অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
ক্যাসিনোতে তোলপাড় সারাদেশ। এখন পর্যন্ত যে কয়েকজন গ্রেফতার হয়েছে তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে নগদ অর্থসহ শত শত কোটি টাকার এফডিআর ও ব্যাংক একাউন্ট জব্দ করেছে প্রশাসন। সর্বশেষ বিসিবি পরিচালক লোকমানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত সেলিম প্রধানকে আটকের পর আরও ভয়াবহ অবস্থা দেখা গেছে।
বিগত ১০ বছর যাবত ঢাকা শহরে এত বড় অপরাধ কর্মকাণ্ড চলে আসছে অথচ পুলিশ প্রশাসন, গোয়েন্দা ও সাংবাদিকরা জানে না এটা নিয়ে বিস্ময় সাধারণ জনগণ। এজন্য ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকায় খালেদা মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেফতারের পর যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী একটি প্রশ্ন তুলেছেন যে, সাংবাদিকরা আগে এসব রিপোর্ট করেনি কেন? সাংবাদিক ভুমিকা নিয়ে এখন এমন প্রশ্ন সাধারণ মানুষেরও।
সাংবাদিকতা একটি মহান পেশা হলেও বর্তমানে এ পেশার বড় একটি অংশ বিভিন্ন ধরণের অপরাধ কর্মকাণ্ডের সাথে লিপ্ত রয়েছে। এসব নিয়ে অ্যানালাইসিসি বিডির পক্ষ থেকে দীর্ঘ অনুসন্ধান করে বিস্ময়কর তথ্য পাওয়া গেছে। এমনকি সম্প্রতি যে ক্যাসিনো নিয়ে সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে এই কর্মকাণ্ডের সঙ্গেও দেশের নামকরা বেশ কিছু সাংবাদিকের জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। যারা গায়ে সাংবাদিকতার লেবাস লাগিয়ে দেদারসে অপরাধ কর্মকাণ্ড করে চলছে। অনেকে অল্প দিনেই আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ বনে গেছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সাংবাদিকদের মধ্যে ৩টি অংশ তিন রকম অপরাধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। এখানে আমরা অল্প কয়েকজনের নাম উল্লেখ করবো।
প্রথমত: ক্যাসিনোর সঙ্গে জড়িত
ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে যে যুবলীগ নেতারা অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসা করছে এটা বেশ কয়েকজন সাংবাদিক নেতা ও সিনিয়র সাংবাদিক অনেক আগ থেকেই জানেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাংবাদিকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, এটিএন বাংলা টেলিভেষনের প্রভাস আমিন, এটিএন নিউজের মুন্নী শাহা, সমকালের শাকিল ফারুক, একুশে টিভির মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, বাংলাদেশ প্রতিদিনের শাবান মাহমুদ, ইত্তেফাকের আবুল খায়ের, মেহেদী হাসান ও ফরাজী, সময় টিভির তুষার, দেশরুপান্তরের অমিত হাবিব, কালের কণ্ঠের মুস্তফা কামাল, অমাদের সময় ডটকমের নাইমুল ইসলাম খান তার পত্রিকার রিপোর্টার মাসুদ আলম , একাত্তর টিভির মোজাম্মেল বাবু ও ফারজানা রুপা, সাংবাদিক নেতা জলিল এবং আওয়ামী পন্থী সাংবাদিক সংগঠনগুলোর নেতারাসহ ক্রাইম রিপোর্টার এসোসিয়েশনের নেতারাসহ ওই বিটের অনেক সিনিয়র রিপোর্টাররা এই ক্যাসিনোর বিষয়ে আগেই জানতেন। তারা এসব ক্যাসিনো ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মাসে মাসে মোটা অংকের মাসোহারা নিতেন।
দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, এই ক্যাসিনো ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে এমন ১০০ জন সাংবাদিকের একটি তালিকা করেছে গোয়েন্দারা। এই তালিকা সরকারের উচ্চপর্যায়ের লোকদের হাতে দিয়েছে।
দ্বিতীয়ত: ক্রাইম রিপোর্টারদের অপরাধ জগৎ
গণমাধ্যমগুলোর ক্রাইম বিটে যারা কাজ করে তাদের বড় একটি অংশ নানান ধরণের অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, পুলিশের আইজি থেকে শুরু করে থানার ওসি পর্যন্ত ক্রাইম রিপোর্টার এসোসিয়েশনের নেতাসহ সিনিয়রদেরকে টাকা দিয়ে থাকেন। পুলিশ কর্মকর্তা যেসব অপরাধ কর্মকাণ্ড গুলো করেন তা যাতে প্রকাশ না হয় সেজন্য তারা সাংবাদিকদেরকে নিয়মিত মাসোহারা দিয়ে থাকেন। আর ক্রাইম রিপোর্টারদের আরেকটি অংশ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি কোম্পানিসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেও নিয়মিত চাঁদা নেন। একাধিক সরকারি কর্মকর্তা, কোম্পানির মালিক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। এছাড়া, সেগুন বাগিচার ক্রাব অফিসেও অনেক ক্রাইম রিপোর্টার সারাদিন বসে থেকে চাঁদাবাজি করে। কোনো প্রতিষ্ঠানের সামান্য ত্রুটি পেলেই তাদের বিরুদ্ধে নিউজ করার কথা বলে তাদেরকে ক্রাব অফিসে ডেকে নিয়ে মোটা অংকের টাকা দাবি করা হয়। এমন ঘটনা একাধিক বার প্রত্যক্ষ করা গেছে। একজন সিনিয়র ক্রাইম রিপোর্টার নাম প্রকাশ না করার শর্তে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ক্রাব অফিস এখন অবৈধ লেনদেনের কারখানায় পরিণত হয়েছে। অনেকে এখানে বসে বসেই সারাদেশে চাঁদাবাজি করে। এমনও ক্রাইম রিপোর্টার আছে যাদেরকে অফিস থেকে ঠিক মতো বেতনও দেয়নি। অথচ তারা ঢাকা শহরে বাড়ি গাড়ির মালিক। মাসুদ আলম মোল্লা হৃদম নামে এক চাঁদাবাজ আছে সে যে কোন পত্রিকায় কাজ করে সেটাই জানি না। অথচ সারা ঢাকা শহরে সে চাদাঁবাজি করে বেড়াচ্ছে। ওর মতো এমন বহু ক্রাইম রিপোর্টার আছে যারা আন্ডার গ্রাউন্ডের পত্রিকার কার্ড ব্যবহার করে দেদারসে চাঁদাবাজি করে যাচ্ছে। এমনকি আন্ডার ওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের সঙ্গেও তাদের খুব ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। অপরাধীদের কাছ থেকে তারা নিয়মিত মাসোহারা পেয়ে থাকে।
তৃতীয়ত:
সাংবাদিক নেতা এবং ক্রাইম রিপোর্টার ছাড়াও যেমন-অর্থনীতি, প্রবাসী কল্যাণ, সচিবালায়, গ্রহায়ণ, দুদক, শিক্ষা, সিটি করপোরেশন, বিদ্যুৎ, আবাসন ও যোগাযোগ নিয়ে কাজ করেন তারাও চাঁদাবাজিতে লিপ্ত। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের লুটপাট-দুর্নীতিগুলো তারা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে চাপা দিয়ে দেন। আবার সাংবাদিকদের আরেকটি অংশ আছে যারা সারাদিনই ডিআরইউ ও প্রেসক্লাবে ঘুরাফেরা করে ধান্ধাবাজির জন্য। তারা নামসর্বস্ব একটি কার্ড ব্যবহার করে নিয়মিত সাধারণ মানুষকে হুমকি ধামকি দিয়ে চাঁদাবাজি করছে।