অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে ব্যাপক দমন-নিপীড়িনকারী সরকার-রাষ্ট্রপ্রধানদের এই তালিকায় নতুনভাবে যুক্ত হয়েছেন দু্ইজন নারী সরকারপ্রধান, যাদের একজন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অন্যজন হলেন হংকংয়ের বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চলের প্রধান নির্বাহী কেরি লাম। গণমাধ্যমের ওপর ভয়াবহ নিপীড়নের জন্য প্রথমবারের মতো আরএসএফের তালিকায় ঠাঁই পাওয়া দুই নারীই এশিয়ার।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ব্যাপকহারে দমন-পীড়নসহ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন এমন ৩৭ জন রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধানের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক সংগঠন “রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স” বা আরএসএফ। স্বৈরাচারীর তালিকার পর এবার গণমাধ্যমের শত্রুর তালিকায় উঠে এলো বাংলাদেশের কথিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম।
শেখ হাসিনা সম্পর্কে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পক্ষে সক্রিয় আরএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী গণমাধ্যমের ওপর নিপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছেন। ২০১৮ সালে একটি ডিজিটাল সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করেন তিনি। এই আইন ব্যবহার করে ৭০ জনেরও বেশি সাংবাদিক এবং ব্লগারদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থা গ্রহণ করা এই তালিকায় ২০২১ সালে প্রথমবারের মতো যুক্ত হয়েছেন ১৭ জন। এমন তালিকা ৫ বছর পরপর প্রকাশ করে আরএসএফ। এর আগে ২০১৬ সালে এমন তালিকা প্রকাশ করেছিল ফ্রান্সভিত্তিক এই সংগঠন।
তালিকাভুক্ত সব রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানই নিজ নিজ দেশে গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করতে নানা ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা পদদলিত করেছেন। তারা সাংবাদিকদের নির্বিচারে কারাগারে পাঠান বা তাদের বিরুদ্ধে সহিংসতায় প্ররোচিত করার মিথ্যা অভিযোগ তোলেন । এমনকি সাংবাদিকদেরকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে হত্যার জন্য চাপও দেন। যদিও নিজেদের হাত সরাসরি রক্তে রঞ্জিত করে না এসব নেতৃবৃন্দ।
সাংবাদিকদের নিপীড়নকারী এসব দেশের অবস্থা দুটি রঙের মাধ্যমের প্রকাশ করেছে আরএসএফ। এর মধ্যে ১৯টি দেশকে লালচিহ্ন দিয়ে সাংবাদিকদের জন্য “খারাপ দেশ” হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এছাড়া ১৬টি দেশকে কালো চিহ্ন দিয়ে দেশগুলোর অবস্থা “খুব খারাপ” হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ।
প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, গণমাধ্যমের ওপর নিপীড়নকারী দেশগুলোর শাসকদের গড় বয়স ৬৬ বছর। অত্যাচারী শাসকদের এক-তৃতীয়াংশ (১৩ টি দেশ) এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের।
নিঃসন্দেহে এই তালিকায় নতুন অন্তর্ভূক্তদের মধ্যে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য হলেন সৌদি আরবের ৩৫ বছর বয়সী রাজপুত্র মোহাম্মদ বিন সালমান। সৌদি রাজতন্ত্রের সমস্ত ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু তিনি এবং দেশটিতে তিনি গণমাধ্যমের কোনো স্বাধীনতা সহ্য করেন না। তার দমনমূলক পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে গুপ্তচরবৃত্তি এবং হুমকি, যা কখনও কখনও অপহরণ, নির্যাতন এবং অন্যান্য কল্পনাপ্রসূত কার্যকলাপের দিকে পরিচালিত করে। জামাল খাসগোজির ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড এর একটি নিকৃষ্ট দৃষ্টান্ত।
গণমাধ্যমের শত্রু’ এসব রাষ্ট্রপ্রধানদের কয়েকজন দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে নিজ দেশ শাসন করছেন। তালিকাভুক্ত অন্যরা যুক্ত হয়েছে কিছুদিন আগে। এর মধ্যে কেরি লাম ২০১৩ সাল থেকে চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংয়ের পুতুল হিসাবে প্রমাণিত হন এবং এখন তিনি গণমাধ্যমের প্রতি তার নিপীড়ননমূলক নীতির প্রকাশ্য সমর্থন করছেন। গত ২৪শে জুন হংকংয়ের শীর্ষস্থানীয় স্বাধীন পত্রিকা অ্যাপল ডেইলি এবং ২০২০ আরএসএফ প্রেস ফ্রিডম বিজয়ী জিমি লাইকে কারাগারে পাঠান।
Discussion about this post