অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
একটি তদন্তের ফলাফল প্রকাশ করার কয়েক ঘন্টার মাথায় বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশ থেকে আল জাজিরার ইংরেজি ওয়েবসাইটের একসেস বন্ধ করে দেয়। বাংলাদেশে তাদের সাইট বন্ধ করে দেয়া নিয়ে শুক্রবার সংবাদ প্রকাশ করেছে আলজাজিরা। অ্যানালাইসিস বিডির পাঠকদের জন্য সংবাদটি ভাষান্তর করে প্রকাশ করা হলো-
স্ত্রীর সাথে ব্যবসায়িক সম্পর্ককে কেন্দ্র করে তিনজন ব্যক্তির গুমের সাথে বাংলাদেশের সবচেয়ে সিনিয়র নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা ব্যক্তিত্বের সম্পৃক্ততা নিয়ে আল জাজিরায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশের কয়েক ঘন্টার মধ্যে বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশ থেকে আল জাজিরায় ইংরেজি ওয়েবসাইটে প্রবেশের সুযোগ বন্ধ করে দেয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং দেশের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই এর মহাপরিচালক তারিক আহমেদ সিদ্দিকীর ভূমিকার প্রতি আলোকপাত করে তৈরী করা প্রতিবেদনটি বাংলাদেশ সময় গত বুধবার বিকেলে প্রকাশিত হয়। সন্ধ্যায়, বাংলাদেশে বেশিরভাগ পাঠক ওয়েবসাইটটিতে প্রবেশ করতে পারেননি।
প্রতিবেদনটি আল জাজিরার তদন্ত ইউনিট দ্বারা তৈরী করা হয়েছিলো।
জবান নামের একটি স্থানীয় সংবাদ এবং আলোচনা সাইট যা প্রতিবেদনটির সারাংশ বাংলায় প্রকাশ করেছিলো, সেই সাইটটিতেও প্রবেশ করা যাচ্ছে না। (পরে অ্যানালাইসিস বিডিতেও বাংলায় অনুবাদকৃত সংবাদটি প্রকাশিত হয়। বাংলাদেশে অ্যানালাইসিস বিডির অ্যাকসেস অনেক আগে থেকেই বন্ধ করে রেখেছে সরকার। তবে ইনস্ট্যান্ট আর্টিক্যালের কারণে মোবাইলে ফেসবুক ব্যবহারকারীরা সাইটে প্রবেশ করতে পারছে।)
বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক কোন বিদেশী সংবাদমাধ্যমের ওয়েবসাইটে প্রবেশ নিষিদ্ধ করার নজির এটিই প্রথম নয়। ২০১৭ সালের নভেম্বরে, শিক্ষাবিদ মুবাশ্বার হাসানের গুমের পেছনে ডিজিএফআইয়ের ভূমিকা নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরী করার পর ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়্যার এর একসেসও বন্ধ করে দেয়া হয়েছিলো।
নতুন পদ্ধতি
অতীতে বাংলাদেশের নিরাপত্তা সংস্থাগুলি বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনকে (বিটিআরসি ) একটি নির্দেশনা পাঠাতো, যা পরবর্তীতে সব আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট গেটওয়েগুলিকে ইমেইল করার মাধ্যমে ওয়েবসাইটের একসেস বন্ধ করা হত।
তবে সাম্প্রতিক কয়েক মাসে টেলিযোগাযোগ বিভাগ (ডিওটি) এবং জাতীয় টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র (এনটিএমসি) একটি নতুন ব্যবস্থা চালু করেছে যার অধীনে নিরাপত্তা সংস্থাগুলি বিটিআরসির কোন ধরনের সম্পৃক্ততা ব্যতিরেকেই কেন্দ্রীয়ভাবে ওয়েবসাইট বন্ধ করে দিতে পারে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ সরকার সমালোচনার প্রতি অধিক সংবেদনশীল হয়ে উঠেছে।
মাহফুজ আক্তার কিরণ, যিনি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের মহিলা উইংকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এবং ফিফার বিশ্ব ফুটবল সংস্থা কাউন্সিলের সদস্য, প্রধানমন্ত্রী ফুটবলে পর্যাপ্ত আর্থিক সহায়তা দিতে ব্যর্থ বলে উল্লেখ করায় গত সপ্তাহে তাকেও গ্রেফতার করা হয় এবং তিন দিনের জন্য জেলে পাঠানো হয়।
ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচনের ঠিক আগে ‘জাল এবং ভিত্তিহীন সংবাদ’ প্রকাশ করার অভিযোগ এনে বাংলাদেশ সরকার ৫৮ টি স্থানীয় সংবাদ ওয়েবসাইটের একসেস বন্ধ করে দেয় , যার মধ্যে অনেকগুলো বিরোধীদের সমর্থন করেছিল।
যদিও দেশের মিডিয়া নিয়ন্ত্রনের বিষয়টি সরকার ধারাবাহিকভাবে অস্বীকার করে আসছে।
এই মাসের শুরুতে সম্প্রচারিত আল জাজিরার হেড টু হেড প্রোগ্রামে দেয়া একটি সাক্ষাতকারে প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী বলেন, ‘যারা বাংলাদেশের মিডিয়া সম্পর্কে জানেন, তারা একটা বিষয় জানেন। তা হচ্ছে এটা (বাংলাদেশি মিডিয়া) অবাধ এবং শক্তিশালী।’
একই অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশি হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম বলেন, শেখ হাসিনাকে সর্বদিক থেকে সমালোচনা করা হচ্ছে।
‘শেখ হাসিনার সমালোচনা করে এমন সংবাদপত্র রয়েছে। সংসদে তার সমালোচনা করা হচ্ছে। তাহলে কেন বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা থাকবে না?’
ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিষয়ক অধ্যাপক আলী রিয়াজ আল জাজিরাকে বলেন, ‘প্রবেশাধিকার বন্ধ করে দেয়া এই অভিযোগগুলোর জবাব দেওয়ার উপায় নয়।’
‘প্রচার মাধ্যম এবং সাইবারস্পেসের অ্যাক্সেসের উপর নিষেধাজ্ঞা গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের শাসন ব্যবস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছে। দেশে তথ্য সঞ্চালন এবং তথ্যের মুক্ত প্রবাহ ক্রমবর্ধমানভাবে সংকুচিত করা হচ্ছে। পদক্ষেপগুলি কেবলমাত্র গণতান্ত্রিক মনোভাবেরই বিপরীত নয়, অকেজোও বটে।’
আলজাজিরার প্রতিবেদনটির লিংক: Bangladesh blocks access to Al Jazeera news website
আরও পড়ুন: গুমে জড়িত প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা, সংবাদের পর বাংলাদেশে বন্ধ আলজাজিরা
আলজাজিরা থেকে ভাষান্তর করেছে অ্যানালাইসিস বিডি