অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
গত এপ্রিলে কোটা সংস্কার আন্দোলন যখন তুঙ্গে। দেশজুড়ে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা যখন রাজপথে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলেছিলো। ঠিক তখনই সংসদে প্রধানমন্ত্রী এক বক্তব্যে দেশে কোনো কোটা পদ্ধতিই থাকবে না বলে বক্তব্য দেন। গত ১২ এপ্রিলের সেই বক্তব্যের পুরো তিনমাস পর আজ ১২ জুলাই প্রধানমন্ত্রী সেই সংসদেই বললেন মুক্তিযোদ্ধাদের ৩০ শতাংশ কোটা থাকবে।
১২ এপ্রিল সংসদে দেয়া সেই বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, যখন কেউই কোটা পদ্ধতি চায় না, তখন এটা রাখার আর কোনো দরকার নেই। কোটা পদ্ধতি বাতিল, এটা আমার পরিষ্কার কথা। তিনি আরো বলেছিলেন, যাতে কারও কোনো সমস্যা না হয়, বার বার যেন রাস্তা বন্ধ করে আন্দোলন না হয়, বার বার যাতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ না হয়, তা বন্ধ করতে আমি এই কোটা পদ্ধতি বাতিলই করে দিতে চাই। এখন থেকে মেধার ভিত্তিতেই সব নিয়োগ হবে।
সেদিনের বক্তব্যের শুরুতে অবশ্য প্রধানমন্ত্রী আন্দোলনকারীদের তীব্র সমালোচনাও করেন। সামালোচনার এক পর্যায়েই রাগান্বিত অবস্থায় কোটা পদ্ধতি থাকবে না বলে বক্তব্য দেন তিনি। তখন প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্য নিয়ে অনেকের মনেই সন্দেহের তৈরি হয়েছিলো। এমনকি শিক্ষার্থীরাও দ্বিধান্বিত ছিলেন। কারন তারা আন্দোলন করেছেন কোটা সংস্কারের জন্য, পুরোপুরি বাতিলের জন্য নয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেছেন পুরো কোটা পদ্ধতিই বাতিল। প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যকে তখন অনেকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমানোর কৌশল হিসেবে দেখেছিলেন। যা পরবর্তীতে সত্য হিসেবেই প্রমাণীত হয়েছে।
প্রজ্ঞাপন জারি নিয়ে নয়ছয়সহ সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে আগে থেকেই বুঝা গিয়েছিলো যে সরকার কখনোই কোটা পদ্ধতি বাতিল করবে না। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পরও মন্ত্রী এমপিরাও বিভিন্ন সময় তাদের বক্তব্যে কোটা পদ্ধতি থাকবে বলে বক্তব্য দিয়েছেন। আর আজ স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীই তার আগের বক্তব্যের পুরো বিপরীত বক্তব্য দিয়ে বললেন, মুক্তিযোদ্ধাদের ৩০ শতাংশ কোটা কোনোভাবেই বাতিল করা যাবে না।
আদালতের রায়ের কথা বলে প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা কোটা সম্পর্কে এমন বক্তব্য দিলেও এমনটা যে হবে সেটা প্রধানমন্ত্রী আগে থেকেই জানতেন। তিন মাস আগের বক্তব্যের সময়ই অনেকে ধারণা করেছিলো আদালতের ভরসাতেই প্রধানমন্ত্রী কোটা পদ্ধতি বাতিল বলে বক্তব্য দিয়েছিলেন। কারন প্রধানমন্ত্রী নিজেও জানতেন আদালতের কারণে কোটা পদ্ধতি বাতিল করা সম্ভব হবে না। এরপরও এমন বক্তব্য দিয়েছেন মূলত আন্দোলনকারীদের সাময়িক বুঝ দিয়ে রাজপথ থেকে সরানোর উদ্দেশ্যেই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদ আজ তার বক্তব্যে বলেছেন, আদালতের রায় অমান্য করে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাদ দোয়া সম্ভব নয়। তিনি বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে উচ্ছৃঙ্খলতাকারীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে।
তিনি আন্দোলনকারীদের কটাক্ষ করে বলেন, কোটা নিয়ে আন্দোলন। এটা কী আন্দোলন নাকি। ঠিক তারা যে কী চায়, বারবার জিজ্ঞাসা করা হয়েছে, সেটা কিন্তু সঠিকভাবে বলতে পারে না। আজকে আন্দোলন তারা করছে খুব ভালো কথা। বিরোধীদলীয় নেতা বলেছেন, ছেলেপুলে আন্দোলন করতেই পারে। কিন্তু ভিসির বাড়িতে আক্রমণ করে সেখানে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া, গাড়ি আগুন দিয়ে পোড়ানো, বাড়ি ভাঙচুর করা, বেডরুম পর্যন্ত পৌঁছে ভাঙচুর এবং লুটপাট করা, স্টিলের আলমারি ভেঙে গহনা, টাকাপয়সা সবকিছু লুটপাট করেছে।
যদিও ভিসির বাড়িতে হামলায় ছাত্রলীগ জড়িত বলে বেশ কিছু পত্রিকায় প্রমাণসহ সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। আন্দোলনকারীদের উপর দোষা চাপানোর জন্যই যে ভিসির বাড়িতে ছাত্রলীগ দিয়ে এমন তাণ্ডব চালানো হয়েছে সেটা এখন দিনের আলোর মতই পরিস্কার।
অন্যদিকে ‘আন্দোলনকারীরা কী চায়, জিজ্ঞেস করা হলেও তারা বলতে পারেনি’ প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যও নাকচ করে দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। তারা বলছেন আন্দোলনের শুরু থেকেই তাদের দাবি স্পষ্ট। তারা কী চায় সেটা তাদের দাবিগুলো কী কী সেগুলো সবসময়ই পেশ করা হয়েছে, পত্রিকাতেও প্রকাশিত হয়েছে। এমনকি সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীলদের সাথে আন্দোলনকারীদের বৈঠকেও সেটা পেশ করা হয়েছে। এরপরেও প্রধানমন্ত্রীর এমন অসত্য বক্তব্য দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন আন্দোলনকারীরা।