অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
রাজধানীর রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে কিশোর আলোর বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠান চলাকালে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাঈমুল আবরার মারা গেছে। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে শিক্ষার্থীরা। মৃত্যুর অনেকক্ষণ পরও ঘটনা চেপে রেখে অনুষ্ঠান চালিয়ে যাওয়ায় আয়োজক ও কলেজ কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
অপরদিকে এই ঘটনাকে একটি দুর্ঘটনা আখ্যা দিয়ে লাশের ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। এছাড়া নিজেদের দুর্বলতা ঢাকতে দায় এড়ানোর চেষ্টা করেই চলছে কিশোর আলো কতৃপক্ষ।
শুক্রবার (১ নভেম্বর) রাতে রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের শিক্ষার্থী নাঈমুল আবরারের মৃত্যুতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন একই কলেজের শিক্ষার্থী রিয়াজ। তার প্রশ্ন, মৃত্যুর খবর চেপে রেখে কেন গান চললো, অনুষ্ঠান চললো?
ঘটনা চেপে রেখে আবরারকে কলেজের পাশের কোন হাসপাতালে না নিয়ে শুধুমাত্র চুক্তির কারণে মহাখালীর একটি হাসপাতালে নেয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছেন আরও অনেকেই।
এক শিক্ষার্থী বলেন, বিকেল সাড়ে তিনটার সময় সে আহত হয়েছে, ডাক্তাররা বলছে মারা গেছে। তখন কেনো ঘটনাটা জানানো হয়নি। অনুষ্ঠানস্থলের পাশেই ওর ডেডবডিটা ছিলো। কেন অনুষ্ঠানটা চললো। এরপরেও কেন দুই ঘণ্টা ধরে গান চললো।
আবরারের এক সহপাঠী বলেন, এত বড় একটা দুর্ঘটনা ঘটলো অথচ আবরারকে মোহাম্মদপুর থেকে নিয়ে যাওয়া হলো মহাখালীতে। এতদূর নিতে হলো কেন? আশপাশেই তো কত হাসপাতাল ছিলো, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল ছিলো।
নামাজে জানাজার পর এক শিক্ষার্থী বলেন, রাত ১২টার পর জানাজা দেয়া হলো। এটা কি কোনো কিছু ধামাচাপা দেয়ার জন্য হচ্ছে? তিনটার দিকে ঘটনাটা ঘটেছে। আমরা জানতে পেরেছি রাত নয়টার পরে। কিন্তু ‘কিশোর আলো’র পক্ষ থেকে আমাদের কিছুই জানানো হলো না।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিপরীতে কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছে, মৃত্যুটি নিছক দুর্ঘটনা। একটি তদন্ত কমিটি করেই আলাপ আলোচনার মাধ্যমে আইনি পদক্ষেপ ছাড়াই নিয়েছেন দাফনের প্রস্তুতি।
কলেজের অধ্যক্ষ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী শামীম ফরহাদ জানান, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার পর সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। এরপর এখানে যে চিকিৎসকরা ছিলেন তারা তাকে দেখেন। কিন্তু তারা পালস পাচ্ছিলেন না। তাই দ্রুত তাকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। হাসপাতাল থেকে জানানো হয় সে আগেই মারা গেছে।
তিনি বলেন, আমরা কলেজ কর্তৃপক্ষ, কিশোর আলো কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ পুলিশ এবং মৃতের বাবা-মা; আমরা সবাই একসঙ্গে বসেছিলাম। আমরা একটা বিষয়ে একমত হয়েছি, এর জন্য কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে দায়ী না করে এটাকে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা হিসেবে মেনে নিয়ে পোস্টমর্টেম ছাড়া লাশ নিয়ে এসেছি।
এদিকে শিক্ষার্থীরা বলছেন, কিশোর আলো যতবার আমাদের ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠান করেছে তখনই কোন সমস্যা হয়েছে। এই নিয়ে তিনবার কিশোর আলো আমাদের কলেজে নিজেদের জন্মদিনের ইভেন্ট আয়োজন করল। প্রত্যেকবার দুর্ঘটনা না ঘটালে যেন তাদের মন ভরে না। ২০১৭ সালে তারা আমেদের মাঠ নষ্ট করেছিল, ১৮ তে ছোট ছোট গাছগুলো মেরে ফেলেছে। সেগুলো নাহয় মেনে নিতে পেরেছিলাম, কতটাই বা যাবে, আনন্দ তো করতে পেরেছি।। কিন্তু এবার? একটা ১৫ বছরের বাচ্চার জীবনের দাম কী দিয়ে পূরণ করবেন? এ দায় এড়াতে পারবেন না কখনো।
এর আগে রানা প্লাজার দুর্ঘটনায় কয়েকশো মানুষের প্রাণহানির মাঝেও মেরিল প্রথম আলো তাদের অনুষ্ঠান চালিয়ে যাওয়ায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া ও সমালোচনার শিকার হতে হয় আয়োজকদের।