কথিত ছেলেধরা গুজব ছড়িয়ে নিরপরাধ নারী-পুরুষদেরকে পিটিয়ে নির্মমভাবে হত্যার এক অমানবিক কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছে দেশে। গত এক সপ্তাহে দেশের বিভিন্ন স্থানে কথিত এই ছেলেধরার গুজব ছড়িয়ে ৬ জনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এখন জানা যাচ্ছে, নিহতদের সবাই নিরপরাধ ছিল।
এছাড়া গত এক সপ্তাহে সারাদেশে গণপিটুনিতে কমপক্ষে অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়েছে। এসব ঘটনায় এখন সারাদেশে মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে।
পদ্মাসেত নির্মাণে শিশুদের রক্ত ও মাথা লাগবে এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ার পরই মূলত এসব গণপিটুনির ঘটনা ঘটছে। সারাদেশে কারা এসব গুজব ছড়াচ্ছে পুলিশও এখন পর্যন্ত তাদেরকে খুজে বের করতে পারছে না।
তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরগুনাসহ সম্প্রতি সংঘটিত খুন-হত্যা ও ধর্ষণের ঘটনা থেকে মানুষের চোখ ভিন্নদিকে নিতে এবং বিএনপি-জামায়াতকে ফাঁসাতে সরকারের কথিত ছেলেধরা নামের নতুন চক্রান্ত নিয়ে মাঠে নেমেছে।
কিন্তু সরকারের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সোমবার পাগলের মন্তব্য করে বলেছেন যে, গণপিটুনি বিএনপি-জামায়াতের নিখুঁত পরিকল্পনার কাজ। তারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে ছেলেধরার গুজব ছড়িয়ে মানুষ হত্যা করছে।
দেশে কোনো ঘটনা ঘটলে তদন্তের আগেই দায়ভার বিএনপি-জামায়াতের ওপর চাপানো আওয়ামী লীগ নেতাদের পুরনো অভ্যাস। কিন্তু ঘটনা তদন্তের পর দেখা গেছে সংঘটিত সবগুলো ঘটনার সঙ্গেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা জড়িত।
আর সম্প্রতি কথিত ছেলেধরা ও পিটিয়ে মানুষ হত্যার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোক দিয়ে সরকার নিজেই কথিত ছেলেধরার গুজব ছড়িয়ে গণপিটুনির পরিবেশ সৃষ্টি করছে। সম্প্রতি সময়ে সারাদেশে যেসব খুন-হত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ ও গুমের ঘটনা ঘটছে অধিকাংশ ঘটনার সঙ্গেই ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা জড়িত। ফেনীর নুসরাত হত্যাকাণ্ডের পর বরগুনার রিফাত হত্যাকাণ্ড শুধু দেশের ভেতর নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও সরকারের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ। আর বরগুনার ঘটনার সঙ্গে আওয়ামী লীগের এমপিপুত্র ও জেলাপরিষদের চেয়ারম্যানের আত্মীয়রা জড়িত থাকায় এনিয়ে সরকার খুব বেকায়দায় পড়েছে। এসব থেকে সাধারণ মানুষের দৃষ্টিকে ভিন্নখাতে নিতেই সরকার এজেন্সির লোক দিয়ে সারাদেশে কথিত ছেলেধরা গুজব ছড়াচ্ছে।
উত্তর বাড্ডায় এক নারীকে পিটিয়ে হত্যার পর ওই এলাকার একাধিক লোকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রথমে যারা ওই মহিলাকে ছেলেধরা বলে গুজব ছড়িয়েছিল পরে আর তাদেরকে দেখা যায়নি। আসলে গুজব ছড়ানো লোকগুলো এই এলাকায় থাকে না। মনে হয় ওরা বাইরে থেকে এসে ঘটনা ঘটিয়েছে।
একই রকম বক্তব্য শুনা গেছে নারায়ণগঞ্জের ঘটনায়ও। যারা ছেলে ধরা বলে গুজব ছড়িয়েছিল সেই লোকগুলোকে এখন আর দেখা যায় না।
এদিকে, রাজনীতিক বিশ্লেষকরাও মনে করছেন, দেশে এখন আর কোনো ইস্যু নেই। বিরোধীদল তথা বিএনপি-জামায়াতকে কোনঠাসা করতে সরকার এই গেমের সূত্রপাত করেছে। এটা সরকারের একটি নতুন কৌশল।