অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
অবৈধ সরকারের অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার দলের নেতারা যদিও দাবি করছেন যে, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন বিশ্বের জন্য রোল মডেল। কিন্তু দেশের অর্থনীতির বাস্তব অবস্থা সম্পূর্ণ ভিন্ন। ক্ষমতাসীন দলের এক যুগে দুর্নীতি-লুটপাট ও পাচারের মাধ্যমে সরকারের লোকজন দেশের অর্থনীতির মেরুদন্ড একেবারে পঙ্গু করে দিয়েছে। এক কথায় বললে বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন বেলুনের মতো। বেলুনের যেকোনো সময় শেখ হাসিনার অর্থনীতির চাকা ফুটুস হয়ে যেতে পারে।
বিশেষ করে দেশের অর্থনীতির বড় খাত হল ব্যাংকিং সেক্টর। গুরুত্বপূর্ণ এই সেক্টরে দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে লুটপাট, জালিয়াতি, আত্মসাত ও পাচারের ঘটনা। এর মধ্যে রাষ্ট্রয়াত্ত ব্যাংকগুলো দিন দিন ফুতুর হয়ে যাচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী ও ব্যবসায়ীরা ব্যাংকগুলো থেকে মোটা অংকের লোন নিয়ে ফেরত না দেয়ায় চরম আমানত সংকটে পড়েছে অনেকগুলো ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, বর্তমানে ব্যাংকিং সেক্টরের খেলাপি ঋণ হয়েছে ১ লাখ ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। কিন্তু খেলাপি ঋণ আদায়ের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ না করে কেন ্দ্রীয় ব্যাংক শুধু ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন ধরণের সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে। যার কারণে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে।
ইন্টারন্যাশনার মনেটারি ফান্ড (আইএমএফ) বলেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক খেলাপি ঋণের যে হিসাব দেখিয়েছে সেটা আসল তথ্য নয়। আসল খেলাপি ঋণের পরিমাণ দ্বিগুন হবে। খেলাপি ঋণের প্রকৃত তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশ করছে না। যেটা বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টরের জন্য বড় ধরণের হুমকি।
তারপর, খেলাপি ঋণ কম দেখাতে বাংলাদেশ ব্যাংক পাইকারি ধরে লোন অবলোপন করছে। কাগজে-কলমে খেলাপি আড়াল করতে ব্যাংকগুলো ‘ঋণ অবলোপন’ বা ‘রাইট অফ’ কৌশল বেছে নিয়েছে। একই সঙ্গে গণহারে খেলাপি ঋণের সুদও মওকুফ করছে ব্যাংকগুলো।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২১ সালে অবলোপনের মাধ্যমে ব্যাংকের ব্যালেন্স শিট থেকে দুই হাজার ৪৪১ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ বাদ দেওয়া হয়েছে। এর আগের বছরের তুলনায় যা আড়াই গুণ বেশি। ২০২০ সালে অবলোপন করা হয় ৯৭১ কোটি টাকা।
২০১৯ সালে কাগজে–কলমে খেলাপি ঋণ বাদ দিতে অবলোপন করা হয়েছিল দুই হাজার ৫৯৭ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে এর পরিমাণ ছিল তিন হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। সবমিলিয়ে গত চার বছরে ব্যাংকগুলো অবলোপনের মাধ্যমে ৯ হাজার ৩৭৭ কোটি টাকার মন্দ ঋণ ব্যালেন্স শিট থেকে বাদ দিয়েছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ঋণ আদায় না করে যদি ‘রাইট অফ’ কৌশল বেছে নেওয়া হয় তাহলে একসময় ব্যাংকের মূলধনও শেষ হয়ে যায়। তাই এটাকে ভালোভাবে নেওয়া যাচ্ছে না। ঋণ অবলোপনের নীতিমালা শিথিল করায় খেলাপিরা উৎসাহিত হয়েছেন। এখন তাদের ঋণ পরিশোধ না করার প্রবণতা বেড়ে গেছে। অন্যদিকে, ব্যালেন্স শিট ভালো দেখাতে ব্যাংকগুলো এ সুবিধা নিতে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে। ফলে আড়াল হচ্ছে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যাংকগুলো এখন রাজনৈতিক চাপে ভুয়া ব্যবসায়ীদের লোন দিতে বাধ্য হচ্ছে। যারা ঋণ খেলাপি তাদের সবার ক্ষমতাসীন দলের সাথে সম্পর্ক আছে। যার কারণে তারা লোন পরিশোধ না করতে ইচ্ছেকৃতভাবে খেলাপি হচ্ছে। এরপর সরকারের চাপের কারণে, অনেক লোন প্রকাশ করতে পারছে না বাংলাদেশ ব্যাংক। যে টাকাগুলো আর কখনো ব্যাংকে ফিরে আসবে না।
Discussion about this post