অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
রংপুর-৫ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী জামায়াতে ইসলামীর গোলাম রব্বানীর মনোনয়নপত্র দ্রুত গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। রংপুরের রিটার্নিং কর্মকর্তাকে এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর আগে সরকারের উপর মহলের নির্দেশে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে ধানের শীষ প্রতীকের মনোনীত এই প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ করেননি রিটার্নিং কর্মকর্তা ও রংপুরের ডিসি এনামুল হাবিব।
সোমবার বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গোলাম রব্বানীর মনোনয়ন পত্র গ্রহণের আদেশ দেন। মনোনয়ন পত্র গ্রহণের আদেশকে আওয়ামী লীগের চক্রান্তের বিরুদ্ধে ধানের শীষ প্রার্থীর প্রাথমিক জয় হিসেবে দেখছেন এলাকার বিএনপি জামায়াতের নেতাকর্মীরা।
আদালতে গোলাম রব্বানীর পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট এ জে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার ইমরান এ সিদ্দিক ও অ্যাডভোকেট শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেসুর রহমান।
বিএনপি মনোনীত প্রার্থী জামায়াত নেতা গোলাম রব্বানী জানান, গত ২৮ নভেম্বর বেলা ২টা ৫০ মিনিটে আমার আইনজীবী বায়জিদ ওসমানি প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্রসহ প্রার্থীর পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা দিতে রিটার্নিং কর্মকর্তার নির্ধারিত কার্যালয়ে যান। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষায় থাকার পরও তাকে রিটার্নিং কর্মকর্তার কক্ষে ঢুকতে দেয়া হয়নি। বিভিন্ন বিষয়ে তাকে হয়রানি শেষে মনোনয়নপত্র গ্রহণে অপারগতা জানান রিটার্নিং কর্মকর্তা।
জানা যায়, গত বুধবার মনোনয়ন দাখিলের শেষ দিনে ৫ ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রেখে রিটার্নিং কর্মকর্তা মনোনয়ন গ্রহণে তার অপারগতার কথা জানান। মনোনয়নপত্রটি জমা দিতে গিয়েছিলেন গোলাম রব্বানীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট বায়েজিদ ওসমানী। জনাব ওসমানী আরো কয়েকজন জুনিয়র আইনজীবী নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা এনামুল হাবিবের কাছে যান বেলা ২টায়। সেখানে গিয়ে তারা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দিতে চাইলে তিনি তা গ্রহণ করেননি। এ সময় তারা দরজার পাশেই দাঁড়িয়ে থাকেন। আইনজীবী ওসমানী জানান, ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যেই রংপুর জেলা পুলিশের বি সার্কেলসহ মেট্রোপলিটন পুলিশের কর্মকর্তা, ডিএসবি ও ডিবির লোকজন তাকে ঘিরে জেরা করতে থাকেন। কেন প্রার্থী এলেন না, প্রস্তাবক সমর্থনকারীরা কেন এলেন না, তারা গোলাম রব্বানীর কাগজপত্র পরীক্ষা করতে থাকেন।
আইনজীবী ওসমানী জানান, তিনি পুলিশ কর্মকর্তাদের বলেন, অধ্যাপক গোলাম রব্বানী উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই সাড়ে চার বছরে বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় জেলে ছিলেন। সর্বশেষ মামলায় জামিন নিয়ে বের হয়ে আসেন। এরই মধ্যে তার বিরুদ্ধে আবারো একটি গায়েবি মামলা দেয়া হয়। ওই মামলায়ও তিনি গত বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট থেকে জামিন নেন। জামিন আগামী ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত বহাল আছে। নির্বাচন কমিশনের আইন অনুযায়ী প্রার্থী, প্রস্তাবক, সমর্থক ছাড়াও প্রার্থীর পক্ষে অন্য কেউ মনোনয়নপত্র দাখিল করতে পারেন। এ বিষয়ে নথিপত্র বি সার্কেলকে দেয়ার পর তিনি বলেন, মনোনয়ন দাখিল করতে কোনো অসুবিধা নেই।
আইনজীবী ওসমানী জানান, পুলিশ কর্মকর্তা এ কথা বলার পর তিনি মনোনয়নপত্র দাখিল করতে গেলে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা আবারো তাকে রিটার্নিং কর্মকর্তার সাথে কথা বলতে বলেন। অনেক অনুরোধের পর তিনি রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে যাওয়ার অনুমতি পান। সেখানে গিয়ে তিনি আইনের ব্যাখ্যা দিয়ে মনোনয়নপত্রটি নেয়ার অনুরোধ জানান। এ সময় সেখানে আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, এডিসি, মেট্রোপলিটন কোতোয়ালির এসি, কোতোয়ালি থানার ওসিসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এরই মধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাকে ডিসির ‘ছোট রুমে’ গিয়ে ঢাকায় কথা বলতে বলেন।
তিনি ওই ছোট রুমে যাওয়ার পর রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ সব কর্মকর্তা সেখানে যান। অনেকক্ষণ পর ফিরে এসে রিটার্নিং কর্মকর্তা ওই আইনজীবীকে বলেন, আমরা তার মনোনয়ন গ্রহণ করতে পারব না। ওপর থেকে ‘না’ বলা হয়েছে। আইনজীবী ওসমানী বলেন, আপনি এখন নির্বাচন কমিশনের রিটার্নিং কর্মকর্তা। আপনি আইন অনুযায়ী এটা নিতে বাধ্য। কেন নেবেন না, সেটাও বলতে বাধ্য; কিন্তু তিনি কোনো কারণ ব্যাখ্যা না দিয়েই মনোনয়ন ফরম নিতে অপারগতা প্রকাশ করে আইনজীবী ওসমানীকে বিদায় দেন।
পরে ওই ওসমানী বলেন, আসন্ন নির্বাচন যে একটি পাতানো নির্বাচন হবে, সেটাই প্রমাণ করলেন এই রিটার্নিং কর্মকর্তা। তিনি সরকারের ইচ্ছারই প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। তিনি মনোনয়ন জমা না নিয়ে আইন ভঙ্গ করেছেন। ওসমানী বলেন, এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এইচ এম আশিকুর রহমান। অধ্যাপক গোলাম রব্বানীর পক্ষে মাঠে জোয়ার দেখে সরকার ভয়ে ভীত হয়ে গোলাম রব্বানীর মনোনয়ন গ্রহণ না করতে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দেয়ার কারণেই তার মনোনয়ন গ্রহণ করা হয়নি। এর আগে মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে অধ্যাপক গোলাম রব্বানীর পক্ষে রাকিবুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি মনোনয়নপত্র জমা দিতে গেলে তাকে পুরনো মামলায় গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠায় পুলিশ।
সোমবার বায়জিদ ওসমানি জানান, রিটার্নিং কর্মকর্তা মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করায় প্রতিকার চেয়ে গত শনিবার নির্বাচন কমিশনে আবেদন করি। নির্বাচন কমিশন থেকে কোন সুরাহা না পেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করি। রিটের শুনানি নিয়ে আজ আদালত দ্রুত মনোনয়ন পত্র গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিকে আদালতের রায়ে ধানের শীষের প্রার্থী জামায়াত নেতা গোলাম রব্বানীর মনোনয়ন গ্রহণের নির্দেশ দেয়ার বিএনপি জামায়াতের নেতাকর্মীদের মধ্যে চাঙ্গা ভাব লক্ষ করা গেছে। প্রার্থীর পক্ষে মাঠে ব্যাপক মাত্রায় জনসমর্থন থাকায় ধানের শীষের জয় সময়ের ব্যাপার বলেই মনে করেন স্থানীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ।