অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
পদ্মা সেতু। নাম শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে স্প্যানের কথা। এটি এমন একটি সেতু যার প্রতিটি স্প্যানে খবর প্রকাশ হয়েছে সব গণমাধ্যমে। শুধু তাই নয় সেতু তৈরীর শুরু থেকে চলছে নানা বিতর্ক। ধীর গতিতে কাজ করে মেয়াদ বাড়িয়ে একের পর এক লুট হয়েছে শত শত কোটি টাকা। এমনকি পদ্মা সেতু কেলেঙ্কারি তে জানা যায় যে সেতু নির্মাণ কোম্পানির এসএনসি-লাভালিনের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থের জন্য নির্মাণ চুক্তির বিনিময়ে অর্থের দাবি জানায় যাদের অনেকে বাংলাদেশের আওয়ামী লীগের সরকারের সাথে জড়িত ছিল। এসবের পরও পদ্মা সেতু দৃশ্যমান হয়েছে।
পদ্মাসেতুর অনিয়েম দূর্নীতি নিয়ে খবর না প্রকাশ হলেও প্রকল্পের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত অসংখ্য সংবাদ হয়েছে। হয়েছে সম্পাদকীয়, উপসম্পাদকীয়; লেখা হয়েছে বিশ্লেষণ। প্রকাশিত হয়েছে ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন। বাংলাদেশের পত্রিকা, টেলিভিশন, অনলাইন, ফেসবুক পেজ, ইউটিউব, ব্লগ মিলে কত খবরের উৎস হয়েছে পদ্মা সেতু? সার্চ ইঞ্জিন গুগল বলছে, পদ্মা সেতু নিয়ে গত কয়েক বছরে অন্তত আড়াই কোটি প্রতিবেদন হয়েছে।
গুগলে ইংরেজিতে ‘পদ্মা ব্রিজ নিউজ’ লিখে সার্চ দিলে এক কোটি ২৩ লাখ খবরের লিংক পাওয়া যায়। ইংরেজিতে শুধু ‘পদ্মা ব্রিজ’ লিখলে ৬০ লাখ ১০ হাজার খবরের লিংক পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে ছবি, ভিডিও, ওয়েবসাইট থাকলেও বেশির ভাগই সংবাদ।
গুগলে বাংলায় ‘পদ্মা সেতুর সংবাদ’ লিখে সার্চ দিলে ১৪ লাখের মতো খবরের লিংক পাওয়া যায়। আর বাংলায় ‘পদ্মা সেতুর নিউজ’ লিখে সার্চ দিলে পাওয়া যায় ১৬ লাখ ২০ হাজার লিংক। শুধু ‘পদ্মা সেতু’ লিখলে পাওয়া যায় ৩৬ লাখ লিংক। এই লিংকগুলোতে পদ্মা সেতু নিয়ে করা প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রচলিত গণমাধ্যমের বাইরের খবরও এসব লিংকে পাওয়া যায়।
তথ্য-প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির কালের কণ্ঠকে দেয়া এক সাক্ষাতে বলেন, গুগলের তথ্য ভাণ্ডার খুবই শক্তিশালী। তাই গুগলের এসব সংখ্যাগত তথ্য পুরোপুরি গ্রহণযোগ্য। তবে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে লেখা ছাপানোর সময় এক ধরনের কি-ওয়ার্ড ব্যবহার করা হয়। গুগলে সেসব কি-ওয়ার্ড দিয়ে সার্চ করা হলে তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়।
পদ্মা সেতুর একেকটি কি-ওয়ার্ড দিয়ে সার্চ করলে গুগলের ফলাফলে ভিন্ন ভিন্ন খবরের সংখ্যা আসে। তাতে মোট খবরের সংখ্যা কি জানা সম্ভব—এমন প্রশ্নে সুমন আহমেদ সাবির বলেন, গুগল কিভাবে তাদের ডাটাবেস তৈরি করে তা তারা প্রকাশ করে না। তবে যেহেতু প্রতিটি কি-ওয়ার্ড স্বতন্ত্র এবং তারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে সার্চের ফলাফল জানায় তাতে পদ্মা ব্রিজ নিউজ, পদ্মা ব্রিজ, পদ্মা সেতুর সংবাদ, পদ্মা সেতু—এই কি-ওয়ার্ডগুলোর সার্চের ফল আলাদা হওয়ারই কথা। তাই এগুলো যোগ করলে সম্ভাব্য মোট সংখ্যাটা পাওয়া যায়।
প্রচলিত সংবাদের বাইরেও রয়েছে নাগরিক সাংবাদিকতা। পদ্মা সেতু নিয়ে তৈরি হয়েছে লাখো ইউটিউব ভিডিও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হয়েছে বেশুমার লেখালেখি। এসবের ছড়াছড়ির দেখা পাওয়া যায় অন্তরজালজুড়ে। এর সঠিক সংখ্যা জানা কঠিন। আবার প্রচলিত সংবাদমাধ্যমের বাইরে যেসব কনটেন্ট তৈরি করা হচ্ছে সেগুলোর তথ্যের সত্যতা নিয়েও প্রশ্ন থেকে যায়।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের ডিজিটাল গভর্নেন্স ও ইমপ্লিমেন্টেশন অধিশাখার সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্ট মো. নবীর উদ্দীন বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে ইউটিউবে আনুমানিক ১০ লাখের মতো ভিডিও রয়েছে। এ ধরনের ভিডিও পদ্মা সেতুর প্রচারে সাহায্য করলেও অনেক ক্ষেত্রে রয়েছে তথ্যবিভ্রাট। এগুলো ফ্যাক্ট চেকিংয়ের মাধ্যমে পরীক্ষা করার সুযোগ আছে।
কয়েক বছর ধরে নিয়মিত পদ্মা সেতুর কাজের অগ্রগতির তথ্য খবরে তুলে ধরেছেন পেশাদার সাংবাদিকরা। সে সব খবরে যেমন হাস্যরসও হয়েছে তেমনি হয়েছে তুমুল সমালোচনা।
প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি আনোয়ার হোসেন পদ্মা সেতু নিয়ে লিখেছেন বহু প্রতিবেদন। এক সেতুতে কেন এত খবর—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা অনলাইনে লক্ষ করেছি, পাঠক পদ্মা সেতুর নিউজ বেশি পড়েন। ফলে অনলাইনে পাঠক আকৃষ্ট করতেও প্রকল্পের অগ্রগতির প্রতিটি তথ্য নিয়ে প্রতিবেদন করা হয়েছে। সেতুর পাইলিং, স্প্যান বসানো এবং নদীশাসন কোনো কিছুই প্রতিবেদন থেকে বাদ যায়নি। ’
পদ্মা সেতু নিয়ে যেমন লাখ লাখ খবর হয়েছে, তেমনি অনেক খবর নিয়ে মাঝেমধ্যে হাস্যরসও সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিটি পাইলিং, পিলার বা স্প্যান বসানোর পর সংবাদ হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একে ‘পাইলিং সাংবাদিকতা’ ‘স্প্যান সাংবাদিকতা’ বলে ট্রল করা হয়েছে। ট্রল হচ্ছে এখনো।
Discussion about this post