মহানবী (সা.) কে কটূক্তি করার জের ধরে বিশ্বের দেশে দেশে ফুঁসে উঠছে মুসলমানরা। ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক অব্যাহত আছে বিভিন্ন দেশে। এদিকে পৃথিবীতে সংখ্যায় দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম প্রধান দেশ হিসাবে শেখ হাসিনার ভারতীয় তাবেদার সরকার এনিয়ে নীরব রয়েছে। যদিও জাতিসংঘ ইতোমধ্যে মহানবীকে কটূক্তির বিষয়ে বলেছে, সকল ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা এবং সহনশীলতাকে উৎসাহিত করার নীতি রয়েছে এই আন্তর্জাতিক সংস্থাটির। কিন্তু এখনও ক্ষমতাসীনদের থেকে কোন প্রতিবাদেদ আসেনি।
বাংলাদেশের ইসলামপন্থীদল জামায়াত ইসলামসহ বিভিন্ন দল বিবৃতিতে মহানবীকে (সা.) নিয়ে ভারতীয় সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল বিজেপি মুখপাত্রের কটূক্তির প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে।
মঙ্গলবার এক বিবৃতি প্রকাশের মাধ্যমে দলটির আমীর ডা: শফিকুর রহমান বলেন, সম্প্রতি ভারতে এক টেলিভিশন বিতর্কে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতৃবৃন্দ মহানবী হজরত মোহাম্মাদ সা:-কে নিয়ে যে অশালীন ও কটূক্তিপূর্ণ মন্তব্য করেন তা অত্যন্ত দুঃখজনক। এটি ধর্মীয় মূল্যবোধের ওপর সরাসরি আঘাত। এর মাধ্যমে সারা বিশ্বের মুসলমানদের হৃদয়ে আঘাত করা হয়েছে।
এ সময় তিনি আরো বলেন, ভারতে বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র নুপুর শর্মা ও দিল্লি মিডিয়া অপারেশন টিমের সদস্য নবীন কুমার জিন্দাল মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সা:-কে নিয়ে যে কটূক্তিপূর্ণ মন্তব্য করেছে তা চরম ধৃষ্টতাপূর্ণ। তাদেরকে শুধু বহিষ্কার নয় অবিলম্বে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা উচিত বলে আমরা মনে করি। এ বিষয়ে ভারত সরকার যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে আমরা আশা করি।
বিবৃতিতে তিনি ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে সকল ষড়যন্ত্রের মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধভাবে ভূমিকা পালন করার জন্য মুসলিম বিশ্ব এবং ওআইসিকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান জামায়াত।
প্রধান বিরোধীদল বিএনপি’ও পৃথক বিবৃতিতে বিজেপি নেতার বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। মঙ্গলবার পৃথক পৃথক বিবৃতিতে এই দু’টি দলের পক্ষ থেকে নিন্দা জানানো হয়। বাংলাদেশের সাধারণ নাগরিকদের পক্ষ থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভারতীয় পণ্য বর্জনের আহ্বান জানানো হলেও কোন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে এখনো এমন কোন আওয়াজ উঠেনি। উল্লেখ্য বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র নূপুর শর্মা গত মে মাসের শেষ সপ্তাহে এক টেলিভিশন বিতর্কে হজরত মুহাম্মদ (সা.) ও তাঁর (সা.) স্ত্রী হজরত আয়েশাকে নিয়ে অবমাননাকর ও অশ্লীল কটূক্তি করেন। নূপুর শর্মার সহকর্মী জিন্দাল মহানবী (সা.) কে নিয়ে একটি টুইট করেন।
বিবিসি’র এবিষয়ে এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মহানবী হযরত মুহাম্মদকে (সা.) নিয়ে বিজেপি নেতাদের কটূক্তিতে এতটাই অশ্লীলতা যে, এটা দ্বিতীয়বার আর উল্লেখ করার মত নয়। তাই কটূক্তি গুলো বিবিসি উল্লেখ না করে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে বলে উল্লেখ করা হয় এই সংবাদে।
এদিকে মধ্যপ্রাচ্যসহ মুসলিম প্রধান দেশ গুলোতে ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে ডেকে ইতোমধ্যেই সরকারিভাবে প্রতিবাদ জানানো হয়। পাশাপাশি ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দেয় মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ। এমন কি মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে কর্মরত ভারতীয় নাগরিকদের ফেরত পাঠানোর দাবী উঠেছে।
মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ ক্ষমতাসীন বিজেপির এই দুই কর্মকর্তার ওই কটূক্তির প্রতিবাদে দিল্লির দূতকে তলব করছে, সরকারিভাবে ক্ষমা প্রার্থনার দাবি জানাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় ভারতের ঘনিষ্ঠ মিত্র বিবেচিত সংযুক্ত আরব আমিরাতও নূপুর শর্মা ও নবীন জিন্দলের ওই বিষোদগারের নিন্দায় সামিল হয়েছে।
