দীর্ঘ সময় অভিযানের নাটক সাজিয়ে অবশেষে গ্রেফতার হলো আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী ব্যবসায়ী হেলেনা জাহাঙ্গীর।
আজ রাত সোয়া ১২টার দিকে তাঁকে আটক করে র্যাব সদর দপ্তরে নেওয়া হয়।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার আল মঈন এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, হেলেনা জাহাঙ্গীরের বাসা থেকে কয়েক বোতল মদ, বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য, বন্য প্রাণীর চামড়া ও ওয়াকিটকি সেট উদ্ধার করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে র্যাবের একটি দল রাত আটটার দিকে রাজধানীর গুলশান ২ এর ৩৬ নম্বর সড়কে হেলেনা জাহাঙ্গীরের বাসায় অভিযান শুরু করে। র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল কে এম আজাদ বলেন, হেলেনা জাহাঙ্গীরের বাসা থেকে তাঁকে রাত সোয়া ১২টার দিকে র্যাব সদর দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হয়। কিছু বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানতে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
সম্প্রতি হেলেনা জাহাঙ্গীর উপকমিটির সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে না পারার অযুহাত দেখিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কারের ৪ দিন পরেই হঠাৎ আজ বৃহস্পতিবার তার বাসায় অভিযানের নাটক সাজিয়ে তাকে গ্রেফতার করে।
তবে বহিষ্কারের পরে হঠাৎ তার বাসায় অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার কেন এ নিয়ে জনমনে রয়েছে প্র্রশ্ন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে মুখ খোলার আগেই আওয়ামীলীগ নেত্রী হেলেনা জাহাঙ্গীরের বাসায় এই অভিযান নাটক সাজিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
দেখা গেছে, গতকাল ফেসবুক লাইভে এসে আওয়ামী লীগের বিরেুদ্ধে অনেক অভিযোগও করেছেন। এই ফেসবুক লাইভ কি কাল হলো তার?
ফেসবুক লাইভে এসে তিনি আবেগঘন হয়ে শেখ মুজিবের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আওয়ামী নেতা এমপিদের অপকর্মের বিষয়ে তুলে ধরেন। এছাড়া ক্ষমতাসীনদের মন্ত্রী থেকে শুরু করে সকল পর্যায়ে তার রয়েছে সম্পর্ক। তিনি বলেন, আমার একটি টেলিভিশন আছে ভুর্তকি দিয়ে আওয়ামী লীগের জন্য চালিয়ে যাচ্ছি। তার পরেও তাকে কেন পদ থেকে বাতিল করা হলো বলে আবেগী হয়ে জানতে চান ওই নেত্রী।
আওয়ামী লীগের ওই নেত্রী কান্নাজড়িত কন্ঠে ফেসবুক লাইভে এসে প্রশ্ন তোলেন, ব্যবসায়ীরা কি বাটপার? ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করে বলেই আজ বাংলাদেশ সয়ংসম্পন্ন। আমরা ব্যবসায়ীরা কি রাজনীতি করার অধিকার রাখিনা?
নাজমা আক্তারের কথা উল্লেখ করে ওই নেত্রী বলেন, আমাকে অফলাইনে অপমান করেছে। আমাকে গ্রেফতার করার জন্য বলেন। একজন ব্যবসায়ীকে কিভাবে গ্রেফতার করতে বলতে পারেন। এছাড়া আওয়ামী লীগের নেতারা যে তার প্রতি হেনস্তা করেছে সে সব পুরুষদের নাম উচ্চরণ না করে অশালীন ভাষা ব্যবহার করেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের একটি গোষ্টি ২০১২ সাল থেকে আমার পিছে লেগে আছে। বিভিন্ন সময় আমাকে হেনস্থা করে আসছে। তাকে যদি অন্যকোন রাজনৈতি দলের সাথে সম্প্রিক্ত দেখাতে পারে তাহলে সে পদত্যাগ করবেন বলেও জানেন।
লাইভে অনুষ্ঠানে কান্নাজড়িত কন্ঠে একাধিকবার একটা গোষ্টি তার বিরুদ্ধে লেগেছে বলে অভিযোগ করেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ক্ষমতাসীনরা নিজেদের গোমর ফাঁসের ভয়ে হেলেনা জাহাঙ্গীরকে গ্রেফতার করেছে। ওই নেত্রী গতকাল লাইভে এসে বার বার পুরুষ মানুষদের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে যে একটি মহল লেগে আছে বলেও উল্লেখ করেন। এসব তথ্য বেরিয়ে আসার ভয়ে তাকে গ্রেফতার করেছে সরকার।
তারা বলেন, এর আগে পাপিয়া, সাহেদসহ বিভিন্ন সময় কোন অযুহাতে চুনোপুঁটিদের ধরে জেলখানায় পরেছে যাতে রাঘববোয়ালদের তথ্য বেরিয়ে না আসে। আওয়ামী লীগের মন্ত্রী থেকে শুরু করে সর্বমহলে হেলেনার যোগাযোগ ছিলো। যার কারনে সে উন্মুক্ত থাকলে বেরিয়ে আসতে পারে নানা তথ্য। এজন্য তড়িঘড়ি করে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
উল্লেখ্য, গত রোববার দলের মহিলাবিষয়ক কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্যপদ থেকে তাকে অব্যাহতি দিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। জয়যাত্রা টেলিভিশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও হেলেনা গত ১৭ জানুয়ারি উপকমিটির সদস্য হয়েছিলেন। তার আগে ২০২০ সালের ডিসেম্বরের দিকে তিনি কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হন।
Discussion about this post