অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
যত যাচ্ছে ততই যেন বেপরোয়া হয়ে উঠছে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, কৃষকলীগ, শ্রমিকলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা। লুট চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে ধর্ষণ সবখানেই যেন চলছে লীগের আধিপত্য। দেখা গেছে সিলেটের এমসি কলেজের ঘটনার পর থেকে যেন ধর্ষণের মহোৎসব পালন করছে তারা। তাই সাধারাণ মানুষ বুকভোরা ক্ষোভ আর তিক্ততা নিয়ে বলছে, ভাদ্র মাসের কুকুরের মতো ওরা এখন পাগল হয়ে গেছে। নারীদেরকে দেখলেই ওরা তাদের উপর ঝাপিয়ে পড়ছে। ওরা বর্বর।
রোববার সন্ধ্যায় নোয়াখালীতে একজন গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের একটি যে ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। যা একজন সুস্থ মানুষের পক্ষে সেটা দেখাও অসম্ভব।
জানা গেছে, নির্যাতনে নেতৃত্বদানকারী দেলোয়ার স্থানীয় যুবলীগ নেতা। তার ফেসবুকের বিভিন্ন স্ট্যাটাসেও সে নিজেকে বঙ্গবন্ধুর সৈনিক হিসেবে দাবি করেছে। এমনকি লহ্মীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ কিরনের সঙ্গে থাকা তার একটি ছবিও ভাইরাল হয়েছে।
এ ঘাটনায় শুধু নোয়াখালী নয় সারা দেশের মানুষ স্তব্ধ হয়ে গেছে। তাদের কণ্ঠ বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। মানুষ বুঝতে পারছে না কোন ভাষায় তারা এটার প্রতিবাদ করবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও যেন এক অজানা অতঙ্ক। প্রতিবাদের ভাষা হারিয়ে ফেলে তারা লিখছে-আমরা বাকরুদ্ধ, স্তম্ভিত, অবাক। মানুষের প্রশ্ন শুধু একটাই-ওরা মানুষ হয়ে এমনটা কিভাবে করতে পারছে?
এর মধ্যে অনেকেই আবার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, বিচার চাহিয়া লজ্জা দেবেন না। অনেকেই আবার প্রশ্ন তুলেছেন, মুক্তিযুদ্ধ করে এ দেশ স্বাধীন করেছি কি আজকের বাংলাদেশ দেখার জন্য?
ইতিহাস বলছে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাক হানাদাররা নারীদের উপর নির্যাতন করেছে। কিন্তু এমন বর্বরোচিত কায়দায় নির্যাতন করেছে কি না সেটা জানা যায়নি।
আবার অনেকেই আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগের চেয়েও বর্বর বলে অখ্যা দিয়েছেন। কেউ কেউ বলছেন, নোয়াখালীর মতো এমন বর্বর ঘটনার কথা কোথাও পাওয়া যায়নি। বর্তমান আওয়ামী জাহেলিয়াত দেড়হাজার বছর আগের আইয়ামে জাহিলিয়াতকেও হার মানিয়েছে।
উল্লেখ্য, এর আগে ধানের শীষে ভোট দেয়ায় ভোটের দিন রাতে এক মহিলাকে গণধর্ষণ করে আওয়ামী লীগ মেম্বার রুহুল আমিন। এরপরে ঐ আওয়ামী লীগ নেতাকে কোন শাস্তি না দিয়ে ১ বছরের জামিন দেয় হাইকোর্ট। এরপর থেকে প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতাদের দৌরাত্ম্য আরও বেড়েই চলছে।
দেখা গেছে, গত ৯ মাসে ৯৭৫ জন নারী ধর্ষিত হয়েছে। তার মধ্যে ৬২৭ জন শিশু। এসব শুধুমাত্র পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত পরিসংখ্যান। অগোচরে রয়ে গেছে আরো অজস্র ঘটনা। আওয়ামী সরকারের বিগত বছর গুলোতে তাকালে দেখতে পাই, ২০১৩ সালে সারাদেশে ধর্ষণের মামলা হয়েছিল ৩৬৫০টি। পরের বছর মামলা সংখ্যা আরও ৪৫টি বেড়ে হয় ৩৬৯৫টি। ২০১৫ সালে ধর্ষণের মামলা আরও বেড়ে হয় ৩৯৩০টি। ২০১৬ সালে এটা কিছুটা কমে দাঁড়ায় ৩৭২৮টি। ২০১৭ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৯৯৫ টি। আর ২০১৮ সালের জুলাই পর্যন্ত ধর্ষণের মামলা হয়েছে ২৫৯২ টি অর্থাৎ দিনে প্রায় ১২ টি ধর্ষণের মামলা হচ্ছে দেশে। দিন দিন ধর্ষণের ঘটনা বাড়ছেই। শেখ হাসিনা সরকারের ২য় মেয়াদে বাংলাদেশে ধর্ষণের মামলা হয়েছে ২১৫৯০ টি।
মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাব অনুযায়ী, ২০১৯ সালে এক হাজার ৪১৩ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন৷ ২০১৮ সালে এই সংখ্যা ছিলো ৭৩২ জন। অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় গত বছর ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে দ্বিগুণ যা ভয়াবহ বলে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি৷ ২০১৭ সালে ধর্ষণের শিকার হন ৮১৮ জন নারী। ২০১৯ সালে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৭৬ জনকে। আর আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন ১০ জন নারী।
আসক এর তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশে এখন প্রতিদিন গড়ে কমপক্ষে চারটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। অথচ ধর্ষণের শতকরা মাত্র তিন ভাগ মামলার অপরাধীরা শাস্তি পায়। আসকের হিসেব মতে, চলতি বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯৪৮টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে চলতি মাসের প্রথম ২৫ দিনে ৫৯টি। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৪১ জন নারীকে। ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছেন ৯ জন। আর ধর্ষণ চেষ্টার শিকার হয়েছেন ১৯২ জন।