কূটনৈতিক পর্যায়ে ক্ষোভ শুরু হওয়ার আগে অর্থাৎ রোববার পর্যন্ত বিজেপির ওই দুই নেতা নূপুর ও নবীনের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। দেশে দেশে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি সামাল দিতে হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক নরেন্দ্র মোদীর বিজেপি মুখপাত্র নূপুর শর্মাকে দল থেকে সাময়িক বরখাস্তের ঘোষণা দেয়। একাই সাথে নবীন জিন্দালকে স্থায়ী বহিষ্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়।
মধ্যপ্রাচ্যে কাতার ও কুয়েত প্রথম প্রতিবাদ জানানোর পর এতে একে একে শামিল হয় ইরান, ইরাক, মালদ্বীপ। মহানবী (সা.) কে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্যের নিন্দা জানিয়েছে অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি)।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সোমবার জানায়, বিজেপি কর্মকর্তারা নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধের পরিপন্থী কাজ করেছেন।
এর আগে কুয়েত, কাতার, সৌদি আরব, ইরান, পাকিস্তান এবং আরো কয়েকটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ বিজেপি নেতাদের মন্তব্যের প্রতিবাদে আনুষ্ঠানিক তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে।
রোববার বিজেপি নেতাদের বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্যের জন্য ‘প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনা’ করার দাবি জানায় কাতার। ভারতের উপ-রাষ্ট্রপতি ভেনকাইয়া নাইডু বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়ানোর জন্য কাতার সফরের সময় দেশটি এই দাবি জানায়।
কায়রোভিত্তিক আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় বিজেপি নেতাদের ওই মন্তব্যকে ‘সত্যিকারের সন্ত্রাসবাদ’ হিসেবে অভিহিত বলে আখ্যায়িত করেছে। এর ফলে ‘পুরো দুনিয়া ভয়াবহ সঙ্কট ও যুদ্ধে নিমজ্জিত হতে পারে’ এমন আশঙ্কা ব্যক্ত করা হয় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে।
সৌদি আরবভিত্তিক মুসলিম ওয়ার্ল্ড লিগ জানায়, এ ধরনের মন্তব্য ধর্মীয় ‘বিদ্বেষ উস্কে’ দিতে পারে। এছাড়া উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদ (জিসিসি) নূপুর শর্মার মন্তব্যের নিন্দা করে।
বাহরাইন, কুয়েত, ওমান, কাতার, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ জিসিসির সাথে ২০২০-২১ অর্থবছরে ভারতের বাণিজ্য ছিল প্রায় ৯০ বিলিয়ন ডলার।
ভারতের প্রবাসী শ্রমিকদের একটি প্রধান গন্তব্য হলো জিসিসিভুক্ত দেশগুলো। ভারতের এক কোটি ৩৫ লাখ প্রবাসী শ্রমিকের মধ্যে ৮৭ লাখই থাকে জিসিসিভুক্ত দেশগুলোতে কাজ করে।
তাছাড়া কুয়েত তার মোট খাবারের ৯৫ ভাগই আমদানি করে ভারত থেকে। নূপুরের ওই মন্তব্যের পর কুয়েতের সুপারমার্কেট শ্রমিকেরা ভারতীয় চা ও অন্যান্য পণ্য জড়ো করে বর্জনের ডাক দিয়ে প্রতিবাদ জানায়।
এদিকে, মহানবী সা.-কে নিয়ে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি মুখপাত্র নূপুর শর্মার কটূক্তির প্রতিবাদে কুয়েতের সুপারমার্কেট থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে ভারতীয় পণ্যসামগ্রী। নূপুরের মন্তব্যকে ‘ইসলামভীতি’র উদাহরণ বলে আখ্যা দিয়েছেন কুয়েতের ওই সুপারমার্কেট কর্তৃপক্ষ। ইতিমধ্যে এ বিষয়ে সৌদি আরব, কাতার, কুয়েতের মতো উপসাগরীয় দেশসহ ইরানের ভারতীয় দূতকে ডেকে পাঠানো হয়েছে।
দুনিয়া ব্যাপী ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার পর সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল বিজেপির পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, দলটি সমস্ত ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। কোনো ধর্ম বা সম্প্রদায়কে অবমাননা করার আদর্শেও বিশ্বাসী নয়। নূপুর নিজে বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, ‘আমার মন্তব্যের জেরে যদি কারো ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত লাগে, তবে নিঃশর্তভাবে তা প্রত্যাহার করছি।’
সূত্র: আমার দেশ
Discussion about this post