অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
গত ১৮ অক্টোবর জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত একটি আলোচনা সভায় ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন বলেছিলেন, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট দেখে সরকার ভয় পেতে শুরু করেছে। সরকার জানে এবার তারা কাজটা সহজে করতে পারবে না। তাই যাওয়ার আগে সরকার একটা মরণ কামড় দেবে।’
গত কয়েক দিনের রাজনৈতিক পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে ইতিমধ্যে সরকারের মরণ কামড় শুরু হয়ে গেছে। আর ব্যারিস্টার মইনুলই হয়েছেন সরকারের প্রথম কামড়ের শিকার। বক্তব্যটা দেয়ার ৪ দিনের মাথায়ই সোমবার রাতে কথিত মানহানির মামলায় সরকার ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে গ্রেফতার করেছে। মঙ্গলবার আদালতে তোলা হলে জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
এখানে একটি লক্ষণীয় বিষয় হলো- ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন একজন বিশিষ্ট আইনজীবী হিসেবেই শুধু পরিচিত নন। তার আরও একাধিক পরিচয় রয়েছে। তিনি বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট সহচর ও দৈনিক ইত্তেফাকের প্রতিষ্ঠাতা মানিক মিয়ার ছেলে। ব্যারিস্টার মইনুল নিজেও একটি ইংরেজি পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক। এছাড়া বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একজন উপদেষ্টাও ছিলেন তিনি। তার মতো একজন লোককে কারাগারের একেবারে সাধারণ বন্দিদের সঙ্গে মেঝেতে রাখা হয়েছে। এটা নিয়ে বেশ সমালোচনা হচ্ছে। বিশিষ্টজনসহ অনেকেই মনে করছেন রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকেই প্রধানমন্ত্রী এটা করছেন।
এদিকে, মঙ্গলবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আরেক নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মালিকানাধীন সাভারে গণস্বাস্থ্য হাসপাতাল ও ফার্মাসিউটিক্যালে অভিযান চালিয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে সিলগালা করেছে পুলিশ। হঠাৎ জাফরুল্লাহ চৌধুরীর প্রতিষ্ঠানে অভিযান কেন? আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যে অজুহাত দেখিয়ে অভিযান চালিয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে সিলগালা করেছে সেই সমস্যাতো আগেও ছিল। এতদিন অভিযান হয়নি কেন? এনিয়ে নানান আলোচনা সমালোচনা চলছে। সচেতন মানুষ মনে করছেন, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর প্রতিষ্ঠানে অভিযানও রাজনৈতিক কারণে। কারণ, জাফরুল্লাহ এখন সরকার বিরোধী জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা। তাকে চাপে রাখতেই সরকার এসব করছে।
তারপর, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ঘোষিত কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সিলেট, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে ব্যাপক ধরপাকড় শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বলা যায় এই তিন বিভাগে এখন গণগ্রেফতার চলছে। আর বুধবার সিলেটে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে সমাবেশ করার অনুমতি দিলেও সমাবেশ সফল করতে বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে কোনো কার্যক্রম করতে দিচ্ছে না পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতির বাসায় অভিযান চালিয়ে ২৫ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
এছাড়া, ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদেরকে গ্রেফতারেও অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। ইতিমধ্যে লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরানকে গ্রেফতারে তার বাসায় দুই দফা অভিযান চালানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সরকারের কর্মকাণ্ড দেখে মনে হচ্ছে, ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের সেদিনের বক্তব্যই শতভাগ সত্য প্রমাণিত হচ্ছে। শেষ মুহূর্তে এসে সরকার মরণ কামড়ই দিচ্ছে।
তবে, রাজনীতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মরণ কামড় দিয়েও এবার সরকার পার পাবে না। সরকারের দমন-পীড়ন অব্যাহত থাকলে একটা পর্যায়ে এসে জনগণ মাঠে নামতে বাধ্য হবে। ৫ জানুয়ারির মতো এবার আর একতরফা নির্বাচন করার সুযোগ আওয়ামী লীগ পাবে না।