অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
অবশেষে দুনিয়া থেকে বিদায় নিলেন ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি, শেখ হাসিনার কথিত আত্মার আত্মীয় ও বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে শেখ হাসিনাকে অবৈধভাবে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার মূল নায়ক প্রণব মুখার্জি।
বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে চলা আসা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নামক গাছটির মূলে যে ব্যক্তিটি কুঠারাঘাত করেছিলেন, সেই হলেন প্রণব মুখার্জি।
২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি প্রণব মুখার্জিদের পরামর্শেই কথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নামে ক্ষমতা দখল করে দেশে এক নায়কতন্ত্র চালু করেছিল ফখরুদ্দিন-মইনুদ্দিনরা। তখন থেকেই মূলত এদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ধ্বংসের সূচনা করা হয়।
যার কারণে, ভবিষ্যতে নিজের ও চাকরির নিরাপত্তার জন্য ভারতের তৎকালীন অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জির কাছে গিয়েছিলেন সেনা প্রধান মইনুদ্দিন। প্রণব বাবু নিজেই তার লেখা ‘দ্য কোয়ালিশন ইয়ারস’ নামক বইয়ে উল্লেখ করেছেন। এমনকি প্রণব বাবু মইনুদ্দিনকে আশ্বাসও দিয়েছিলেন-শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসলে তার কোনো সমস্যা হবে না।
২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সেনাপ্রধান জেনারেল মইন ইউ আহমেদ ভারত সফরে যান। তখন প্রণব মুখার্জির সাথে একটি বৈঠক হয়েছিল মইন ইউ আহমেদের।
‘দ্য কোয়ালিশন ইয়ারস’ বইয়ে প্রণব মুখার্জি লিখেছেন, ওই বৈঠকে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান তার কাছে চাকরির নিশ্চয়তা চেয়েছিলেন।
প্রণব মুখার্জি জানাচ্ছেন, মইন ইউ আহমেদের আশঙ্কা ছিল যে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এলে তাকে চাকুরিচ্যুত করা হবে।
কিন্তু মইন ইউ আহমদের চাকরীর দায়িত্ব ব্যক্তিগতভাবে নিয়েছিলেন প্রণব মুখার্জি। বাংলাদেশের সেনাপ্রধানকে আশ্বস্ত করেন যে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এলেও তাঁর কোন সমস্যা হবে না।
জানা গেছে, ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে কিভাবে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনতে হবে সেই পরিকল্পনাও করা হয়েছিল সেই বৈঠকে। বিষয়টি অতি গোপনীয় হওয়ার কারণে প্রণব বাবু এটাকে তার বইয়ে উল্লেখ করেন নি। নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতকে কয়টি করে আসন দেয়া হবে সেটারও আলোচনা হয়েছিল। মূলত প্রণব বাবুদের মাষ্টার প্ল্যানের আলোকেই সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
তারপর আওয়ামী লীগকে দিয়ে গুম-হত্যা, নির্যাতন, লুটপাটসহ যত ধরণের আকাম করানো দরকার ছিল সবই করাইছে। এরপর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারিতে সকল বিরোধীদলকে বাদ দিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে এক তরফা নির্বাচন করতে বাধ্য করেছিল এই প্রণব বাবুরা।
শুধু তাই নয় এরও আগে ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশে এক দলীয় বাকশাল সরকারের পতনের পর বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা কাদের সিদ্দিকি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের আশ্রয়ে থেকেই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারত-সীমান্ত অঞ্চলে বেশ কিছুদিন সশস্ত্র বিদ্রোহ চালিয়েছিলেন। কাদের সিদ্দিকি এখনো তার লেখালেখিতে প্রণব মুখোপাধ্যায়কে পিতা বলে সম্বোধন করে থাকেন। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ভারতের পক্ষে প্রণব সর্বদাই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে ২০১৩ সালে বাংলাদেশ সফরে এসে প্রণব মুখোপাধ্যায় শাহবাগিদের প্রতি একাত্মতা ঘোষণা করেছিলেন।
সেই প্রণব বাবুর মৃত্যুতে আজ বাংলাদেশে একদিনের শোক পালন করলেন শেখ হাসিনা। আর গণতন্ত্র হত্যার মূল নায়ককে বলা হচ্ছে-বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু।