অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
সম্প্রতি সরকার প্রজ্ঞাপন দিয়ে কওমি মাদ্রাসাগুলোর সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মার্স্টাস ডিগ্রি সমমানের স্বীকৃতি দেয়। এই স্বীকৃতির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনা দিতে শুকরানা মাহফিল করার ঘোষণা দেয় দেশের কওমিপন্থী ৬টি বোর্ড নিয়ে গঠিত হাইয়াতুল উলইয়া। রোববার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হচ্ছে সেই মাহফিল। মাহফিলে হেফাজত আমির আল্লামা আহমদ শফী সভাপতিত্ব করবেন বলে জানিয়েছেন শোলাকিয়ার ইমাম মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ।
গত মাসে হাইয়াতুল উলইয়ার পক্ষ থেকে এই মাহফিল করার ঘোষণা করা হলে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের নেতাদের মধ্যে বিভাজন ও টানাপোড়েন শুরু হয়। এর জের ধরে একজন নেতা পদত্যাগও করেন।
সবার সাথে আলোচনা না করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত, ‘আওয়ামী লীগ হয়ে গেলেও আমার কোনো আপত্তি নেই’ হেফাজত আমীরের এমন মন্তব্য এবং হেফাজতে আল্লামা শফীর পরিবারের একচেটিয়া দাপটের কারণে এ টানাপড়েন শুরু হয়েছে।
হেফাজতে মধ্যে থাকা বিভিন্ন ইসলামী দলগুলোর নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ জানান, হেফাজত ১৩ দফা দাবি আদায়ে সম্পূর্ণ অরাজনৈতিকভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। এখন অনেকেই রাজনৈতিক দলের তোষামোদি শুরু করেছে। কেউ কেউ হেফাজতের নাম বিক্রি করে এমপি হওয়ার খায়েশ প্রকাশ করেছেন। কেউ নির্বাচন করার জন্য মাঠে নেমেছেন। অনেকেই গোপনে আওয়ামী লীগের সমর্থন নেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। এ অবস্থায় অরাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হেফাজতে ইসলামের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সংগঠনের ভেতরেই।
অভিযোগ রয়েছে, হাইয়াতুল উলইয়া ও হেফাজতের হাতেগোনা কয়েকজন নেতা সংগঠনের অন্য শীর্ষ আলেমদের মতামতকে অবজ্ঞা করে একের পর এক নিজেদের মতে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।
এতে অসন্তোষ প্রকাশ করে ইতিমধ্যে হেফাজতের সিনিয়র নায়েবে আমির ও বেফাকের সহসভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী।
তিনি চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার নাজিরহাট পৌরসভার দৌলতপুরে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া আজিজুল উলুম বাবুনগর মাদ্রাসার পরিচালক।
পদত্যাগ করার কারণ জানতে চাইলে আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, ঈমান-আকিদা রক্ষার আন্দোলন তথা ১৩ দফা দাবি নিয়ে অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতের জন্ম হয়েছিল। তবে এখন হেফাজতের শীর্ষ পদে নেতৃত্বে থাকা কয়েকজন আলেম মূলনীতি থেকে সরে এসেছেন। এছাড়া কোনো প্রকার আলাপ-আলোচনা ছাড়াই তারা ইচ্ছামাফিক সংগঠনটি পরিচালনা করছেন। এ কারণে পদত্যাগ করেছি।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শুকরিয়া মাহফিলের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শুকরিয়া মাহফিল নিয়ে আমাদের সঙ্গে কোনো প্রকার আলোচনা হয়নি। এ বিষয়ে আমি তেমন কিছু জানি না। আমি ওই মাহফিলে যাব না।
এদিকে হেফাজতে ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা নায়েবে আমির ও বেফাকের সঙ্গে সম্পৃক্ত লালখানবাজার মাদ্রাসার পরিচালক মুফতি ইজহার ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিগত চারদলীয় জোট সরকারের সময় আমি নিজেই কওমি সনদের স্বীকৃতির এক উদ্যোক্তা ছিলাম। আমি হেফাজত আমির আল্লামা শাহ্ আহমদ শফীকে নিয়ে খালেদা জিয়ার কাছে গিয়েছিলাম। সংসদে বিল আকারে পাস না হওয়ায় কওমি সনদের স্বীকৃতি থমকে যায়। আমি কওমি সনদের স্বীকৃতির পক্ষে। তবে স্বীকৃতির পরে এ নিয়ে বাড়াবাড়ি আমার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।
এদিকে জানা গেছে রোববার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শুকরিয়া মাহফিলে জনসমাগম বাড়াতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আওতাধীন দেশের সকল মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন ও মাদ্রাসা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাহফিলে আসা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দেয়া হবে বিধায় সমাবেশগামী মানুষের নির্ভিঘ্ন যাতায়াত নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যে সরকারের তরফ থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সমাবেশকে কেন্দ্র করে রোববার রাজধানীতে যান চলাচলও সীমিত করা হয়েছে। এমনকি নজিরবিহীনভাবে রোববারের জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষাও পেছানো হয়েছে। হঠাৎ করে পরীক্ষা পেছানোয় এ নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ঈমান আকিদা রক্ষার ১৩ দফা আদায়ের জন্য যেই হেফাজত ৫ মে শাপলা চত্তরে রক্ত দিয়েছিলো, এই হেফাজত সেই হেফাজত নয়। ইসলামের পক্ষে নতুন উদয় হওয়া এই শক্তিকে করায়ত্বে রাখতে সরকার তাদেরকে নানা ধরণের টোপ দিয়েছে। তারা সেই টোপে ধরা দিয়েছে। কওমী সনদ প্রদান ও জমি প্রদানের মাধ্যমে সরকার উদীয়মান এই শক্তিকে ধ্বংস করতে সমর্থ হয়েছে। এটা আওয়ামী লীগ সরকারের বড় একটি সফলতা। সেই সফলতার সংবর্ধনাই রোববারের মাহফিলে পেতে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা।