জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার মিশেল বাচেলেত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পুনর্নিরীক্ষণ করতে আহবান জানিয়েছেন বাংলাদেশ সরকারকে। সেই সঙ্গে মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর তদন্ত যাতে ‘দ্রুত, স্বচ্ছ ও স্বাধীন’ ভাবে হয়, তা নিশ্চিত করারও আহবান জানান তিনি। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার হয়ে মুশতাক নয়মাস যাবৎ কারাগারে ছিলেন। সে অবস্থায় তিনি মারা যান।
সরকার অবশেষে এই আইনে কিছু পরিবর্তন আনতে রাজি হবে বলে মনে হচ্ছে। তবে তা আবশ্যিক পরিবর্তনের ধারে কাছেও যাবে কিনা তা অনিশ্চিত। মনে রাখা প্রয়োজন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে আগের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬-এর সমস্যাগুলো মেটাবার কথা ছিল। কিন্তু নতুন আইনও একইভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে; বরং বলা চলে এর প্রয়োগ আগের আইনের চেয়ে অনেক বেশি দমনমূলক।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সরকারের প্রয়োজনীয় একটি স্বার্থ রক্ষার কাজ করে। তা হলো মানবাধিকার দমন বিষয়ে যারা কথা বলে বা সরকারের বৈধতা এবং দুর্নীতি নিয়ে যারা প্রশ্ন তোলে, তাদের কণ্ঠরোধ করা। আইনটির ব্যবহার তাই সরকার বন্ধ করতে চাইবে না।
আইনটির পরিধি কমাবার প্রয়োজন বাদ দিয়ে চিন্তা করলে, সবচেয়ে জরুরি যে সংস্কার আসা দরকার তা হলো, বিচার পূর্ববর্তী সব ধরনের কারাবাস বন্ধ করা। যদি পুলিশের বিবেচনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত কোন পোস্টকে ডিজিটাল আইনের আওতায় বিচারযোগ্য মনে হয়, সেক্ষেত্রে যে ব্যক্তি এটি পোস্ট করেছেন, তাকে গ্রেফতারের প্রয়োজনটা কোথায়? বিচার শুরুর আগে তাকে আটকে রাখলে কী কোনো উপকার হবে তদন্ত প্রক্রিয়ায়? বাংলাদেশে এই কাজটা করা হয় শুধুমাত্র হেনস্তা ও নির্যাতনের উদ্দেশ্যে। এবং এর ফল হিসেবে মারাত্মক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
মুশতাক মৃত্যুর তদন্ত “স্বচ্ছ ও স্বাধীন” হবে তেমন সম্ভাবনা ক্ষীণ। স্বচ্ছ ও স্বাধীন বলে কিছুর অস্তিত্ব বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে নেই!
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার বাচেলেত অবশ্য আরও দুটি দাবি জানিয়েছেন, যেগুলো নিয়ে তেমন কথা হয়নি, কিন্তু দাবি দুটি গুরুত্বের দাবিদার।
প্রথমত, বাচেলেত এই আইন স্থগিত করার আহবান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের উচিৎ, অবিলম্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রয়োগ স্থগিত করা।’
দ্বিতীয়ত, এবং অধিক গুরুত্বপূর্ণ যে দাবি তিনি করেছেন, তা হলো এই আইনের অধীনে আটক সকল ব্যক্তির মুক্তি। ‘নিজেদের কথা ও মত প্রকাশের অধিকার চর্চার কারণে যাদেরকে এই আইনের অধীনে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের আবশ্যিকভাবে মুক্তি দিতে হবে,’ বলেছেন বাচেলেত।
এসব দাবি মেনে নেবার কোন লক্ষণ বাংলাদেশ সরকার দেখায়নি।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনারের এই শক্ত বিবৃতি একটি আশাজনক ঘটনা। কিন্তু এই বিবৃতি যেন শুধুমাত্র সুন্দর কথা হয়ে না থাকে এবং একে যেন উপেক্ষা করা না যায় তা নিশ্চিত করতে কী করবেন হাই কমিশনার? জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অন্যান্য সদস্যরা কী আসলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে আটকদের মুক্তির জন্য এবং উল্লেখযোগ্য সংস্কারের আগ পর্যন্ত আইনটি স্থগিত করতে বাংলাদেশের উপর চাপ সৃষ্টি করবে?
তথ্য সূত্র: নেত্র নিউজ
Discussion about this post