অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
শেখ হাসিনার সোনার ছেলে খ্যাত ছাত্রলীগ ধীরে ধীরে বেপরোয়া হয়ে উঠছে। এমনকি জঙ্গিদের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডের অনেকটা মিলও রয়েছে। বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে প্রতিদিনই তারা সংবাদ পত্রের শিরোনাম হচ্ছে।
চুরি থেকে শুরু করে ডাকাতি, টাকা ছিনতাই, মাদক, ইয়াবা, ফেনসিডিল সেবন ও বিক্রি, গুম-অপহরণ, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, হল দখল, হলে সিট বাণিজ্য, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি বাণিজ্য, প্রশ্নপত্র ফাঁস, খুন, হত্যা সহ এমন কোনো অপরাধ নেই যা তারা করেনি।
ছাত্রলীগের এসব অপরাধ কর্মকাণ্ডের জন্য ২০০৯ সালে একবার সংগঠনটির সাংঠনিক পদ ছেড়ে দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। ছাত্রলীগ আর খারাপ কাজ করবে না এমন প্রতিশ্রুতি দেয়ার পর শেখ হাসিনা পুনরায় এই পদটি গ্রহণ করেন।
এত কিছুর পরও ছাত্রলীগে কি কোনো পরিবর্তন এসেছে?
অনুসন্ধান বলছে, নমনীয় নয় বরং দিন দিন ছাত্রলীগ আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তাদের উগ্রবাদী কর্মকাণ্ড আরও ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডে এখন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও বিব্রত।
গত রোববার রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগের একটি সভায় ছাত্রলীগের সভাপতি রেজোয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সেক্রেটারি গোলাম রাব্বানীর কর্মকাণ্ডে শেখ হাসিনা প্রচন্ড ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এমনকি ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটি ভেঙ্গে দেয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এরপর ওবায়দুল কাদেরও তাদের ওপর চড়াও হয়েছিলেন। কিন্তু ফলাফল কি হলো? ছাত্রলীগে কি কোনো পরিবর্তন এসেছে?
পরের দিন ছাত্রলীগ সেক্রেটারি গোলাম রাব্বানীর সভায় না যাওয়ার কারণে ঢাবিতে সাধারণ ছাত্রদের কক্ষে তালা দিয়েছে তার অনুসারীরা। জানা গেছে, গোলাম রাব্বানীর নির্দেশেই ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা হলে গিয়ে ছাত্রদের কক্ষে তালা দিয়েছে। এছাড়া, সাধারণ ছাত্রদেরকে গণরুমে ঠাসাঠাসি করে থাকতে হচ্ছে। পড়ালেখা তো দূরের কথা জায়গা না থাকায় তারা রাতে ঘুমাতেও পারছে না। অথচ ছাত্রলীগ সেক্রেটারি অবৈধভাবে রুম দখল করে সেটাতে আবার এসি লাগিয়েছে। এর আগেও অবৈধভাবে হলের ছিট দখল করে রেখেছিলেন এই নেতা।
এরপর, মঙ্গলবার ছাত্রলীগ সভাপতি শোভন এক সাংবাদিককে জোর করে গাড়িতে তুলে নিয়ে গেছেন। যদিও পরে আবার ক্ষমা চেয়েছেন।
এছাড়াও মন্ত্রী-নেতাদের একরকম ডেমকেয়ার করে চলেন ছাত্রলীগ নেতারা। গত ২০ জুলাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি দুপুর সাড়ে ১২টায় এলেও শোভন আসেন বেলা দুইটা ২০ মিনিটে। ততক্ষণ পর্যন্ত মন্ত্রী ক্যাম্পাসেই অবস্থান করেন। প্রচণ্ড গরমের মধ্যে সকাল থেকে নেতাকর্মীরা সম্মেলন স্থলে অবস্থান করায় বশে কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়ে। হিটস্ট্রোকে মারা যান সুলতান মোহাম্মদ ওয়াসী নামে একজন কর্মী। এ ঘটনায় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের গাফিলতিকেই দায়ী করা হয় সংবাদমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
রাজনীতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ছাত্রলীগ এখন এতই বেপরোয়া যে, খোদ শেখ হাসিনাকেও তারা পাত্তা দিচ্ছে না। কারণ, যে দুই নেতার কর্মকাণ্ডে শেখ হাসিনা ক্ষুব্ধ হয়েছেন। পরের দিনই তারা আবার অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছেন। যেখানে শেখ হাসিনার কথাই তারা শুনছে না, সেখানে তাদেরকে প্রতিরোধ করার শক্তি আর কার আছে? তাদের পক্ষে এখন যা খুশি তাই করা সম্ভব।
কেউ কেউ বলছেন, শেখ হাসিনার উচিত হবে ছাত্রলীগের নিষিদ্ধ করা। এছাড়া, ওদেরকে অপরাধ কর্মকাণ্ড থেকে দূরে রাখা সম্ভব হবে না।
এদিকে গণভবন সূত্রে জানাগেছে, সোমবার আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সংসদে শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের ব্যাপারে কথা ওঠান। কাদের প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, নেত্রী ছাত্রলীগের আগাম সম্মেলন দিয়ে দেব? জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, এখন সম্মেলনের আওয়াজ উঠলে জটিলতা আরও বাড়বে। শোভন-রাব্বানীকে আমি নেতা বানিয়েছি, পুরো ব্যাপারটা আমিই দেখছি। এছাড়া শোভন-রাব্বানীকে আপাতত গণভবনে প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে বলে সূত্রটি জানিয়েছে।