অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে ভারতের গুজরাটের এই কোসাই খ্যাত মোদি যাতে না আসে, সেজন্য বেশ জোরেশোরে দাবি উঠেছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের বিভিন্ন ডান এবং বামপন্থী সংগঠনের মতামত অভিন্ন। ভারতের রাজধানী দিল্লিতে মুসলিমদের উপর সহিংস আক্রমণের প্রেক্ষাপটে সারাদেশে নরেন্দ্র মোদি বিরোধী বিক্ষোভ করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন জানিয়েছেন, বাংলাদেশ সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে সরকার সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেওয়া হবে।
অন্যদিকে বিভিন্ন সংগঠন গুলোর কঠর হুশিয়ারি। মোদির আমন্ত্রণ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে তারা বলছেন, গুজরাটের কসাই এলে দেশের সব বিমানবন্দর অচল করে দেওয়া হবে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে এতো কিছুর পরেও মুজিববর্ষে তাকে আমন্ত্রণ অনিবার্য কেন? তিনি কি এতই গুরুত্বপূর্ণ? নাকি মোদিকে আমন্ত্রণ করে দেশের মানুষকে সহিংসতার দিকে উস্কে দেয়া হচ্ছে!
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলছেন, মোদি বিপজ্জ্বনক, মুসলিম বিদ্বেষী ও সাম্প্রদায়িক দিল্লীতে মুসলিম নিধনের ঘটনায় তা আবারো প্রমাণিত হলো। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে তাকে নিমন্ত্রণ বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি চরম অবমাননাকর।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মুজববর্ষ পালনের জন্য মোদি গুরুত্বপূর্ণ না। সাধারণ মানুষকে উস্কে দিতে সরকার মোদির আমন্ত্রণেে এতো বেশী গুরুত্ব দিচ্ছে। মুসলিম বিদ্বেষ থেকে মূলত সরকার এরকম আচরণ বলে মনে করছেন তারা। এছাড়া ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার অনেক বিষয়ে ভারতের উপর নির্ভরশীল। চাইলেই তারা মোদির ঢাকা সফর নিয়ে ভিন্ন চিন্তা করতে পারে না। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ভারতের সাথে এই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে মরিয়া আওয়ামী লীগ। এজন্য এতো আন্দোলনের মুখেও মোদিকে নিয়ে আসতে এত তোড়জোড়।
দেখা গেছে, দিল্লিতে মুসলিমদের উপর হত্যাযজ্ঞ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের দিক থেকে কোন প্রতিক্রিয়া আসেনি। তারা সবসময় এ বিষয়ে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে।
২০০২ গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে মোদির নীরব ভূমিকা তাকে গুজরাটের কসাই বানিয়েছে। যে দাঙ্গায় দুই হাজারেরও বেশি মুসলমান নিহত হন। মোদি ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত ভারতের ষোড়শ সাধারণ নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টিকে নেতৃত্ব প্রদানের মাধ্যমে প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।এরপরের নির্বাচনে দ্বিতীয় বারের মতো ক্ষমতায় আসে মোদি। ক্ষমতায় এসেই মোদি ভারতকে চরম হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্রের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে।যার অংশ হিসেবে আসামে বাঙালিদের তাড়ানোর নামে জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন( এনআরসি)চালু , সংবিধান প্রদত্ত কাশ্মীরের বিশেষ সুযোগ সুবিধার ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করেছে। তবে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ), জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) ও জাতীয় জনসংখ্যা নিবন্ধন (এনপিআর) নিয়ে ভারত বিগত দুই মাস ধরে উত্তপ্ত।
এরপর দিল্লিতে ভারতীয় পুলিশ ও চরম হিন্দুত্ববাদীদের দ্বারা গত পাঁচদিনের হামলায় প্রায় পঞ্চাশ জন মুসলমান নিহত হয়েছেন৷ টার্গেট করে মুসলমানদের ওপর হামলা হচ্ছে। এসব ঘটনায় মোদির চরম সাম্প্রদায়িক মুখোশ আবারও উন্মোচিত হয়েছে। বহু ভাষাভাষী ও ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর রাষ্ট্র ভারতে ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র মোচনে বর্তমান মোদির সরকার বেশ তৎপর মনে হচ্ছে।বলা যায় ভারতকে হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্রের চেহারা দিতেই বিজেপি মরিয়া। এছাড়া তারা ধর্মীয় সংঘাত সৃষ্টি করে নির্বাচনে ফয়দা হাসিলও করতে চায়।
তাই মোদিকে রুখতে মাথায় কাফনের কাপড় বেঁধে, হাতে জুতা নিয়ে বিমানবন্দরে থাকার ঘোষনা দিয়েছে হেফাজত ইসলামী। শেখ হাসিনাকে অনুরোধ জানিয়ে হেফাজত নেতারা বলেছেন, মুসলমানদের হৃদয়ের স্পন্দন বুঝতে চেষ্টা করুন প্রধানমন্ত্রী। মোদি যদি বাংলাদেশে আসে তাহলে মুসলমানরা জেনে নেবে আপনি তাদের পক্ষে নেই। কোনো অবস্থায়ই যেন মোদি বাংলাদেশে আসতে না পারে তার ব্যবস্থা করবেন আপনি। এছাড়া জনগণ দলমত নির্বিশেষে মোদির আগমন প্রতিহত করার আহবান জানান তারা।