অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
এবার বিতর্কিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটরের পদ থেকে তুরিন আফরোজকে অপসারণ করেছেন সরকার। অপসারণের আদেশ সম্বলিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে যে তুরিন আফরোজকে “শৃঙ্খলা ও পেশাগত আচরণ ভঙ্গ এবং গুরুতর অসদাচরণের” দায়ে অপসারণ করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তুরিন আফরোজকে যে মামলার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিলো, তিনি সেই মামলার আসামির সাথে গোপনে সাক্ষাৎ করে পেশাগত অসদাচরণ ও শৃঙ্খলাভঙ্গের পরিচয় দিয়েছেন। তিনি গণমাধ্যমে আলোচনায় আসেছেন অনেক আগে থেকে।
এর আগেও বিভিন্ন অনৈতিক কাজ, অপকর্ম ও নিয়ম ভঙ্গের দায়ে তুরিন আফরোজ গণমাধ্যমের শিরোনাম হন অনেকবার। গত বছরের মে মাসে বোরকা পরে ঘুষের টাকা আনতে গিয়ে ধরা খান এই প্রসিকিউটর তুরিন। এদেশে বিতর্কিত যে কয়জন নারী আছেন তার মধ্যে তুরিন আফরোজ অন্যতম। তুরিন শুধু বামপন্থী চেতনায়ই উজ্জিবিত নন, তিনি একজন চরম ইসলাম বিদ্বেষীও বটে।
সে সময় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত ওয়াহিদুল ইসলামের সঙ্গে গোপন বৈঠক করার পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে বাদ দেয়া হয় ব্যারিস্টার তুরিনকে। সে সময়ও তুরিন দাবি করেছিলেন যে, নিয়ম অনুযায়ীই তিনি তার সঙ্গে দেখা করেছেন। কিন্তু, ওয়াহিদুল ইসলামের সঙ্গে ফোনে যা বলেছেন তা থেকে জানা যায়, তিনি তাকে বাঁচাতেই মূলত তার সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছেন। ঐ সময় তাদের ফোন আলাপ ফাঁস করে অ্যানালাইসিস বিডিসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম।
এরপর অনৈতিক কাজের অভিযোগ উঠে এই কথিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর তুরিনের বিরোদ্ধে। আর সেই অভিযোগও করেন তারই গর্ভধারিণী মা সামসুন নাহার তসলিম। এছাড়া নিজের মা-ভাইকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে তাদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করার অভিযোগও করেছেন তুরিনের মা।
তুরিন আফরোজের মা সামসুন নাহার তসলিম তার মেয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেন,-অনৈতিক কাজে বাধা দেয়ায় আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। এছাড়া মা-ভাইয়ের সম্পত্তি দখল করে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরোদ্ধে।
তুরিন আফরোজের মা বলেছেন, অপরিচিত লোকদের রাত-বিরাত ঘরে প্রবেশ নিয়ে দারোয়ান ও ভাড়াটিয়ারা অভিযোগ করলে, তার সঙ্গে প্রায় লাগতো (ঝগড়া)। এসব বিষয়ে নিষেধ করলে র্যাব ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নামে ভয় দেখাত এবং বলত, ওরা সবাই তার বন্ধু। কোনো কিছু বললেই ৫৭ ধারায় গ্রেপ্তার করার ভয় দেখাত। আমি তো ধারা বুঝি না। আরও বলত, পৃথিবীর যেখানেই থাকো সেখান থেকেই ধরে নিয়ে আসব। আর তার গানম্যান দিয়ে ভয় দেখাত। গ্রামের বাড়ি নীলফামারি যেতে পারি না, সে সেখানে দায়িত্ব নিয়ে জমিজমা ও বাড়ি নিজের নামে কুক্ষিগত করেছে।’
এছাড়া ২০১৪ সালের ২৬ আগস্ট জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারের বিরুদ্ধে আইনি যুক্তি উপস্থাপনকালে ‘পশু’ ও ‘নরপশু’ বলে গালি দেন এই তুরিন। পরের দিন জামায়াতের আইনজীবী এডভোকেট শিশির মনির বিষয়টি ট্রাইব্যুনালকে অবহিত করলে আদালত তাকে তলব করে।
তারপর, জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর রায়ের পর তুরিন আফরোজের ভুমিকা ছিল খুবই দৃষ্টিকটু। গণমাধ্যমের কাছে সেদিন তুরিন আফরোজ এমন ভাষা ব্যবহার করেছিল যা কোনো ভদ্র-সভ্য মানুষের মুখ থেকে বের হতে পারে না।
অন্যদিকে তুরিন আফরোজ টিভি টকশোতে গিয়েও সর্বদা জামায়াত, ইসলামি শিক্ষা, ইসলামী সংগঠন, মসজিদ, মাদরাসাসহ এদেশের আলেম ওলামার বিরুদ্ধে বিষোদগার করে যাচ্ছিলেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তুরিন আফরোজ তার নিজ এলাকা নীলফামারীতেও বিতর্কিত হিসেবে পরিচিত। সরকারের তিন বছর পূর্তির অনুষ্ঠানে স্থানীয় এমপি গোলাম মোস্তফা প্রকাশ্যেই তুরিন আফরোজকে অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করেছেন। যা নিয়ে পরে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছিল।
জানা গেছে, তুরিন আফরোজ এখন স্বামী পরিত্যক্তা মহিলা। অনেক আগেই বেপরোয়া চলাফেরার কারণে স্বামী তাকে ছেড়ে চলে যায়। ওই সংসারের একটি মেয়ে আছে। মেয়েটাকে নিয়েই থাকেন তিনি। এরপর আর কাউকে বিয়ে করেননি তুরিন। আর স্বামী চলে যাওয়ার পর থেকেই তুরিনের বাসায় অপরিচিত লোকদের আসা-যাওয়া বেড়ে যায়। যার কারণে প্রায় প্রতিদিনই বাড়ির দারোয়ান ও ভাড়াটিয়ার সঙ্গে এসব নিয়ে ঝামেলা হতো তার।
সূত্র বলছে, তুরিন আফরোজের অপকর্মে ক্ষুব্ধ ক্ষমতাসীন সরকারের উপেরর মহল। তাই তাকে বহিস্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এছাড়া তুরিনকে সরকার ব্যবহার করেছে। এখন জামায়াত নেতা আজহারের রায়ের পর তুরিনকে আর কাজে লাগানোর দরকার নেই। এজন্য এখন তুরিনকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছেন সরকার।
আরও পড়ুন:
স্বামী পরিত্যক্তা তুরিনের বাসায় রাতে কারা আসে?
মাকে তাড়িয়ে বাড়ি দখল করলেন তুরিন আফরোজ
আজহারকে ‘নরপশু’ বলা সেই তুরিন আফরোজ ধরা খেলেন!