অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে তিনি কিছুই করতে পারবেন না। হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়েছে, মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণ থাকবে। এ রায়ের বিরুদ্ধে গিয়ে কীভাবে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করবেন? এটা করলে আদালত অবমাননা হবে। কারো পক্ষেই এটা করা সম্ভব হবে না। মুক্তিযোদ্ধা বাতিল করে তিনি আদালত অবমাননা করতে পারবেন না।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে এসব কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যদিও এর আগে তিনি সংসদে দাঁড়িয়েই ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেছিলেন এখন থেকে আর কোনো কোটাই থাকবে না।
প্রধানমন্ত্রীর এই উল্টে যাওয়া নিয়ে এখন রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও চলছে সমালোচনা। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, আমাদের শিক্ষিত প্রধানমন্ত্রীর কি হাইকোর্টের রায়ের কথা জানা ছিল না?
প্রধানমন্ত্রীর যে কথায় মানুষ বিস্মিত হয়েছেন সেটা হলো- হঠাৎ আদালতের প্রতি তার গভীর শ্রদ্ধা দেখে। মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে তিনি কোনোভাবেই আদালত অবমাননা করতে পারবেন না।
খোঁজ নিলে দেখা যায়, স্বাধীনতার পর এদেশে আওয়ামী লীগ নেতাদের মতো অন্য কেউ এত আদালত অবমাননা করেনি। যখনই আদালতের কোনো রায় আওয়ামী লীগের স্বার্থের বিরুদ্ধে গিয়েছে তখনই তারা সর্বোচ্চ আদালত ও বিচারপতিদের বিরুদ্ধে মিছিল-সমাবেশ করেছে। বিচাপতির কক্ষের দরজায় লাথি দিয়েছে। এমনকি মহান সংসদে দাঁড়িয়েও বিচাপতিদেরকে অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করেছে।
যার সর্বশেষ দৃষ্টান্ত হলো সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় ও বিচারপতি এসকে সিনহাকে দেশ ত্যাগে বাধ্য করার ঘটনা।
বিশিষ্টজনরা বলছেন, একটি রায় ও তার পর্যবেক্ষণ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগ নেতারা কী না করেছে? একজন প্রধান বিচারপতিকে অসুস্থ বানিয়ে দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য করেছে। এটা কি আদালত অবমাননা নয়?
কিন্তু, যে দাবির প্রতি এদেশের সর্বস্তরের মানুষের সমর্থন রয়েছে। যে কোটার বৈষম্যের শিকার এদেশের লাখ লাখ শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীরা যে দাবিতে আন্দোলন করছে তার প্রতি এদেশের ৯৪ শতাংশ মানুষের সমর্থন রয়েছে বলে বাংলাদেশ অধ্যয়ন কেন্দ্র এক জরিপে জানিয়েছে। অথচ প্রধানমন্ত্রী বলছেন, এ বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করলে নাকি আদালত অবমাননা হবে।
আদালতের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর হঠাৎ এমন শ্রদ্ধা দেখে অনেকেই বলছেন, নিজেদের স্বার্থে আঘাত লাগলেই আদালত অবমননার কথা ভুলে যাওয়া। আর যেখানে এদেশের মানুষ ও দেশের স্বার্থ জড়িত থাকে, সেখানে আদালত অবমাননা হওয়ার কথা বলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা। এটাই হলো আওয়ামী লীগের চরিত্র।