অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বিভিন্ন অপকর্মের মাধ্যমে প্রতিনিদই সংবাদপত্রের শিরোনাম হচ্ছে একসময়ের ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, জমি দখল ও ধর্ষণসহ এমন কোনো অপকর্ম নেই যা তারা করছে না। এসব অপকর্মের মাধ্যমে বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতির ইতিহাসকে ছাত্রলীগ কলঙ্কিত করছে বলে রাজনীতিক বিশ্লেষক ও অন্যান্য ছাত্রসংগঠনের নেতারা মনে করছেন।
তাদের মতে, ছাত্র রাজনীতির মূলধারা থেকে ছাত্রলীগ এখন সম্পূর্ণ বের হয়ে পড়েছে। ছাত্র সমাজের কল্যাণের চেয়ে তারা এখন নিজেদের আখের গোছানোর কাজেই বেশি ব্যস্ত।
জানা গেছে, অতীতে যারা এই ছাত্রসংগঠনটির সঙ্গে জড়িত ছিলেন তারা আজ সবাই বর্তমান ছাত্র লীগের কর্মকাণ্ডের ওপর চরমভাবে ক্ষিপ্ত।
ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের এসব অপকর্ম দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে। বিশেষ করে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা খুন, হত্যা, ধর্ষণ, মারামারি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। দিন দিন তারা বেপরোয়া হয়ে উঠতে থাকে। প্রতিপক্ষ ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা হল ও ক্যাম্পাস ছাড়ার পর আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তখন নিজেরাই মারামারি শুরু করে।
ক্ষমতা গ্রহণের মাত্র তিন মাসের মাথায়ই তারা সরকারকে অস্থির করে তুলে। সরকারের মন্ত্রী-এমপিসহ আওয়ামী লীগের নেতারাও ছাত্রলীগের ওপর চরমভাবে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। এমনকি তাদের কর্মকাণ্ডে ক্ষিপ্ত হয়ে শেখ হাসিনা ২০০৯ সালের ৪ এপ্রিল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক পদ থেকে অব্যাহতি নেন। এর পর থেকে আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
এদিকে, গত ২৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা খারাপ সংবাদের শিরোনাম হবে না বলে শপথবাক্য পাঠ করিয়েছিলেন ওবায়দুল কাদের। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও আর খারাপ খবরের শিরোনাম হবেন না বলে শপথ নিয়েছিলেন। সেদিন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হাত ওপরে তুলে বলেছিলেন ‘আমরা খারাপ খবরের শিরোনাম হব না, আমরা ইতিবাচক খবরের শিরোনাম হব। কিন্তু তাদের এই শপথ দুই দিনও টিকতে পারেনি।
আর সম্প্রতি ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের দুইটি ঘটনায় রাজনৈতিক অঙ্গনসহ বিভিন্ন মহলে বইছে সমালোচনার ঝড়।
চলতি বছরের প্রথম দিকে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছিনতাই করতে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের এক কর্মীসহ দুইজন পুলিশের হাতে আটক হয়। আর আটককৃতদের শাহবাগ থানা থেকে ছাড়িয়ে আনতে গেলে অন্য দুই ছাত্রলীগ কর্মীকেও আটক করে পুলিশ। পরে মুচলেকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। এ ঘটনায় শাহবাগ থানায় দ্রুত বিচার আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আটককৃতরা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা জিয়ার রহমান হলের ছাত্রলীগ কর্মী এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ছাত্র মাহবুব আলম (হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর) এবং ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র পিয়াস চৌধুরী (রায়পুর, লক্ষীপুর)। মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন- ঢাবির জিয়া হলের (কক্ষ-২২৫) ছাত্রলীগ কর্মী ও স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মাহমুদুল হাসান (ধর্মপাশা, সুনামগঞ্জ) এবং একই হলের ছাত্রলীগ কর্মী ও পালি অ্যান্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মিরাজুল ইসলাম (জামালপুর সদর, জামালপুর)।
জানা গেছে, ছিনতাই করতে গিয়ে ছাত্রলীগ কর্মী আটকের ঘটনা প্রকাশের পরই এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ ক্যাম্পাসগুলোতে চলে ব্যাপক সমালোচনা।
সর্বশেষ স্কুলছাত্রীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জীবন চক্রবর্তী পার্থসহ তিনজনের নামে মামলা হয়েছে। আজ বুধবার সকালে ওই স্কুলছাত্রীর মা বাদী হয়ে সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে তাদের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত আরো ৪-৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। আদালতের বিচারক মুহিতুল হক অভিযোগ আমলে নিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। আর সম্প্রতি ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে মাদকবিরোধী সমাবেশ, মানববন্ধন ও র্যালি করলেও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিভিন্ন জায়গায় ইয়াবা আর মাদকের টেন্ডার ছাত্রলীগ নেতারাই নিয়ন্ত্রণ করছে।
জানা গেছে, ছাত্রলীগের এসব অপকর্মে এখন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী ফোরামও ক্ষুব্ধ। দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের প্রশ্রয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা এসব করার সাহস পাচ্ছে বলেও অভিযোগ দলের একাংশের নেতাদের।
Discussion about this post