অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
‘বাংলাদেশ এখন সারাবিশ্বের জন্য উন্নয়নের রোল মডেল’- দীর্ঘদিন ধরে এমন প্রচারণাই চালিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সরকারের মন্ত্রী-এমপি ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। আর এ কাজে তাদেরকে সহযোগিতা করছে অনুগত কিছু গণমাধ্যম। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাসভবন গণভবনে বসে বসে প্রতিসপ্তাহেই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রকল্প উদ্বোধন করছেন। আবার যেসব এলাকায় প্রধানমন্ত্রী সফরে যাচ্ছেন সেখানেও ডজন ডজন উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করছেন। এছাড়া শেখ হাসিনা বিভিন্ন দেশে সফরে গিয়েও বিস্ময়কর উন্নয়নের বাণী প্রচার করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব প্রকল্প সবই শেখ হাসিনার নামফলক সর্বস্ব। প্রকল্প নাম দিয়ে মোটা অঙ্কের বরাদ্দ বাজেট দেয়া হচ্ছে। এসব টাকা লুটেপুটে নিচ্ছে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। সারাদেশেই এখন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা শেষ মুহূর্তের লুটপাটে ব্যস্ত। উন্নয়ন প্রকল্পের নামে এই লুটপাটের ব্যবস্থা শেখ হাসিনা নিজেই করে দিচ্ছেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের আলোচিত দুর্নীতি ছিল পদ্মসেতু। সর্বশেষ কানাডার একটি আদালত রায় দিয়েছে যে পদ্মসেতুতে কোনো দুর্নীতির প্রমাণ তারা পায়নি। জানা গেছে, সরকার এমন একটি রায়ের জন্য কয়েকবছর ধরে চেষ্টা করে আসছিল। নেপথ্যে কাজ করেছে শেখ হাসিনার ছেলে জয়, প্রধানমন্ত্রীর অর্থবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী। পক্ষে রায় আনতে সরকার কানাডার একটি ল ফার্মকে কয়েকশ কোটি টাকা দিয়েছে বলেও জানা গেছে।
এরপর পদ্মসেতুর পর আরেকটি ব্যয় বহুল প্রকল্প হল মালিবাগ-মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার। এটার নির্মাণ কাজ ২০১৫ সালের শেষের দিকে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনও পর্যন্ত এটার কাজ শেষ হয়নি। কিছু দিন পর পরই বিভিন্ন অজুহাতে কয়েকশ কোটি টাকা করে এটার নির্মাণ ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে। শুরু থেকে এ পর্যন্ত পাঁচ দফা নির্মাণ ব্যয় বেড়ে পাঁচগুন হয়েছে। সর্বশেষ ফ্লাইওভারের মালিবাগ-মৌচাক অংশের প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য আরও ১০৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা নির্মাণ ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। জানা গেছে, লুটপাট করতেই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ না করে বার বার সময় ও নির্মাণ ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে। আর এ লুটপাটে সরকারের উচ্চপর্যায়ের লোকজন জড়িত বলেও জানা গেছে। জানা গেছে, মালিবাগ-মৌচাক ফ্লাইওভার প্রকল্পের মতো অন্যান্য প্রকল্পেও একইভাবে লুটপাট হচ্ছে।
এদিকে, শেয়ারবাজার থেকে একলাখ কোটি টাকা লুটে নিয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাতের উপদেষ্টা ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমান। আর ড. আতিউরের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চুরি করেছে ১০ লাখ মার্কিন ডলার। জানা গেছে, শেয়ারবাজার ও ব্যাংক চুরির সঙ্গে সরাসরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছেলে জয় জড়িত। তাদের ইশারায়ই এসব লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। কারণ, সিআইডির তদন্ত অনুযায়ী সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশেই এমনটা হয়েছে প্রমাণিত হয়েছে বলে মনে করছেন বিশিষ্টজনেরা। যার কারণে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশে অর্থমন্ত্রী বার বার গড়িমসি করছেন।
রাজনীতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সরকার বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে প্রচারের চেষ্টা করলেও বাস্তবে ঘটছে উল্টোটা। সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের দুর্নীতি-লুটপাটের সংবাদ এখন সারা বিশ্বের মানুষই জানে। মডেল হলে লুটপাট-দুর্নীতির জন্য হতে পারে। উন্নয়নের জন্য নয়।
Discussion about this post