অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৪, ১৩,১৪ ও ১৬ নম্বর ওয়ার্ড (মিরপুর-কাফরুল) নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৫ আসন। গুরুত্বপূর্ণ এই আসনটি পূর্বে ঢাকা-১১ থাকা অবস্থায় কোনো রাজনৈতিক দলই একক আধিপত্য ধরে রাখতে পারেনি। ঢাকার এ আসনে এবার আওয়ামী লীগের কোন্দল সবচেয়ে বেশি। আর বিএনপি-জামায়াতসহ ২৩ দল এ আসনটি উদ্ধারে সবচেয়ে বেশি ঐক্যবদ্ধ।
ঢাকা-১৫ আসনে আওয়ামী লীগের পক্ষে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন বর্তমান এমপি কামাল আহমেদ মজুমদার, ২৩ দলীয় জোটের পক্ষে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ডা: শফিকুর রহমান। তবে বার্ধক্য, সাংবাদিকের সাথে দুর্ব্যবহার, মনিপুর স্কুলে ভর্তিবাণিজ্য, নির্বাচনী এলাকায় নানা ধরনের অপকর্ম বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণে কামাল আহমেদ মজুমদারের বিকল্প প্রার্থী চাচ্ছিলেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। ফলে এবারের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য সম্ভাব্য কয়েকজন প্রার্থী কাজ করে আসছিলেন। এরা হলেন- মহিলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম কৃক, যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি মাঈনুল হোসেন খান নিখিল, স্বেচ্ছাসেবক লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ দফতর সম্পাদক সাইফুল ইসলাম। কিন্তু এদের মধ্যে কেউ মনোনয়ন পাননি। ফলে স্থানীয় নেতাদের মধ্যে চরম কোন্দল সৃষ্টি হয়েছে। কামাল মজুমদারের বয়স বৃদ্ধির কারণে সম্ভাব প্রার্থীদের কেউ তাকে মানতে পারছে না।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মী বলেন, এ আসনের বাসিন্দা মাহমুদা বেগম কৃক ১৮ বছর কমিশনার ছিলেন। কয়েক বছর ধরে এমপি মনোনয়নের জন্য তৎপরতা চালাচ্ছেন। কিন্তু এবারও মাহমুদা বেগম কৃক মনোনয়ন না পাওয়ায় তার সমর্থিত নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। একইভাবে আওয়ামী লীগের আরেক শক্তিশালী প্রার্থী ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সভাপতি মাইনুল হোসেন খান নিখিলও দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। কিন্তু মনোনয়ন না পাওয়ায় এবার তিনি প্রকাশ্যে বিরোধীতায় নেমেছেন।
এদিকে অবকাঠামো উন্নয়ন ও নাগরিক সুবিধা নিশ্চিতে দীর্ঘদিন ধরে নিরবে কাজ করে আসছেন জামায়াতে ইসলামী। এই আসনে পরিকল্পিতভাবে জামায়াত বহু চিকিৎসা, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। এছাড়া জামায়াতের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শহীদ মীর কাসেম আলী এই এলাকার সম্ভাব প্রার্থী ছিলেন। তিনি বহু সমাজ সেবামূলক কাজ করেছেন মিরপুর-কাফরুলের এই এলাকায়। এছাড়া দলটির ‘জাতীয় পার্লামেন্টারি বোর্ড’ অনেক আগেই তাকে ওই আসনে নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন দিয়েছে। ফলে দীর্ঘ দিন থেকেই ডা: শফিকুর রহমান মিরপুর-কাফরুল এলাকায় সমাজসেবামূলক কাজ করে যাচ্ছেন।
স্থানীয় বিএনপি-জামায়াতের নেতারা বলছেন, দল যাকে মনোনয়ন দিবে তার জন্যই কাজ করবেন তারা। এই আসনে বিএনপি-জামায়াতসহ ২৩ দলীয় জোটের নেতাদের অনেক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। ফলে বিজয় নিশ্চিত করতে আগে থেকে মাঠ গোছানোই আছে তাদের।
জানতে চাইলে কামাল আহমেদ মজুমদার গণমাধ্যমকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দলের সঙ্গে আছি। এলাকার অবকাঠামো এবং নাগরিক সুবিধা নিশ্চিতে নিরলস পরিশ্রম করছি। আবার নির্বাচিত হলে এ আসনের সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করব।
ডা: শফিকুর রহমান জানিয়েছেন, জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হলে এলাকার সমস্যা নিরসনের পাশাপাশি ব্যাপক উন্নয়ন ও একটি আলোকিত সমাজ প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখবেন তিনি। ডা: শফিকুর বলেন, মিরপুর-কাফরুল এলাকায় অসংখ্য কলকারখানা, গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কুটির শিল্প, গার্মেন্টস শিল্পসহ অপার সম্ভাবনা রয়েছে। ইতঃপূর্বে এ এলাকার উন্নয়ন কর্মকা-ে সফল উদ্যোক্তা, বিশিষ্ট সমাজসেবক ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলী অনেক অবদান রেখেছেন। এ সম্ভাবনাগুলো কাজে লাগাতে পারলে এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন ও অগ্রগতি সম্ভব। তিনি বলেন, এলাকাটিতে মাদক, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য চলছে। এ জন্য এলাকার টেকসই উন্নয়নে একজন সৎ, যোগ্য ও নিষ্ঠাবান জনপ্রতিনিধি প্রয়োজন। জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হলে এলাকার সার্বিক উন্নয়ন করা হবে জানিয়ে ডা: শফিকুর রহমান বলেন, নাগরিক হিসেবে ধর্মীয় পার্থক্য কারো অধিকার খর্ব করে না, একই সাথে কোনো ধর্মের অনুসারীদের হস্তক্ষেপ কিংবা কোনো জোর-জুলুম করার অধিকার কোনো ধর্ম দেয়নি। এ জন্য সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীর অধিকার নিশ্চিত করতে আমরা বদ্ধপরিকর।
কাফরুল থানা বিএনপির সভাপতি আক্তার হোসেন জিল্লু বলেন, এখানে যদি সুষ্ঠু একটা নির্বাচন দেয়া হয় তাহলে ২৩ দল ও ঐক্যফ্রন্টের সমর্থিত প্রার্থী অনেক ভোটে জয়ী হবে। এখানে দলের পক্ষ থেকে যাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে তার পক্ষে কাজ করব আমরা।
ঢাকা-১৫ আসনে মোট ভোটার তিন লাখ ৪০ হাজার ৫২৮ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭৫ হাজার ১০৪ জন, নারী ভোটার এক লাখ ৬৫ হাজার ৪২৪ জন। সর্বশেষ নির্বাচনে এই আসনে ভোট কেন্দ্র ছিল ১২৯টি।
নব্বইয়ের পট পরিবর্তনের পর প্রথম ১৯৯১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ড. কামাল হোসেনকে হারিয়ে জয়ী হন বিএনপির হারুন রশিদ মোল্লা। ১৯৯৬ সালে বিএনপির এখলাস উদ্দিন মোল্লাকে হারিয়ে এমপি হন আওয়ামী লীগের কামাল মজুমদার। ২০০১ সালে এমপি হন বিএনপির এসএ খালেক। আসন পুনর্বিন্যাসের পর ২০০৮ সালে ঢাকা-১৫ থেকে বিএনপির উইং কমান্ডার (অব.) হামিদুল্লাহ খানকে হারান কামাল মজুমদার। সবশেষ ২০১৪ সালের ভোটে বিএনপি অংশ না নিলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এখলাস মোল্লা। কামাল মজুমদারের কাছে তিনি ২৭ হাজার ভোটে হেরে যান।