অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
গত ৩০ ডিসেম্বর নজিরবিহীন ভোট ডাকাতির মাধ্যমে তৃতীয়বারের মতো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। র্যাব-পুলিশ, বিজিবি আর সেনাবাহিনীর প্রটেকশনে দেশ চালাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। জোর করে ক্ষমতা দখলের পর এবার সরকারের দিনকাল খুব ভাল যাচ্ছে না।আ.লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, কৃষকলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকর্মীদের সন্ত্রাস, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, লুটপাট, মানুষের জমি দখল, খুন-হত্যা, মাদক ব্যবসা ও ধর্ষণের ঘটনায় সরকারের অবস্থা এখন টালমাটাল।
কিছু দিন আগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্প থেকে চাঁদাবাজির দায়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে সরিয়ে দিতে হয়েছে। তারপর শুরু হয় ক্যাসিনো বিরোধী অভিযান। এই অভিযানের মাধ্যমে যা বেরিয়ে আসছে তা শুধু দেশের জনগণকেই নয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের লোকদেরকেও চমকে দিয়েছে। দেখা গেছে, আ.লীগের যতগুলো সহযোগী সংগঠন আছে সবগুলোর শীর্ষনেতারাই চাঁদাবজি, টেন্ডারবাজি, মাদক ব্যবসা ও জুয়ার সঙ্গে জড়িত।
বিগত ১০ বছর ধরে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে রাষ্ট্রের বিভিন্ন সেক্টর থেকে হাজার হাজার কোটি লুটে নিয়েছে। দুর্নীতি-লুটপাটের দায়ে এসব সংগঠনের শীর্ষনেতাদেরকে পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি দুদক যে অবৈধ সম্পদ উপার্জনকারীদের নামরে তালিকা করেছে তাতে সবাই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং বর্তমান ও সাবেক সাংসদ।
এরপর, সম্প্রতি ভারতের সঙ্গে সরকারের চুক্তি ও এই চুক্তিকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ কর্তৃক বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আববারকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনাও সরকারের জন্য বড় ধরনের সংকট হিসেবে দেখা দিয়েছে। এর সঙ্গে বরগুনার রিফাত হত্যা এবং ফেনীর নুসরাত হত্যার সঙ্গেও আ.লীগ ও ছাত্রলীগ নেতারা জড়িত।
এছাড়া দেশের বাজার পরিস্থিতি এক ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। কোনো কারণ ছাড়াই প্রতিদিন বাড়ছে দ্রব্যমূল্যের দাম। বিশেষ করে সম্প্রতি পেয়াজ নিয়ে যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে তা নজিরবিহীন। এনিয়ে সরকার এখন একেবারেই দিশাহারা। এর সঙ্গে আবার যুক্ত হয়েছে সড়ক পরিবহন আইন। সর্ব সাধারণের চাপে নতুন আইন পাস করলেও সেটি বাস্তবায়ন করতে পারছে না। সম্প্রতি আইনটি বাস্তবায়নের ঘোষণা দিলেও প্রতিবাদে আন্দোলনে নেমেছে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। সারাদেশে এখন অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘট চলছে।
এই আইন বাস্তবায়ন নিয়ে নতুন সংকটে পড়েছে সরকার। সরকারের নীতিনির্ধারক মহলের ধারণা, পরিবহন শ্রমিকদের বাধার মুখে যদি আইনটি কার্যকর করা না যায় তাহলে শিক্ষার্থীরা আবার রাস্তায় নামতে পারে। এনিয়ে সরকার এখন উভয় সংকটে পড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব কারণে সরকারের ভেতরে খুব অস্থিরতা বিরাজ করছে। আর শেখ হাসিনার দিন কাটছে চরম অস্বস্তিতে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে শেখ হাসিনার সামনে এসে দাড়িয়েছে আরেক দুঃসংবাদ। যেটা শেখ হাসিনার মসনদকে বড় ধরণের ঝাকুনি দিয়েছে।
জানা গেছে, কয়েকটি প্রভাবশালী দেশ শেখ হাসিনার ওপর চরম ক্ষুব্ধ। তাদের টার্গেট সুশীল সমাজের লোকদের দিয়ে একটি জাতীয় সরকার গঠন করা। গত নির্বাচনের আগেও এনিয়ে তারা তৎপর ছিল। ব্যাটে-বলে না মিলার কারণে তাদের উদ্যোগ সফল হয়নি। এখন তারা আবারো এনিয়ে তৎপরতা চালাচ্ছে। দেশের কিছু রাজনীতিক, বিশিষ্ট ব্যক্তি ও সুশীল সমাজের কিছু লোক এনিয়ে কাজ করছে। প্রভাবশালী কয়েকটি দেশের দূতাবাসের সঙ্গে তারা নিয়মিত যোগাযোগ করছেন।
তবে, এসব খবর প্রচার না হলেও শেখ হাসিনার কাছে ঠিকই পৌঁছে গেছে। তিনি এনিয়ে তার পরিবার ও দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কথাও বলেছেন।
এছাড়া, এ তথ্যের সত্যতা মিলেছে শেখ হাসিনার অনুগত সাংবাদিক হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ প্রতিদিনের নির্বাহী সম্পাদক পীর হাবিবের একটি লেখাতেও। বৃহস্পতিবার একটি লেখায় তিনি উল্লেখ করেছেন-”সরকারবিরোধী রাজনৈতিক শক্তির কোনো কর্মকাণ্ড না থাকলেও পশ্চিমা কূটনীতিকদের সঙ্গে তাদের নৈশভোজ, চা চক্র নিয়মিতই হচ্ছে। এমনকি চাউর হয়েছে, পশ্চিমা কূটনীতিকরা এসব বৈঠকে আগামী ছয় মাস পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই সবাইকে নিয়ে নতুন মন্ত্রিসভা গঠন এবং এক বছর পর একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচনের ফর্মুলা নিয়ে অগ্রসর হওয়া যায় কিনা এ প্রস্তাব নিয়ে কথা বলছেন। এ ক্ষেত্রে বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশের সমর্থনও আদায়ের চেষ্টা করা যেতে পারে বলে তারা মত রাখছেন।”
পীর হাবিব শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মন্ত্রিসভা হবে ৬ মাসের জন্য কূটনীতিকদের পক্ষ থেকে এমন প্রস্তাব দেয়ার কথা উল্লেখ করলেও খবর নিয়ে ভিন্ন তথ্য জানা গেছে।
একটি সূত্র বলছে, শেখ হাসিনাকে সরিয়ে দিয়ে দেশে একটি জাতীয় সরকার গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এমন সংবাদ সরকারের কাছে যাওয়ার পরই এনিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে যান আ.লীগ নেতারা। শেখ হাসিনা তার বাবার জন্মশত বার্ষিকী পালনের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে। ২০২০ সালকে মুজিব বর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন সরকার। এমন সময় সরকার পরিবর্তনের চেষ্টার সংবাদে শেখ হাসিনা চরম অস্বস্তির মধ্যে পড়েছে। বিষয়টিকে ট্যাকেল দিতে তিনি নতুন কৌশল নিয়ে এগুচ্ছে।
সূত্রটি বলছে, সরকার পরিবর্তনের চেষ্টা হচ্ছে এমন সংবাদ পেয়ে শেখ হাসিনা প্রস্তাব দিয়েছেন যে, তার নেতৃত্বেই একটি জাতীয় সরকার গঠন হবে। যাতে করে মুজিব বর্ষটা তিনি পালন করতে পারেন। এছাড়া, মুজিব বর্ষ পালনের আগ মুহূর্তে দেশে কিছু ঘটে যায় কিনা সেটা নিয়েও চিন্তিত প্রধানমন্ত্রী।
এদিকে সরকার মাত্র দুই থেকে তিন মাস ক্ষমতায় থাকতে পারবে’ বলে মন্তব্য করেছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেন, ‘জিডিপি নিয়ে যতই বড়াই করুন, দুই থেকে তিন মাস ক্ষমতায় থাকতে পারবেন।’ মান্না এক দলের এক নেতা হলেও সরকার তার কথাটাকে একেবারে ফেলে দিচ্ছে না।
তবে যেসব সূত্র থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে তারা পরিষ্কার করে কিছুই বলতে চাচ্ছে না। শুধু বলছে যে, সরকারের ভেতরে অস্থিরতা চলছে।