজ্ঞার ফলে বাংলাদেশে গবাদি পশু পাচারের হার অনেকাংশে কমে যাবে।
কেন্দ্রের এ নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে দেশজুড়েই প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। একে রাজনৈতিক চাল বলে অভিযোগ করেন বিরোধীরা। তামিলনাড়ুর ক্ষমতাসীন দল অল ইন্ডিয়া আন্না দ্রাবিড়া মুনেত্রা কাজাগাম (এআইএডিএমকে) কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জারি করা নতুন এ প্রজ্ঞাপনের ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেনি।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ই পলানিস্বামী বলেন, ‘পুরো আদেশটি না পড়ে আমি কোনো মন্তব্য করব না। গণমাধ্যমের কাছে এখন কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে চাই না।’ সরকারের এ নতুন আদেশে দক্ষিণাঞ্চলে বিশেষ করে কেরালায় তীব্র সমালোচনার ঝড় উঠেছে। ভারতীয় কংগ্রেসের ভাইস প্রেসিডেন্ট রাহুল গান্ধী এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে একে ‘অযৌক্তিক’ ও ‘বর্বরতা’ বলে উল্লেখ করেছেন।
কেন্দ্রীয় সরকারের গরু জবাইয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে শুধু কেরালাতেই প্রায় ৩ শতাধিক বিফ ফেস্টিভালের আয়োজন করা হয়। এসব ফেস্টিভালে বিনামূল্যে রান্না করা গরুর গোশত বিতরণ করা হয়েছে। কেরালা রাজ্যের যুব কংগ্রেসও কানুর এলাকায় প্রকাশ্যে গরু জবাই করে বিফ ফেস্টিভালের আয়োজন করে।
এজন্য যুব কংগ্রেসের বেশ কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। তবে এ ঘটনার সঙ্গে কতজন জড়িত ছিলেন সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো ধারণা পাওয়া যাচ্ছে না। পুলিশ বলছে, যেভাবে গরুটিকে প্রকাশ্যে জবাই করা হয়েছে তাতে জনসাধারণের অসুবিধার সৃষ্টি হয়েছে এবং সেজন্য তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।
এদিকে, কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে একটি চিঠি লিখেছেন।
এতে তিনি লেখেন, ‘কেন্দ্রের এমন সিদ্ধান্ত রাজ্যের অধিকারের ওপর সম্পূর্ণ বেআইনি হস্তক্ষেপ।’ এ ইস্যুতে রাজ্যের সব দলের অংশগ্রহণে একটি বৈঠকের পরিকল্পনা করছেন বিজয়ন। রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী ভি সুনিকুমার বলেন, কেন্দ্রের এ আদেশ পালনের বিরুদ্ধে শুধু আদালতে চ্যালেঞ্জ করার পথই খোলা রয়েছে। আগামী সপ্তাহেই সুপ্রিম কোর্টে এ ইস্যুতে চ্যালেঞ্জ করা হবে বলেও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
সূত্র: যুগান্তর
Discussion about this post