অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
কথিত দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে এবার মাঠে নামছে দলটি। সরকার যে পরিকল্পিতভাবে খালেদা জিয়াকে কারাগারে আটকে রাখছে এটা এখন বিএনপি নেতাকর্মীদের কাছে দিবালোকের মতো পরিষ্কার হয়ে গেছে। সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি ছাড়া আইনি প্রক্রিয়ায় যে খালেদা জিয়া মুক্তি পাবেন না সেটাও এখন প্রমাণিত। সব কিছু বিবেচনা করেই নেত্রীর মুক্তির দাবিতে আন্দোলন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।
তবে, বিএনপি কোনো প্রকার সহিংস আন্দোলনে যাবে না। গণতান্ত্রিক পন্থায় শান্তিপূর্ণ উপায়ে তারা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে। রাজধানীতে প্রায় প্রতিদিনই বিক্ষোভ করছে দলটি। শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীতে মশাল মিছিল করেছে ছাত্রদল। রোববারও সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে দলটি। এছাড়, সোমবার থেকে বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনগুলোরও ধারাবাহিক বিক্ষোভ কর্মসূচি রয়েছে।
এদিকে, হঠাৎ করে বিএনপির আন্দোলনে নামার ঘটনায় অস্বস্তিতে পড়ে গেছে সরকার। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সীমাহীন অপকর্ম, দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, নিয়ন্ত্রণহীন দ্রব্যমূল্যসহ আরও বিভিন্ন ঘটনায় সরকার এখন খুবই বেকায়দায় আছে। এমন অবস্থায় রাজপথে বিএনপির সরকারবিরোধী আন্দোলন যেন আওয়ামী লীগের জন্য আগুনে ঘি ঢালার মতো পরিস্থিতি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপির সরকার বিরোধী আন্দোলন নিয়ে এখন সরকার দুই সংকটে পড়েছে। প্রথমত: এই কঠিন সময়ের মধ্যে বিএনপি যদি আন্দোলনে নামে তাহলে অন্যান্য দলগুলোও এর সঙ্গে যোগ দিতে পারে। রাস্তায় নেমে আসতে পারে সাধারণ মানুষও। তখন পরিস্থিতি হয়তো সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
দ্বিতীয়ত: বিএনপির গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে বাধা দিলেও সমালোচনার মুখে পড়বে সরকার। এই মুহূর্তে বিএনপিকে দমন করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কতটুকু কাজে লাগাতে পারবে সেটাও একটা বিষয়। তাই পুলিশ দিয়ে শক্ত হাতে দমন করাও পরিস্থিতিকে আরও জটিল করতে পারে।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সবকিছু মাথায় রেখে সরকার বিএনপিকে মামলায় জড়িয়ে দমন করার পরিকল্পনা নিয়েছে। আর এজন্য অতীতের মতো বিএনপির কর্মসূচিতে সরকারই বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোক দিয়ে নাশকতা সৃষ্টি করবে। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা করে এসবের দায় বিএনপির ওপর চাপাবে। এরপর সরকার ফলাও করে প্রচার করবে যে বিএনপি আবারও আগুন দিয়ে মানুষ হত্যায় নেমেছে। তারপর শুরু হবে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়ার কাজ। এভাবেই সরকার বিএনপিকে বিএনপিকে দমন করার পরিকল্পনা করেছে।
ইতিমধ্যে সরকার তার পরিকল্পনার আলোকে কাজ শুরু করেছে দিয়েছে। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে রোববার সারাদেশে বিএনপি বিক্ষোভ করবে। কিন্তু হঠাৎ করেই শনিবার দুপুরের পর রাজধানীর কারওয়ান বাজার ও কুর্মিটোলায় দুইটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে।
জানা গেছে, রাজধানীর কুর্মিটোলা হাসপাতালের সামনে একটি বিআরটিসি দোতলা বাসে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। শনিবার বিকাল ৩টা ৫০ মিনিটে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। অপরদিকে, রাজধানীর কারওয়ান বাজারে হঠাৎ আগুন লেগে পুড়ে গেছে যাত্রীবাহী একটি বাস।
শনিবার বিকেল সোয়া ৩টার দিকে কারওয়ানবাজারে সিএ ভবনের সামনে হঠাৎ ট্রাস্ট পরিবহনের বাসটিতে আগুন লাগে। কিন্তু, কিভাবে এই আগুন লেগেছে তা এখন পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়নি।
সচেতন মানুষ মনে করছে, বিএনপিকে ফাঁসাতে এটা সরকারের কোনো চক্রান্ত হতে পারে। কারণ, এর আগে রাজধানীর যাত্রাবাড়ি, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন স্থানে সরকার এজেন্সির লোক দিয়ে বাসে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা করেছে। পরে এগুলোর দায়ভার চাপিয়েছে বিএনপি-জামায়াতের ওপর। এবারও সরকার বিএনপিকে দমন করতে পরিকল্পিতভাবে বাসে আগুন দিয়ে বিএনপিকে ফাঁসাতে পারে।