অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল জাজিরার আলোচিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ‘অল দ্যা প্রাইমিনিস্টার্স ম্যান’ প্রকাশের পর ক্ষমতাসীন দলের নেতা কর্মী থেকে শুরু করে আওয়ামী পন্থী সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী সবাই মিথ্যা প্রমাণের চেষ্টা করে গেছে। কিন্তু সব মহলের অপতৎপরতা ব্যর্থ করে অবশেষে সত্য প্রমাণিত হল। প্রথম আলো পত্রিকার একটি প্রতিবেদনই প্রমাণ করেছে যে আল জাজিরার রিপোর্টটি সত্য।
আল জাজিরার প্রতিবেদনটি প্রকাশের পরই শেখ হাসিনার দালাল খ্যাত সাংবাদিকরা বিভিন্ন টকশো, স্ট্যাটাস ও পত্রিকায় লেখালেখি করেছেন যে, আল জাজিরার এই রিপোর্ট কোনো অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় পড়ে না। এটা কোনো সাংবাদিকতা নয়। আল জাজিরা বিএনপি-জামায়াতের টাকা খেয়ে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এটা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।
তাদের এসব আপত্তির কারণ ছিলো আল জাজিরা তাদের এই প্রতিবেদনে সেনাপ্রধান আজিজের তিন ভাইয়ের সাথে শেখ হাসিনাকে জড়িত করেছে। তাদেরকে হাসিনার লোক বলে উল্লেখ করেছে। কিন্তু আজিজের সন্ত্রাসী তিন ভাইয়ের ব্যাপারে তারা কোনো আপত্তি তুলতে পারেনি। তবে, আজিজের সন্ত্রাসী তিন ভাই যে আসলেই হাসিনার লোক সেটাও এখন প্রমাণ হয়ে গেছে।
প্রথম আলোর প্রতিবেদনে দেখা গেছে, আজিজের দুই ভাই হারিস ও আনিসকে গোপনে সাজা মাফ করে দিয়েছিল শেখ হাসিনার সরকার। ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ রাতে সরকার তাদের সাজা মাফ করেছিল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, তারা এই বিষয়ে কিছুই জানতেন না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এটাও বলেছেন যে, কোনো পলাতক ব্যক্তি আইনত সহায়তা পেতে পারে না। কাজটি তারা এতই গোপনে করেছিল যে, গণমাধ্যমও বিষয়টি জানতো না।
গত সপ্তাহে এই তথ্য প্রকাশের পর সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়ে যায়। দেশের আইনজ্ঞরাও বলছেন-কোনো পলাতক ব্যক্তির সাজা কোনোভাবেই মাফ হতে পারে না। সাজা মাফের জন্য তাকে আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হবে। হারিস-আনিসের সাজা মাফের বিষয়টি সম্পূর্ণ বেআইনি হয়েছে। সরকার আইন লঙ্ঘন করে তাদেরকে মাফ করে দিয়েছে।
এনিয়ে পরিস্থিতি যখন জটিল আকার ধারণ করেছে তখনই আবার মুখ খুলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রী। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পরে আবার বললেন-যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তাদের সাজা মাফ করে দেয়া হয়েছে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও পরে বললেন-এই বিষয়ে তিনি জানতেন। তিনি তাদের সাজা মাফের বিষয়ে আইন মতামতও দিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশেই আইনমন্ত্রীর মতামত নিয়ে হারিস-আনিসের সাজা মাফ করে দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে, কাজটি তারা খুবই গোপনে করেছে যাতে কেউ জানতে না পেরে।
তারপর, আইন অনুসারেও রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ছাড়া কোনো দন্ডপ্রাপ্ত আসামির সাজা অন্য কেউ মাফ করতে পারে না। হারিস-আনিসের দন্ড মওকুফেও যে শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন এটাতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নাই।
জানা গেছে, তাদের সাজা মাফ করে দেয়ার মূল কারণ হলো-এক সময় তারা শেখ হাসিনার বডিগার্ড ছিল। বিভিন্ন সময় প্রোগ্রাম বাস্তবায়নে হাসিনা তাদেরকে কাজে লাগিয়েছিল। যেটা সেনাপ্রধান আজিজ নিজেও ফোনে বলেছেন।
সুতরাং, আল জাজিরা তাদের প্রতিবেদনে আজিজের দুই সন্ত্রাসী ভাই হারিস-আনিসকে যে শেখ হাসিনার লোক বলে উল্লেখ করেছে সেটা শতভাগ সত্য। এটাতে প্রশ্ন তোলার আর কোনো সুযোগ নাই।