অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
করোনার ক্ষতি মোকাবেলায় গত বছর এপ্রিল মাসে বিভিন্ন সেক্টরের জন্য ১ লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকার ২৩টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারের এই প্রণোদনার টাকা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরা শেখ হাসিনার এই প্রণোদনার টাকা পাচ্ছে না বলেও বিস্তর অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, সাধারণ কৃষক ও নিম্ন আয়ের মানুষ সরকারের প্রণোদার টাকা পাচ্ছে না। অথচ তারাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জানা গেছে, করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য শেখ হাসিনা ২০ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা ঘোষণা করেছিলেন। এই প্রণোদনা বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদেরকে ঋণ হিসেবে এই টাকা নিতে হচ্ছে। জানা গেছে, ১৬ হাজার কোটি টাকার বেশি বিতরণ হয়ে গেছে। কিন্তু প্রশ্ন হল-প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা কি লোন পাচ্ছে?
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ৯৫ ভাগ ব্যবসায়ী সরকারের এই প্রণোদনার টাকা পায়নি। ব্যাংকের সাথে পূর্ব লেনদেন না থাকায় ব্যাংকগুলো তাদেরকে ঋণ দেয়নি। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর ব্যাংকে গেলেই কর্তৃপক্ষ তাদেরকে বিভিন্ন শর্ত দেয়। ছোট ব্যবসায়ীরা ব্যাংকের এসব শর্ত মেনে টাকা আনাও সম্ভব না। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য শেখ হাসিনা প্রণোদনা ঘোষণা করলেও আসলে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা টাকা পাচ্ছে না। বড় বড় ব্যবসায়ীরাও নিয়ে গেছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের এই প্রণোদনার টাকা। সরকারের প্রণোদনার টাকা না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা দিন দিন আরও ক্ষতির মুখে পড়ছে।
এরপর, করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রান্তিক কৃষকদের জন্য শেখ হাসিনা ৫ হাজার কোটি প্রণোদনা ঘোষণা করেছিলেন। সেটাও বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কৃষকদেরকে লোন হিসেবে ব্যাংক থেকে এই টাকা নিতে হচ্ছে। ইতিমধ্যে ৪ হাজার কোটি টাকা বিতরণ হয়ে গেছে। কিন্তু প্রণোদনার এই টাকা নিয়েও উঠছে বিস্তর অভিযোগ।
এদিকে নিম্ন আয়ের পেশাজীবীদের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে ৩ হাজার কোটি টাকা প্যাকেজ দিয়েছিল, তার প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা বিতরণ হয়েছে। ক্ষুদ্রঋণ সংস্থার মাধ্যমে বিতরণ করা এই ঋণের সুদহারও ৯ শতাংশ। ঋণ পেয়েছেন প্রায় সাড়ে ৩ লাখ পেশাজীবী।
তবে দেশে প্রান্তিক পর্যায়ের যে উদ্যোক্তা শ্রেণি রয়ে গেছে, তাদের বেশির ভাগ এখনো অর্থায়নের বাইরে রয়েছে। এ জন্য বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) মাধ্যমে ১০ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার, এখনো তা আলোর মুখ দেখেনি।
সূত্র বলছে, দেশের কৃষি প্রধান অঞ্চলের প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা শেখ হাসিনার এই প্রণোদনার টাকা পাচ্ছে না। লবিং. ঘুষ আর তদবির করে স্বচ্ছল ও অর্থশালী ব্যক্তিরা ব্যাংক থেকে প্রণোদনার এই টাকা তুলে নিচ্ছে। জানা গেছে, এলাকার মেম্বার-চেয়ারম্যানদের তদবিরে এই প্রণোদনার টাকা দিচ্ছে বিভিন্ন ব্যাংক।
তারপর, নিম্ন আয়ের পেশাজীবী মানুষের জন্য শেখ হাসিনা ৩ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা ঘোষণা করেছিলেন। এই বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন এনজিও এর মাধ্যমে বিতরণ করছে। ইতিমধ্যে এই টাকার প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা বিতরণ হয়ে গেছে। এখন প্রশ্ন হল-নিম্ন আয়ের পেশাজীবীদের কতজন শেখ হাসিনার এই টাকা পেয়েছে?
অর্থনীতিবিদরা বলছেন-সরকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, কৃষক ও নিম্ন আয়ের পেশাজীবীদের জন্য প্রণোদনা ঘোষণা দিলেও এসব টাকা পাচ্ছে মূলত বড় লোক আর বড় বড় ব্যবসায়ীরা। ব্যাংক আর লোন নির্ভর করার কারণে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরা সরকারের এসব প্রণোদনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সরকারি দলের লোকজনই মূলত প্রণোদনা থেকে বেশি সুবিধা নিচ্ছে।
Discussion about this post